Published : 15 Sep 2021, 07:09 PM
এরকমই এক সমস্যার মুখে পড়েছিলেন বিবিসি সাংবাদিক ম্যারি-অ্যান রাসন। পরে এ থেকে নিস্তারের গোটা কয়েক পথ খুঁজে বের করেছেন তিনি, সবার জন্য তা বলেও দিয়েছেন। চলুন তার বয়ানেই জেনে নেই সে সম্পর্কে –
সবসময়ই ভেবেছি আমার ব্যক্তিগত ডেটার সুরক্ষা আমি ভালোভাবেই করতে পারি। কিন্তু ভুল ভেবেছি। দুটি এক্সটার্নাল হার্ড ডিস্ক ড্রাইভে আমার ব্যক্তিগত ফাইল রেখেছিলাম। জুলাইয়ে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি ড্রাইভই নষ্ট হয়ে যায়।
উইন্ডোজ ১০ আমাকে জানায়, একটি ড্রাইভ ঠিকমতো কাজ করছে না। ঠিক করে দেওয়ার প্রস্তাবও দিচ্ছিল বারবার, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সন্দেহজনক ক্লিক শব্দ ছাড়া বাড়তি কিছু আর বের করে দিতে পারেনি কম্পিউটার।
গোটা বিষয়টি – ভোক্তা হিসেবে – আমাকে ভাবিয়ে তোলে, আসলে আপনার ডেটা ব্যাকআপ করার সঠিক রাস্তাটি কী, এবং কোনো কারণে সব ব্যর্থ হলে নিস্তারের রাস্তাই বা কোনটি?
এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভ হলো বহনযোগ্য সংরক্ষণ ডিভাইস যা পিসি’র সঙ্গে যুক্ত করা যায়। এরকম দুই ধরনের আছে – হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (এইচডিডি) যেটি ঘূর্ণায়মান চৌম্বকীয় ডিস্ক ব্যবহার করে ডেটা সংরক্ষণ করে, এবং নতুন প্রযুক্তির সলিড স্টেট ড্রাইভ (এসএসডি) যা চিপ-নির্ভর ফ্ল্যাশ সংরক্ষণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
আমি ২০১৫ সালে এক টেরাবাইট ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল এইচডিডি ড্রাইভ ব্যবহার শুরু করি। এর আগে আমার ল্যাপটপে ও রাইটএবল ডিভিডি-তে ডেটা রাখতাম। কোনো কারণে আমার কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে, নতুন কিনে নিতাম, পুরোনো ল্যাপটপ থেকে ডেটা উদ্ধার করে তা সরাসরি নতুন পিসিতে স্থানান্তর করে নিতাম।
কিন্তু এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার শুরু করার পর এটির ব্যবহার এতোটাই সহজ ছিলো যে, আমি প্রযুক্তিটির উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে শুরু করি। আমি যখন দ্বিতীয় আরেকটি ড্রাইভ নেই, তখন মনে হয়েছিল আমার সমাধান নিয়ে আর কোনো সন্দেহ-ই থাকছে না।
কয়েক বছর আগে অনেকটাই স্বল্প জায়গার কিন্তু দ্রুতগতির এসএসডি সম্বলিত নতুন ল্যাপটপ যখন কিনি, আমি হতভম্ব হইনি – হার্ড ড্রাইভে অধিকাংশ ফাইল রাখা শুরু করি, সবসময় ব্যবহার করি এরকম কিছু ফাইল শুধু ল্যাপটপে রেখে দেই।
ফলে হার্ড ড্রাইভ দুটি নষ্ট হওয়ার পর হতবাক হয়ে যাই আমি। ইন্টারনেটে ছুটে যাই, কিন্তু অনলাইনের ‘হাউ-টু সফটওয়্যার টিউটোরিয়াল’ কোনো কাজে আসেনি।
ডেটা রিকভারি সেবা গুগল করা শুরু করি এবং লন্ডন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানকে ফোন দেই।
এক প্রকৌশলী আমাকে তাৎক্ষণিকভাবে উইন্ডোজ যে হার্ড ড্রাইভ কাজ করছে না বলে জানিয়েছে, তাতে প্রবেশের চেষ্টা বন্ধ করার পরামর্শ দেন। তিনি জানান, ড্রাইভটি লজিক ব্যর্থতার কবলে পড়েছে, ঠিক করতে আড়াইশো পাউন্ড লাগবে বলেও জানান। সতর্ক করে দেন, ড্রাইভে প্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রাখলে আমি পুরোপুরিভাবে ডেটা খোয়াতে পারি।
ছবি: স্যামসাং
অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানই সস্তা কোনো সমাধান দিতে পারেনি। শুধু ‘কারিস পিসি ওয়ার্ল্ড’স টিম নোহাউ সার্ভিস’ জানিয়েছিল লজিক ব্যর্থতা সারাইয়ে ৯০ পাউন্ড এবং যান্ত্রিক বা কোনো উপাদানের ব্যর্থতার সরাইয়ে সাড়ে তিনশ’ পাউন্ড নেবে তারা।
খুচরা ওই বিক্রেতা আরও জানান, যদি তারা ডেটা ফেরাতে ব্যর্থ হন, তাহলে কোনো খরচ লাগবে না। কিন্তু এর জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে, বিশেষত মহামারীর বিষয়টিকে আমলে নিয়ে।
ওয়েস্টার্ন ডিজিটালের কাছেও পরামর্শ চেয়েছিলাম আমি, তারা বলেছিল, “যদি ড্রাইভ কাজ করা বন্ধ করে দেয়, আমরা ক্রেতাদের উৎসাহিত করি সমস্যা শনাক্তে ও সমাধান আলোচনায় আমাদের গ্রাহক সেবা টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।”
“যদি দেখা যায় ড্রাইভ নষ্ট হয়ে গেছে, তাহলে আমাদের গ্রাহক সেবা টিম ওয়ারেন্টির ভিত্তিতে বদলি পণ্যের ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে, প্রয়োজনে আমাদের যে কোনো এক ডেটা রিকভারি অংশীদারের কাছেও ক্রেতাকে পাঠাতে পারে।” – যোগ করে ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল।
কিন্তু আমার ড্রাইভ দুটির একটি ছয় বছর এবং অন্যটি চার বছরের পুরোনো। ফলে হাতে বিকল্প আছে শুধু অর্থের বিনিময়ে ডেটা রিকভারির।
তাহলে ডেটা ব্যাকআপের সঠিক রাস্তা কোনটি?
আমি ভিন্ন ভিন্ন ডেটা বিশেষজ্ঞকে প্রশ্নটি করেছি। ‘কারিস পিসি ওয়ার্ল্ড’ এবং ভোক্তা ডিভাইস নির্মাতা ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল এবং সিগেট –কেও প্রশ্নটি করেছি। তাদের সবাই পরামর্শের দিক থেকে এক – আপনার ডেটার তিনটি ব্যাকআপ রাখুন এবং অন্তত একটি কপি আপনার বাড়ির বাইরে সংরক্ষণের চেষ্টা করুন।
লন্ডন ভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডেটা রিকভারি ল্যাব –এর প্রধান ডেটা পুনরুদ্ধার বিশেষজ্ঞ জোসেফ নাঘডি বলেন, “আমার সমাধান হবে তিনটি ডিভাইস নেওয়া – একটি হবে এসএসডি এবং বাকি দুটি এইচডিডি ড্রাইভ – ভিন্ন ভিন্ন দুই বা তিন নির্মাতার।”
“তিন ভিন্ন নির্মাতার তিন হার্ড ড্রাইভ একই সময়ে নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়।” – যোগ করেন নাঘডি।
তিনি আরও পরামর্শ দেন, একদমই হারাতে চান না এমন ডেটার কপি তৈরি করে আত্মীয়ের বাড়িতে সংরক্ষণ করার। যেমন, মূল্যবান পারিবারিক ছবি।
এর সঙ্গে একমত হয়েছেন ডেটা ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ভিয়ামের জ্যেষ্ঠ বৈশ্বিক প্রযুক্তিবিদ মাইকেল কেড। তিনি বলেন, “আমার দুটি বড় হার্ড ড্রাইভ আছে যা্ আমি ৩০ মাইল দূরে আমার বাবা-মায়ের বাসায় রাখি। আমি সব গুরুত্বপূর্ণ ডেটার কপি তৈরি করি, এবং তা হার্ড ড্রাইভে নেই এবং নিয়ে আসি।”
“এরপর আমার আরেকটি হার্ড ড্রাইভ রয়েছে যা বাড়িতে সবসময় আমার কাছেই থাকে। সেটিতে আমি প্রতিনিয়ত ব্যাকআপ রাখি এবং সম্ভাব্য মাসে একবার, আমি ড্রাইভটি আমরা সঙ্গে নিয়ে যাই এবং বাবা-মায়ের বাসায় থাকা একটির সঙ্গে বদলে নেই।” – উল্লেখ করেছেন কেড।
সিগেট আমাকে জানিয়েছে, ওদের ড্রাইভ ডেটা রিকভারি সেবাসহ আসে, এর আওতায় লজিক ব্যর্থতাও থাকে। তবে, যান্ত্রিক ব্যর্থতার জন্য খরচ নেয় তারা, কিন্তু আমাকে সুনির্দিষ্ট কোনো খরচ জানাতে রাজি হয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
সিগেটের গ্রাহক কারিগরি প্রকৌশলী গ্যাভিন মার্টিনের পরামর্শ হলো, ‘এক্সট্রিম স্পোর্টসের’ বেলায় ‘রাগড ড্রাইভ’ ব্যবহার করার বা এসএসডি ব্যবহার করার যা পড়লেও সহজে ভাঙে না।
তিনি বলেন, “এটি সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রাংশ নির্দিষ্ট একটা সময় পরে নষ্ট হবে, নির্ভর করবে কোন পরিবেশে ব্যবহার করা হচ্ছে – উচ্চ অথবা নিম্ন আর্দ্রতা, অত্যন্ত তাপমাত্রা। আপনাকে সঠিক কাজের জন্য সঠিক ড্রাইভটি ব্যবহার করতে হবে। বিশ্বের কোনো ব্র্যান্ড আপনাকে আজীবনের জন্য ডেটার নিশ্চয়তা দেবে না।”
কারিস পিসি ওয়ার্ল্ডের মালিক প্রতিষ্ঠান ‘ডিক্সন কারফোন’ –এর পরিষেবার পরিচালক ডিন ক্র্যামার জানিয়েছেন, এখনও এইচডিডি রাখলে কাজে দেয়, কারণ এসএসডি’র তুলনায় চার গুণ বেশি সংরক্ষণের জায়গা পাওয়া যায়।
“কিন্তু প্রযুক্তিটি আরও বেশি স্থিতিশীল হওয়ায়” নিজেদের পণ্য পরিসীমাকে এসএসডি’র দিকে নিয়ে যাচ্ছে খুচরা এ বিক্রেতা। ক্র্যামার বলেছেন, “আসন্ন কয়েক বছরে এসএসডি’র দাম কমে সাশ্রয়ী হবে বলে আশা করছি আমরা।”
এরপর রয়েছে ক্লাউড। সিগেট, কারিস পিসি ওয়ার্ল্ড এবং কেড সবাই আইক্লাউড, ড্রপবক্স বা ওয়ানড্রাইভের মতো ক্লাউডে ডেটা সংরক্ষণের পক্ষে। তবে ডেটা কতোটা নিরাপদ থাকবে তা নিয়ে সন্দিহান ডেটা রিকভারি ল্যাবের নাঘডি। “আপনি অনলাইন ব্যাকআপের উপর নির্ভর করতে পারেন না - আপনি যদি মাসে ক্লাউড ডেটা স্টোরেজের জন্য এক হাজার পাউন্ড খরচ করেন, তাহলে হয়তো হ্যাঁ, কিন্তু আপনি যদি যৎসামান্য খরচ করেন বা কিছুই না খরচ করেন, তাহলে না।”
যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য ডেটা রিকভারি ল্যাব সাড়ে পাঁচশ পাউন্ড খরচ নেয় এবং ছয় দিনের মধ্যে ডেটা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে থাকে।
এতো উচ্চ মূ্ল্য হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন নাঘডি। তিনি জানিয়েছেন, ড্রাইভের ‘রিড-অ্যান্ড-রাইট হেডস’ প্রতিস্থাপনের জন্য বিশেষ “পরিষ্কার কক্ষ” ল্যাবরেটরির প্রয়োজন পড়ে যা স্থাপনে খরচ হয় প্রায় ২৫ হাজার পাউন্ড – একটি জটিল, খটমটে প্রক্রিয়া।
নাঘডি আরও জানিয়েছেন, ডেটা রিকভারির জন্য সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার দেয় এমন প্রতিষ্ঠান বিশ্বে শুধু একটিই রয়েছে – সেটি হলো রাশিয়ার এইস ল্যাবরেটরি। “সমস্যা হলো তাদের কোনো আসল প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।” – বলেন তিনি।
ডেটা রিকভারি ল্যাব এবং কারিস পিসি ওয়ার্ল্ড’স জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে ডেটা রিকভারি পেশাদারেরও প্রচণ্ড অভাব। ডেটা রিকভারির কোনো প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা না থাকায় দুটি প্রতিষ্ঠানেরই নিজ নিজ প্রশিক্ষণ কর্মসূচী তৈরি করতে হয়েছে।
প্রযুক্তি প্রেমী ক্রেতাদের জন্য বিশেষজ্ঞরা ব্যক্তিগত ‘এনএএস-আরএআইডি বক্স’ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন, যেটি প্রযুক্তি কর্মীদের কথ্য ভাষায় ন্যাস-রেইড নামে পরিচিত।। এই ওয়াই-ফাই সক্ষমতা সম্পন্ন ডিভাইসে একাধিক এইচডিডি বা এসএসডি রাখা যায়। ফলে একটি কাজ করা বন্ধ করে দিলেও সেখানে থাকা অন্যান্য একাধিক “বাড়তি” ড্রাইভে আপনার ডেটার প্রতিলিপি থাকে।
আমার ক্ষেত্রে, বিশেষজ্ঞদের ধারণা আমি বিশেষভাবে দুর্ভাগা যার দুটি ড্রাইভ একই সময়ে নষ্ট হয়েছে। আমি সবচেয়ে সস্তা অপশনের পেছনে খরচ করেছিলাম। সব শেষে, ৪৯ দিন লেগেছে আমার একটি ড্রাইভ ফেরত পেতে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে অল্প কিছু ডেটাই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিলো।