Published : 22 Jun 2025, 02:23 PM
প্রযুক্তির এ যুগে নতুন নতুন অনলাইন হুমকির উদ্ভব হচ্ছে, যা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য, অর্থ এবং ডিভাইসকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এইনব ঝুঁকি থেকে বাঁচার উপায় কী?
সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক সাইট ম্যাকাফি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, এগুলো মোকাবেলা করার একটি উপায় হল নির্ভরযোগ্য সফটওয়্যার টুল ব্যবহার করে ভাইরাস স্ক্যান করা। যা সংবেদনশীল তথ্য সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি ডিভাইস ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা করে।
ভাইরাস স্ক্যানের কাজ কী?
কম্পিউটার বা ডিভাইসে ভাইরাস আছে এমনটি সন্দেহ হলে সহজেই ভাইরাস স্ক্যান করে নিতে পারেন। ভিন্ন ভিন্ন অ্যান্টিভাইরাসের কাজের ধরন ভিন্ন হতে পারে তবে এসব সফটওয়্যার নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত পরিচিত ম্যালওয়্যার এবং সেগুলোর অনুরূপ কোডভিত্তিক ভ্যারিয়েন্টগুলো খুঁজে বের করে।
এমনকি কিছু অ্যান্টিভাইরাস সন্দেহজনক আচরণও শনাক্ত করে। যদি সফটওয়্যারটি কোনো ক্ষতিকর প্রোগ্রাম বা কোড খুঁজে পায় তাহলে তা সঙ্গে সঙ্গে জানায়।
ডিভাইসে ভাইরাস থাকার পরিচিত লক্ষণ
ভাইরাস স্ক্যান করার আগে ডিভাইসে ভাইরাসের উপস্থিতির পরিচিত লক্ষণগুলো জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
ডিভাইসে কাজের গতি কি কমে আসছে? ফাইল হারিয়ে যাওয়া বা স্টোরেজ স্পেসের অভাব লক্ষ্য করেছেন? নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে পাঠানো ইমেইল বা বার্তা চোখে পড়েছে যা আপনি লেখেননি? ব্রাউজারের হোমপেজ বা সেটিংয়ে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন? অপ্রত্যাশিত পপ-আপ উইন্ডো দেখতে পাচ্ছেন, অথবা ক্র্যাশ এবং অন্যান্য প্রোগ্রাম ত্রুটির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এসব লক্ষণ দেখা দিলে ডিভাইসে ভাইরাস থাকতে পারে। তবে চিন্তার প্রয়োজন নেই, কারণ, এ সমস্যাগুলো ভাইরাস স্ক্যানের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।
বিনামূল্যের ভাইরাস স্ক্যানার কি নিরাপদ?
ওয়েব ভিত্তিক এবং ডাউনলোড উভয় ফরম্যাটেই বিনামূল্যের ভাইরাস স্ক্যানার টুলগুলো সহজেই ম্যালওয়্যার পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়। সন্দেহজনক কিছু লক্ষ্য করলে এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে, সতর্ক থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাইবার অপরাধীরা প্রায়ই নকল ফ্রি ভাইরাস চেকার টুল তৈরি করে যা আসলে ছদ্মবেশধারী ম্যালওয়্যার। যদি বিনামূল্যে স্ক্যানিং টুল বেছে নেন, তাহলে সুপরিচিত কোনো সাইবার নিরাপত্তা ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করা ভাল।
অ্যাপ স্টোর বা ব্রাউজারে, ভালো রিভিউসহ একটি নির্ভরযোগ্য অনলাইন স্ক্যানিং টুল অথবা এমন একটি ওয়েবসাইট দেখুন যার ইউআরএল ‘এইচটিটিপিএস’ দিয়ে শুরু হয়।
বিনামূল্যের টুলগুলো প্রায়ই বেশ সাধারণ এবং ন্যূনতম প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে। যদি একেবারে বিনামূল্যেই স্ক্যান করতে চান তাহলে ভালো সফটওয়্যার গুলোর ট্রায়াল ভার্সন ব্যবহার করুন যা রিয়েল টাইম সুরক্ষা, ভিপিএনসহ প্রিমিয়াম সেবা দেবে।
কম্পিউটার এবং স্মার্টফোনসহ সব ডিভাইস আলাদাভাবে সুরক্ষিত রাখা যদি ঝামেলার মনে হয় তাহলে এমন একটি সিকিউরিটি সিস্টেম ব্যবহার করতে পারেন যা একটি কেন্দ্রীয় ক্লাউডভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম থেকে কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট সব ডিভাইসকেই সুরক্ষা দেয়।
আধুনিক অনেক অ্যান্টিভাইরাসই এখন স্থানীয় এবং ক্লাউড-ভিত্তিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে কাজ করে। ফলে কম্পিউটারের ওপর অতিরিক্ত চাপ পরে না।
যেভাবে অনলাইনে ভাইরাস স্ক্যান করবেন
১. বিশ্বস্ত অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার বাছাই করুন
সঠিক অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার নির্বাচন করার সময় সাধারণ ভাইরাস স্ক্যানের বাইরে এই ফিচারগুলো মাথায় রাখুন:
● রিয়েলটাইম সুরক্ষা, এ ফিচারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ ডিভাইসে কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আগেই এগুলো শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।
● একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস এমন হতে হবে যা ডিভাইসের পারফরম্যান্সে খুব কম প্রভাব ফেলে।
● সফটওয়্যারটি যেন ব্যবহারবান্ধব ইন্টারফেইসযুক্ত হয়। এতে স্ক্যান পরিকল্পনা করা ও সেটিং ম্যানেজ করা সহজ হয়।
● শুধু ভাইরাস শনাক্ত করাই নয় আরও কিছু বাড়তি সুবিধা যেমন ফায়ারওয়াল, সুরক্ষিত ভিপিএন, আইডেন্টিটি প্রোটেকশন ইত্যাদি যেন থাকে।
● এমন কোনো বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের সফটওয়্যার বেছে নেওয়া উচিত যাদের রিভিউ ভালো, পরিষ্কার ও সহজবোধ্য প্রাইভেসি পলিসি রয়েছে এবং যেটি অ্যান্ড্রোয়েড ও আইওএস দুই প্ল্যাটফর্মেই ভালো সুরক্ষা দেয়।
২. স্ক্যান করা শুরু করুন
ভাইরাস পরীক্ষা করার প্রক্রিয়াটি ডিভাইসের ধরন এবং এর অপারেটিং সিস্টেমের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, ভাইরাস স্ক্যানার আপনার সিস্টেমের ফাইল এবং অ্যাপগুলি পরীক্ষা করার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য একটি ‘স্ক্যান’ বোতাম দেখাবে।
কম্পিউটার, ফোন এবং ট্যাবলেট স্ক্যান করতে সাহায্য করার জন্য নিচের বিষয়গুলোতেও খেয়াল রাখুন:
আপনি যদি উইন্ডোজ পিসি ব্যবহার করেন, তাহলে ‘সেটিংস’-এ যান এবং ‘প্রাইভেসি অ্যান্ড সিকিউরিটি > উইন্ডোজ সিকিউরিটি > ভাইরাস অ্যান্ড থ্রেট প্রোটেকশন’ ট্যাবে যান। সেখানে জানতে পারবেন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা।
ম্যাক কম্পিউটারগুলোতে নিজস্ব কোনো অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম থাকে না। তাই ভাইরাস স্ক্যান করতে হলে আলাদা সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে হবে।
অ্যান্ড্রয়েড ওপেন সোর্স হওয়ায় এর জন্য প্রচুর অ্যান্টিভাইরাস রয়েছে। অন্যদিকে অ্যাপলের নিরাপত্তা মডেল অনেক কঠোর তাই আইফোন ও আইপ্যাডে সাধারণ ভাইরাসের ঝুঁকি তুলনামূলক কম। তবে, তার মানে এই নয় যে, অ্যান্টিভাইরাসের প্রয়োজনীয়তা নেই। আইফোন ও আইপ্যাডের জন্য নিরাপদ অ্যান্টিভাইরাস টুল খুঁজতে হলে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে খুঁজতে হবে।
কোনো নির্দিষ্ট ফাইল স্ক্যান করতে চাইলে উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার বা ম্যাকওএস ফাইন্ডারে ফাইলটির উপর রাইট ক্লিক করে ‘স্ক্যান’ অপশন বাছাই করুন। এতে ফাইলটি স্ক্যান হয়ে যাবে।
৩. স্ক্যানের ফলাফল দেখে পদক্ষেপ নিন
স্ক্যান শেষে টুলটি একটি ফলাফল রিপোর্ট দেখাবে। প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সফটওয়্যারটির নির্দেশনা অনুসরণ করা। এরপর স্ক্যানারের দেয়া তথ্য দেখে সন্দেহজনক ফাইলটি ডিলিট করে দিতে পারেন।
এরপর আরেকবার স্ক্যান করুন যেন কোনো ধরনের ভাইরাস আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়।
৪. ‘অটোমেটিক স্ক্যান’ পরিকল্পনা করে রাখুন
নিয়মিত সুরক্ষার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো অ্যান্টিভাইরাসকে স্বয়ংক্রিয় করে তোলা। একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস স্ক্যান শিডিউল করার সুবিধা দেয়। অধিকাংশ অ্যান্টিভাইরাস ব্যাকগ্রাউন্ডে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্যান চালিয়ে যায়। তাই কোনো সমস্যা না দেখলে আলাদা করে স্ক্যানের প্রয়োজন পরে না। প্রতি সপ্তাহে একটি ‘ফুল সিস্টেম স্ক্যান’ করাকে কাজের বলে বিবেচনা করা হয়।