Published : 28 Nov 2024, 02:20 PM
দীর্ঘদিন আগে বরফের একশ ফিট নীচে সমাহিত এক হারিয়ে যাওয়া শহর পুনরায় খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
স্নায়ু যুদ্ধ চলাকালে শহরটি ব্যবহৃত হয়েছে মার্কিন ঘাঁটি হিসেবে, আর ৫৮ বছর পর আবারও এর খোঁজ মিলল।
‘ক্যাম্প সেঞ্চুরি’ নামের এই ঘাঁটি গ্রিনল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নির্মিত হয়েছিল ১৯৫৯ সালে, তবে এর নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। সোভিয়েত ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌঁছায়, এমন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের গোপন লঞ্চ সাইট হিসেবে একে ব্যবহার করার লক্ষ্য নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু ওই ঘাঁটিতে বরফ পড়তে শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র এ প্রকল্পকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে ক্যাম্পটি ছেড়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স গার্ডনারের সহায়তায় এ বছরের এপ্রিলে গ্রিনল্যান্ডের বরফের মানচিত্র ও ভবিষ্যতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অনুমান করতে দেশটির ওপর দিয়ে প্লেন যাত্রা করেছিলেন নাসার বিজ্ঞানী চ্যাড গ্রিন।
“আমরা বরফের বিছানা খতিয়ে দেখছিলাম, আর এর থেকে বেরোলো ক্যাম্প সেঞ্চুরি,” নিজেদের ‘রেডার-ডিটেক্টিং’ কাঠামো কীভাবে এ ঘাঁটির টানেল খুঁজে পেয়েছিল, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন গার্ডনার।
“আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি যে এটা আসলে কী ছিল।”
এ ঘাঁটির অস্তিত্বের বিষয়টি অনেক বছর ধরে জানা থাকলেও এর আগে কখনো তা শনাক্ত করা যায়নি। নাসা বলছে, তাদের নতুন ম্যাপিংয়ে এর বিভিন্ন কাঠামো ‘এমনভাবে ফুটে উঠেছে, যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি।’
আনুষ্ঠানিকভাবে, ক্যাম্প সেঞ্চুরি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল, কৃত্রিম উপায়ে বরফ তৈরির বিভিন্ন পদ্ধতি পরীক্ষা করে দেখা। কিন্তু এর পেছনের আসল পরিকল্পনা ছিল ‘টপ সিক্রেট’, যেখানে সোভিয়েতের সঙ্গে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলে এই গোপন লঞ্চ সাইট ব্যবহার করার লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের।
এটি পরিত্যাক্ত হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। তবে, যুক্তরাষ্ট্র সেখানে আনুমানিক দুই লাখ লিটারের ডিজেল ও বর্জ্য ফেলে আসায় এর পরিচ্ছন্নতা নিয়ে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এর পর গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্ককে এর দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল কারণ এ ভূখণ্ডের মালিকানা ইউরোপীয় দেশটির কাছে।
নিজের প্রথম মেয়াদের শেষদিকে ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তার ব্যাখ্যানুসারে, এটি একটি ‘বড় রিয়েল এস্টেট চুক্তি’ হতে পারে।
গ্রিনল্যান্ডের বরফের স্তর ক্রমশই গলে যাচ্ছে। তাই এ ভূখণ্ডের নীচে লুকিয়ে থাকতে পারে সোনা, রুবি, হীরা, তামা, অলিভাইন, মার্বেল ও তেলের মতো দামী খনিজ।
এর বরফ গলে যাওয়ার মানে হচ্ছে, এর আগে যেসব শক্তির উৎস বা খনিজ নাগালের বাইরে ছিল তা আরও সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় গোটা বিশ্বের উপকূলীয় অধিবাসীদের কাছেই তা একটি ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি।