Published : 20 Aug 2024, 04:34 PM
উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের বিলুপ্তপ্রায় সিন্ধুঘোটকের মতো দেখতে স্তন্যপায়ী প্রাণীর নতুন এক প্রজাতির সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
‘ওন্টোসেটাস পোস্টি’ নামের এই প্রজাতিটির সন্ধান মিলেছে যুক্তরাজ্যের নরউইচ শহর ও বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প শহরে আবিষ্কৃত প্লাইস্টোসিন যুগের জীবাশ্মে।
এ গবেষণাটি করেছেন জাপানের ‘ইউনিভার্সিটি অফ সুকুবা’-এর ড. ম্যাথিউ বোইসভিলের নেতৃত্বে জীবাশ্মবিদদের একটি দল। এটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘পিয়ারজে’-তে।
প্রাথমিকভাবে এসব জীবাশ্মকে ‘ওন্টোসেটাস ইমোনসি’ নামের ভিন্ন এক প্রজাতির অন্তর্গত বলে ধারণা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে এসব জীবাশ্মের চোয়ালের হাড়ের নিবিড় পরীক্ষায় আলাদা ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে, যা এসব প্রজাতিকে ‘ওন্টোসেটাস ইমোনসি’ নামের প্রজাতির থেকে আলাদা করে তুলেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে চারটি ‘পোস্ট-কাইনিন দাঁত’, নিচের চোয়ালে একটি বড় আকারের কাইনিন ও একটি ‘ফিউজড ম্যান্ডিবুলার সিম্ফিসিস’ - নিচের চোয়ালের দুটি অংশ যেখানে মেলে।
এসব অভিযোজন থেকে ইঙ্গিত মেলে, আধুনিক প্রজাতির সিন্ধুঘোটকের মতো স্তন্যপান করানোর জন্য উপযুক্ত ছিল ‘ওন্টোসেটাস পোস্টি’।
‘ওন্টোসেটাস’ গণটির আগমন ঘটেছিল উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর থেকে এবং এরা ‘মিও-প্লিওসিন’ যুগের সময় আটলান্টিক মহাসাগরে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর জলবায়ু ও ভূগোলে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সময়কাল হিসেবে বিবেচিত ‘মিও-প্লিওসিন’ যুগ।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, ‘ওন্টোসেটাস’ গণের অভিগমনে সহায়তা করেছিল মধ্য আমেরিকান সমুদ্রপথ, যেটি পানামার ইস্তমাস বা স্থলসন্ধি বন্ধ হওয়ার আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসাগরীয় পথ ছিল।
প্লিওসিন যুগে পৃথিবীর বৈশ্বিক তাপমাত্রা ঠাণ্ডা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘ওন্টোসেটাস পোস্টি’সহ অনেক সামুদ্রিক প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে পড়ে। এ ঠাণ্ডা সময়টি আধুনিক সিন্ধুঘটক ও ‘ওডোবেনাস রোসমারাস’ প্রজাতির উত্থানের পথও প্রসারিত করেছিল। কারণ এরা ঠাণ্ডা পরিবেশই এদের অভিযোজনের জন্য সহায়ক।
‘সিন্ধুঘটক ও অন্যান্য সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিবর্তনীয় ইতিহাসে নতুন ধারণা দিয়েছে ‘ওন্টোসেটাস পোস্টি’র উদঘাটন। এখানে তুলে ধরা হয়েছে, লাখ লাখ বছর ধরে পরিবেশগত বিভিন্ন পরিবর্তন কীভাবে বিভিন্ন প্রজাতির অভিযোজন ও বেঁচে থাকার উপর প্রভাব ফেলেছে।
‘ওন্টোসেটাস পোস্টি’ ও আধুনিক সিন্ধুঘটকের মধ্যে নানা মিল অভিসারী বা কেন্দ্রাভিমুখী বিবর্তনের ‘একটি বিস্ময়কর’ উদাহরণ, যেখানে একইরকম পরিবেশগত চাপের কারণে সম্পর্ক নেই এমন বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে একই রকম বৈশিষ্ট্য বিকাশ করেছে।
সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীরা কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এদের পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে ও খাপ খাইয়ে নিয়েছে তার ধাঁধায় আরও একটি পালক যুক্ত করেছে নতুন এই উদঘাটন।