Published : 09 Jun 2025, 03:17 PM
মহাবিশ্বে এমন কিছু রহস্যময় বস্তু রয়েছে যেগুলো দামী কোনো যন্ত্র ছাড়াই আরও ভালোভাবে খুব শক্তিশালী ও উচ্চ-শক্তির ঘটনা তৈরি করতে পারে। সাধারণত এমন কণার সংঘর্ষ শনাক্ত বা গবেষণা করতে দামী যন্ত্রের প্রয়োজন বিজ্ঞানীদের।
‘জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি’ ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড’-এর বিজ্ঞানীদের একটি দল বলছে, বিশালাকার বিভিন্ন ব্ল্যাক হোল স্বাভাবিকভাবেই এমন চরম পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যা মানুষের তৈরি কণা ত্বরক যন্ত্র বা ‘লার্জ হাড্রন কোলাইডার’ বা এলএইচসি’তে দেখা মেলে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে উন্নত যন্ত্রের চেয়েও আরও বেশি শক্তিশালী কণা তৈরি করতে পারে ব্ল্যাক হোল।
গবেষণার সহ-লেখক ও জ্যোতির্পদার্থবিদ জোসেফ সিল্ক বলেছেন, যখন গ্যাস ঘুরতে ঘুরতে ঘূর্ণায়মান এক ব্ল্যাক হোলে পড়ে তখন তা শক্তিশালী কণার জেট তৈরি করে। কিছু কণা ব্ল্যাক হোলে পড়ে চিরতরে হারিয়ে গেলেও অন্যান্য কণা দ্রুত গতিতে বাইরের দিকে ছুটতে থাকে।
গবেষক সিল্ক বলেছেন, এসব কণার মধ্যে কিছু কণা পৃথিবীতে আসতে পারে, যা লার্জ হাড্রন কোলাইডারে তৈরি কণার সমান বা আরও বেশি শক্তি বহন করে।
লার্জ হাড্রন কোলাইডারের মতো বিভিন্ন কণা সংঘর্ষ যন্ত্র প্রায় আলোর গতি নিয়ে এসব ক্ষুদ্র কণাকে একসঙ্গে ধাক্কা দেয়।
এ সংঘর্ষ বিজ্ঞানীদের জানতে সাহায্য করে বস্তু কী দিয়ে তৈরি এবং ডার্ক ম্যাটারের মতো নতুন কণাও খুঁজে পেতে সহায়তা করে এটি, যা মহাবিশ্বের বড় একটা অংশ তৈরি করলেও এখনও সরাসরি শনাক্ত করা যায়নি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
তবে এ ধরনের যন্ত্র বানানো অনেক ব্যয়বহুল ও সময়ের প্রয়োজন। যেমন– পরবর্তী প্রজন্মের একটি কোলাইডার তৈরিতে তিন হাজার কোটি ডলার খরচ হতে পারে এবং এটি তৈরি হতেও সময় লাগবে প্রায় ৪০ বছর।
সিল্ক ও তার গবেষণা দলটির অনুমান, বিজ্ঞানীদের হয়তো এত সময় অপেক্ষা করতে হবে না।
গবেষকরা বলছেন, ছায়াপথের কেন্দ্রে দ্রুত ঘুরছে এমন ব্ল্যাক হোল হয়তো এরইমধ্যে স্বাভাবিকভাবেই এই উচ্চ-শক্তির সংঘর্ষ তৈরি করছে। আসলে, এসব বিশালাকার ব্ল্যাক হোল প্রায়ই প্লাজমা ও শক্তির তীব্র বিস্ফোরণ তৈরি করে, যা সম্ভবত এদের আশপাশের ঘূর্ণায়মান পদার্থ থেকে পাওয়া শক্তির কারণে ঘটে।
নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, ব্ল্যাক হোলে প্রবাহিত গ্যাস ঘূর্ণন থেকে শক্তি পেতে পারে। ফলে তীব্র কণা সংঘর্ষের তৈরি হয়।
পৃথিবীতে বিজ্ঞানীদের তৈরি যন্ত্র ও ব্ল্যাক হোলের মধ্যকার মূল পার্থক্য হলো দূরত্ব। ব্ল্যাক হোল অনেক দূরে থাকলেও এদের বিভিন্ন কণা পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে।
এরইমধ্যে মহাকাশ থেকে আসা অতি শক্তিশালী কণা শনাক্ত করছে ‘অ্যান্টার্কটিকার আইসকিউব নিউট্রিনো অবজারভেটরি’ ও ভূমধ্যসাগরের নিচে থাকা ‘কেএমথ্রিনেট’ টেলিস্কোপের মতো বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।
ভবিষ্যতে কোনও একদিন এসব যন্ত্র হয়তো মহাজাগতিক সংঘর্ষের সংকেত শনাক্ত করবে, হয়তো নতুন পদার্থবিজ্ঞান বা ডার্ক ম্যাটারের প্রমাণও দেবে এরা।
এ গবেষণার সহ-লেখক ও অক্সফোর্ডের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এন্ড্রু মামেরি বলেছেন, মহাবিশ্বকে বোঝার নতুন এক পথ উন্মোচন করতে পারে এই গবেষণা। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পদার্থ গিলে ফেলার জন্য পরিচিত ব্ল্যাক হোল এখন হয়তো মহাবিশ্বের গভীরে লুকিয়ে থাকা নানা রহস্যও প্রকাশ করবে।
গবেষণার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স’-এ।