Published : 02 Jun 2025, 03:39 PM
রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে কৌশলগত বোমারু বিমানের ওপর হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকবাহী ড্রোনগুলো ইউক্রেইনের গুপ্তচর সংস্থা কাঠের শেডের ছাদের ভেতরে লুকিয়ে হামলাস্থলগুলোর কাছে নিয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন কিইভের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
অনলাইনে পোস্ট করা একাধিক ছবিতেও একই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
ইউক্রেইনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ ‘স্পাইডারস ওয়েব’ সাংকেতিক নামের এই হামলা চালানোর কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এ হামলায় রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি কিইভের।
ইউক্রেইনের ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, ড্রোন বহন করা শেড বা ছাউনিগুলো ট্রাকে করে বিমান ঘাঁটিগুলোর সীমানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর দূর থেকে প্রযুক্তির সহায়তায় ওই ছাউনিগুলো সরিয়ে ড্রোনগুলোকে ওড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়, পরে ওই ড্রোনগুলো হামলায় নামে।
রাশিয়ার মোট চারটি বিমানঘাঁটিতে এ হামলা চালানো হয়, এতে রাশিয়ার ৪১টি বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দাবি নাম প্রকাশে রাজি না হওয়া ওই কর্মকর্তা।
টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টে এসবিইউ বলেছে, তাদের অনুমান রুশ বিমানঘাটিঁগুলোতে চালানো এ হামলায় মস্কোর প্রায় ৭০০ কোটি ডলার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
“রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রধান বিমানঘাঁটিতে থাকা কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ক্যারিয়ারের চৌত্রিশ শতাংশে আঘাত হানা হয়েছে,” বলেছে তারা।
হামলায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
“ইউক্রেইন স্বতন্ত্রভাবেই এই ফল এনেছে। এটাই আমাদের সবচেয়ে দূরপাল্লার অভিযান,” দেড় বছরের প্রস্তুতিতে এ হামলা চালানো হয়েছে জানিয়ে টেলিগ্রামে এমনটাই বলেছেন তিনি।
হামলায় ১১৭টি ড্রোন ব্যবহৃত হয়েছে এবং এতে রুশ বাহিনীর ‘ব্যাপক ক্ষতি’ হয়েছে।
জেলেনস্কির দাবি, এই অভিযানের জন্য কিইভ রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির একটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের পাশেই একটি অস্থায়ী কেন্দ্র স্থাপন করেছিল।
“অভিযানের আগে আগেই এতে অংশ নেওয়া সব কর্মীদের রাশিয়া থেকে বের করে আনা হয়েছে,” বলেছেন তিনি।
রুশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা একাধিক ছবি ও ভিডিওতে সাইবেরিয়ার ইরকুৎস্ক অঞ্চলে বেলায় বিমানঘাঁটিতে থাকা একাধিক রুশ কৌশলগত বোমারু বিমানে আগুন দেখা গেছে।
এসব ছবি ও ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
অঞ্চলটির গভর্নর ইগর কোবজেভ বলেছেন, স্রেদনি গ্রামের একটি সামরিক ইউনিটে ড্রোন হামলা হয়েছে। স্রেদনি গ্রামটি বেলায়া বিমানঘাঁটির কাছেই।
কোথায় হামলা হয়েছে তা সুস্পষ্টভাবে না বললেও কোবজেভ জানান, হামলায় ব্যবহৃত ড্রোনগুলো একটি ট্রাক থেকে ছোড়া হয়েছে।
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এতদূরে ইউক্রেইন আর কখনোই হামলা চালায়নি। তাদের হাতে থাকা ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্রের এতদূরে হামলা চালানোর সক্ষমতা নেই। যে কারণে, হামলায় ব্যবহৃত ড্রোনগুলোকে ‘টার্গেটের’ কাছে নিয়ে যেতে হয়েছিল।
ইউক্রেইনের ওই কর্মকর্তা রয়টার্সকে কিছু ছবি দিয়েছেন, যাতে একটি স্থাপনায় ডজনের বেশি স্বল্পপাল্লার কোয়াড্রোকপ্টার ড্রোন জড়ো করে রাখা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।
রুশ বিমানঘাঁটিতে হামলায় এ ধরনের ড্রোনই ব্যবহার করা হয়েছে, বলেছেন তিনি।
ওই কর্মকর্তার দেওয়া আরও কিছু ছবিতে কাঠের শেডগুলো এবং ছাদের বিমের মাঝখানের গর্তে ড্রোন বসে থাকতে দেখা গেছে।
রুশ টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট হওয়া ভিডিওতে একটি ট্রাকের পেছনে একই ধরনের শেড বা ছাউনি দেখা গেছে।
ভিডিওটি পোস্ট করা রুশ গণমাধ্যম বাজা তাদের ক্যাপশনে বলেছে, ভিডিওটি বেলায়া বিমানঘাঁটির কাছের জেলায় ধারণ করা হয়েছে।
ইরকুৎস্ক অঞ্চলের বিমানঘাঁটিতে সাধারণত দূর-পাল্লার কৌশলগত বোমারু বিমান টিইউ-২২এম টুপোলভ বিমান রাখা হয়। ইউক্রেইনে বিভিন্ন নিশানায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মস্কো এসব বিমানই ব্যবহার করতো।
এই অভিযান জেলেনস্কি নিজে ও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ভ্যাসিল মালিউক তত্ত্বাবধান করেছেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেইনের ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
রাশিয়ায় ড্রোন হামলায় ৪০টি বোমারু বিমান ধ্বংসের দাবি ইউক্রেইনের