Published : 30 Jun 2025, 01:31 AM
ঢাকার বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবে ৩৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার মেলেনি পাঁচ বছরেও।
রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, এবছরই মামলার বিচার শেষ হবে, আর আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে। তবে আসামিপক্ষের দাবি, আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ সাক্ষ্যে উঠে আসেনি। আসামিরা সাফাই সাক্ষীর মাধ্যমে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করবেন।
২০২০ সালের ২৯ জুন ঢাকার শ্যামবাজারের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবিতে ৩৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দেয়।
এমএল মর্নিং বার্ড নামের ওই লঞ্চটি মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে যাত্রী নিয়ে সদরঘাটের দিকে আসছিল। সকাল সোয়া ৯টার দিকে শ্যামবাজারের কাছে নদীতে ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় সেটি ডুবে যায়।
‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’ ঘটানোর অভিযোগ এনে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক, মাস্টারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ওইদিনই দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় মামলা করেন নৌ-পুলিশ সদরঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ শামসুল। পরের বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হামিদ ছোয়াদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সদরঘাট নৌ থানার এসআই শাহিদুল আলম।
২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। মামলায় ৩৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এরপর আসামিরা আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান। তারা নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেবেন বলে জানিয়েছেন।
বর্তমানে ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নাসরিন মুন্নীর আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। মামলাটি আসামিদের সাফাই সাক্ষ্যের পর্যায়ে রয়েছে। সবশেষ গত ১৮ মে আসামিদের সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের দিন থাকলেও তা হয়নি। আগামী ১০ অগাস্ট মামলার নতুন দিন ঠিক করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি জহিরুল ইসলাম বলেন, “মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি হয়েছে। আসামিরা নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেবেন।
“যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলার বিচার শেষ হবে। আশা করছি, রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।”
জানতে চাইলে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ইকবাল হোসেন বলেন, “বিগত সরকারের গাফিলতির কারণে এ মামলার বিচার শেষ হয়নি৷
“আমরা প্রত্যাশা করছি, এ বছরেই মামলার বিচার কাজ শেষ হবে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ন্যায় বিচার পাবেন।”
মামলার আসামিরা হলেন- ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হামিদ ছোয়াদ, মাস্টার আবুল বাশার মোল্লা, সহকারী মাস্টার জাকির হোসেন, চালক শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন সিপাই, সুকানি নাসির মৃধা, গিজার হৃদয় হাওলাদার, সুপারভাইজার আব্দুস সালাম, সেলিম হোসেন হিরা, আবু সাঈদ ও দেলোয়ার হোসেন সরকার। আসামিরা সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।
লঞ্চ মালিক ছোয়াদের আইনজীবী সুলতান নাসের বলেন, “এ মামলায় মূল সাক্ষীদের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। তাদেরটা তারা বলেছে। আসামিপক্ষ তাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেবেন।
“তারা তাদের অবস্থান স্টাবলিশড করবেন। তবে মূল সাক্ষীদের কেউ বলতে পারেনি, কোন লঞ্চ কাকে ধাক্কা দিয়েছে। তারা শুধু লঞ্চ ডুবতে দেখেছে। প্রত্যাশা করছি, আসামিরা মামলার দায় থেকে খালাস পাবেন।”
আকারে বহুগুণ বড় লঞ্চ ‘ময়ূর-২’ এর ধাক্কায় ছোট লঞ্চ ‘এমএল মর্নিং বার্ড’ কেমন করে মুহূর্তের মধ্যে বুড়িগঙ্গায় ডুবে গিয়েছিল, সেই দৃশ্য ধরা পড়ে সদরঘাটের একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে।
সেই ভিডিও দেখে তৎকালীন নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছিলেন, “যেভাবে ঘটনা ঘটেছে, আমার মনে হয়েছে এটা পরিকল্পিত। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড।”