Published : 23 May 2025, 02:21 AM
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের লন্ডনের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট অবরুদ্ধের আদেশ পেয়েছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি-এনসিএ।
এর মানে হল, ওই সম্পত্তিগুলো এখন বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না, ওই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে কোনো আর্থিক সুবিধাও শায়ান আপাতত পাবেন না।
ফিনানশিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই দুই সম্পত্তির মধ্যে লন্ডনের গ্রভেনর স্কয়ারে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ২০১০ সালে ৬৫ লাখ পাউন্ডে কেনা হয়।
এক বছর পর উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনসের অন্য অ্যাপার্টমেন্টটি কেনা হয় ১২ লাখ পাউন্ডে।
লন্ডনের সম্পত্তি নিবন্ধকের দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এসব অ্যাপার্টমেন্টের মালিক শায়ান ফজলুর রহমান, যিনি বেক্সিমকো গ্রুপের সিইও ছিলেন। তার বাবা ও চাচা, সালমান ও সোহেল এফ রহমান বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ এই শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা।
ফিনানশিয়াল টাইমস লিখেছে, গ্রেশাম গার্ডেনসের বাড়িটিতে আগে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা থাকতেন। তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একজন এমপি।
শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির কাছ থেকে বাড়ি উপহার নেওয়ার খবরে সমালোচনার মধ্যে সম্প্রতি ব্রিটেনের লেবার সরকারের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন টিউলিপ।
যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল গত জানুয়ারিতে এক প্রতিবেদনে লিখেছিল, শায়ান ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের ‘পারিবারিক বন্ধু’। টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা লন্ডনে এলে শায়ানের একটি বাড়িতে ‘বিনাভাড়ায়’ থাকতেন। টিউলিপের মা শেখ রেহানা লন্ডনের যে বাড়িতে বিনা ভাড়ায় থাকেন, সেটির মালিক শায়ান রহমানের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি অফেশোর কোম্পানি।
এনসিএ এক বিবৃতিতে বলেছে, “লন্ডনের ১৭ গ্রভেনর স্কয়ার এবং গ্রেশাম গার্ডেনসে অবস্থিত দুটি সম্পত্তির ফ্রিজিং অর্ডার পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে এবং এ বিষয়ে এর বেশি মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”
সালমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশের দুদকও অনুসন্ধান করছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গত অগাস্টেই সালমান, তার ছেলে শায়ান ও পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে।
কাগুজে কোম্পানি খুলে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে টাকা পাচার এবং ঋণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সালমান, শায়ান এবং সোহেল এফ রহমানের ছেলে শাহরিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে দুদক।
শায়ানের একজন মুখপাত্র ফিনানশিয়াল টাইমসকে বলেছেন, “আমাদের মক্কেল কোনো ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না, এসব অভিযোগ তিনি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করছেন। যুক্তরাজ্যে যে কোনো ধরনের তদন্তে তিনি পূর্ণ সহযোগিতা করবেন।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। সেখানে বহু মানুষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমরা আশা করি, যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় নেবে।”
শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশে প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে বলে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের করা অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সরকার বলছে, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
ফিনানশিয়াল টাইমস লিখেছে, সরকারের এসব পদক্ষেপকে ‘রাজনৈতিক প্রতিশোধ’ আখ্যায়িত করছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। এই মাসেই দলটির কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউনূস সরকার।
পুরনো খবর
সালমান রহমান ও তার ছেলে-পুত্রবধূর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ
যুক্তরাজ্যে টিউলিপের পর আলোচনায় সালমানপুত্র
'লন্ডনে টাকা পাচার': সালমান, ছেলে ও ভাতিজার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা