Published : 28 Nov 2024, 11:04 PM
দল বেঁধে মারামারি বা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালানোর ঘটনায় সমালোচনার মধ্যে শিক্ষার্থীদেরকে এখন শিক্ষাঙ্গনে আটকে রাখার ছক করছে মন্ত্রণালয়। ক্লাসের পরেও শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রাখতে সহশিক্ষা কার্যক্রমে জোর দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কী কী করা যেতে পারে, সেটিও উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় গ্রাফিতি অঙ্কন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনা পরিচ্ছন্নতা, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা প্রশিক্ষণ, জাতীয় দিবসে কুচকাওয়াজ, ক্রিকেট-ফুটবল-ভলিবল টুর্নামেন্ট আয়োজন ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে বলেছে।
বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল ও কলেজকে এ নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার উপসচিব সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী বিজ্ঞপ্তি জারির বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এই নির্দেশনা জারির কারণ কী- এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি এই কর্মকর্তা।
শিক্ষার এক গবেষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, এসব কার্যক্রম জরুরি, সেই সঙ্গে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। যারা আইন হাতে তুলে নেবে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। নইলে শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফিরবে না।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার প্রায় চার মাস পরেও দেশের শিক্ষাঙ্গনে স্থিতিশীলতা ফেরেনি। প্রায়ই শিক্ষার্থীরা সংঘাত সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছেন বলে খবর আসছে।
চলতি মাসে ঢাকার তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারা, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুমুল মারামারি নিয়ে আলোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই ঘটেছে আরও বড় ঘটনা।
গত রোববার পুরান ঢাকার সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও লুটপাট চালায় ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা এই আক্রমণের নাম দেয় ‘সুপার সানডে’। এর প্রতিশোধ নিতে পরেরদিন সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের পাল্টা আক্রমণে যোগ দেয় কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
দুই সরকারি কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ডেমরার বেসরকারি কলেজটিতে হামলা, লুটপাটের পাশাপাশি বহু শিক্ষার্থীদের বেধরক পেটানোর ছবি ও ভিডিও এসেছে সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে।
এসব ঘটনায় দেশজুড়ে উদ্বেগের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, “সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীগণ শিক্ষা সংশ্লেষবিহীন বিভিন্ন ইস্যুতে আয়োজিত সভাসমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ করছে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় ‘কোমলমতি’ শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া, এ ধরনের অনাহত কার্যক্রম শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অভিভাবকদের মাঝে নানা উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।”
শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষামুখী বা শ্রেণিকক্ষমুখী রাখা এবং বিভিন্ন ধরনের কো-কারিকুলার কার্যক্রমে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত রাখতে হবে বলে মত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করে শ্রেণি কার্যক্রম ও কো-কারিকুলার কার্যক্রম জোরদার করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”
ওই বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালানোর মত সহশিক্ষা কার্যক্রমের কিছু নমুনাও দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
কর্মসূচিগুলোর ভেতর আছে:
# শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনা পরিচ্ছন্নতা অভিযান।
#‘বিজয়ের ৩৬ জুলাই’-ভিত্তিক গ্রাফিতি অঙ্কন। নির্বাচিত গ্রাফিতি নিয়ে সফট অ্যালবাম তৈরি। শ্রেষ্ঠ গ্রাফিতিকে পুরস্কার প্রদান।
#‘ক্রান্তিকালে তারুণ্য দুর্জয়’-ভিত্তিক থিমসং তৈরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবেশন। সফট অ্যালবাম তৈরি। শ্রেষ্ঠ থিম সংকে পুরস্কার প্রদান।
# গার্লস স্কুল ও কলেজে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ।
# জাতীয় দিবস ‘আনুষ্ঠানিক তারুণ্য কুচকাওয়াজ’ আয়োজন। বিএনসিসি-স্কাউট-রোভার এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।
#‘জুলাই বিপ্লব- কী, কেন, কীভাবে’ শিরোনামে ছাত্র, শিক্ষক বিষয়ে অভিভাবকদের আলোচনা সভা।
#‘তরুণ চোখে নৈসর্গ দর্শন’ শিরোনামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিকটস্থ নান্দনিক স্থান যেমন, নদীতীর, চর, উপকূল, পাহাড়, টিলা, ফসলি মাঠে দলবদ্ধ ভ্রমণ।
# দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘তারুণ্য উৎসবকে’ আনন্দময় করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ভলিবল, ফুটবল খেলার আয়োজন।
# তরুণদের উদ্যোক্তা কর্মী হিসেবে আগ্রহী করতে ‘জেনারেশন জেড উদ্যোক্তা’ শীর্ষক বির্তক প্রতিযোগিতা আয়োজন।
‘শাস্তি জরুরি’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেভাবে ভাবছে, সেভাবে শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফিরবে কি না, এই প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অর এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. আব্দুল হালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুধু সহশিক্ষা কার্যক্রম নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইন ও নিয়মভঙ্গকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রম অবশ্যই ভালো। সেটি শিক্ষার্থীদের মেধা-মনন বিকশিত করবে। কিন্তু যারা আইন ভাঙছে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ভাঙছে তারা কী শিক্ষকদের কথায় এসব কার্যক্রমে তারা কী অংশ নেবে?
“শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মব জাস্টিস চলছে। এর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই যার-তার বিচার করছে, নিজেরাই সে শাস্তি বাস্তবায়ন করছে।”
“যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করা, যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ভাঙছে তাদের সে অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া-এসব করা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে”, বলেন শিক্ষা গবেষক আব্দুল হালিম।
আরও পড়ুন-
ঘোষণা দিয়ে হামলা, ঠেকানো গেল না কেন?
‘মেগা মানডে’: সংঘাতে রণক্ষেত্র মোল্লা কলেজ, আহত শতাধিক
ঢাকা কলেজের সব ক্লাস সোমবার বন্ধ
দলে দলে এসে ন্যাশনাল মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী কলেজে তাণ্ডব
হামলা-লুটপাটে মোল্লা কলেজের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা, দাবি অধ্যক্ষের