Published : 24 Jun 2025, 11:59 AM
গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গঠিত অনুসন্ধান কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর গঠিত গুম সংক্রান্ত অনুসন্ধান কমিশনের মেয়াদ এ বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হল।
কমিশনের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। কমিশনের বাকি সদস্যরা হলেন—হাই কোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন।
পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা (এসবি), গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থার সদস্যের মাধ্যমে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে এই কমিশন গঠন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনকালে ক্রসফায়ারের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেওয়ার পর লাশ উদ্ধার বা নিখোঁজের ঘটনাগুলো আলোচনায় ছিল।
এসময় হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন, গোপন বন্দিশালায় দীর্ঘদিন আটকে রাখার ঘটনাগুলোও উঠে আসে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে। ডিজিএফআইয়ের বিরুদ্ধে ‘আয়নাঘর’ নামে গোপন বন্দিশিবির তৈরি করে নির্যাতনের অভিযোগও সেখানে এসেছে।
গত বছর ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর ২৭ অগাস্ট গুম কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
কমিশন এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ পেয়ে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ যাচাই বাছাই শেষে দুটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
গত ১৪ ডিসেম্বর জমা দেওয়া প্রথম অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ‘গুমের নির্দেশদাতা’ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার দাবি করা হয়।
এরপর ৪ জুন দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেয় কমিশন। সেখানে ‘গুমের’ শিকার ব্যক্তি এবং প্রত্যক্ষদর্শী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাতে নির্যাতান ও স্বীকারোক্তি আদায়ের সচিত্র বর্ণনা দেওয়া হয়।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ‘আয়নাঘর’ নামে কুখ্যাতি পাওয়া তিনটি গোপন বন্দিশালা ঘুরে দেখেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। উপদেষ্টা পরিষদের সদন্য এবং গুম তদন্ত কমিশনের সদস্যরাও এসময় তার সঙ্গে ছিলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে কমিশন সরকারের কাছে দুটি প্রধান সুপারিশ রেখেছে। এর একটি ভবিষ্যতমুখী, অন্যটি অতীত সংশোধনের জন্য।
অতীত সংশোধনের জন্য ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে এক বছরের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রাখা এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হাজার হাজার সাজানো সন্ত্রাসবিরোধী মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
আর ভবিষ্যতমুখী সুপারিশে যুক্তরাষ্ট্রের শেখানো ‘নিরাপত্তাবাদী মডেল’ থেকে সরে এসে একটি ‘সামগ্রিক ও পুনর্বাসনমুখী’ সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা আরো কার্যকর ও টেকসইভাবে চরমপন্থার আদর্শগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলো মোকাবিলা করবে।