Published : 05 Jun 2024, 06:47 PM
সক্ষম পরিবারগুলোতে শিশুবিয়ের হার কমে আসলেও সুবিধাবঞ্চিত, অশিক্ষিত ও গ্রামের মেয়ে শিশুদের বিয়ের প্রচলন এখনও উচ্চহারে রয়ে গেছে বলে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে উঠে এসেছে।
বুধবার হোটেল সোনারগাঁয়ে ইউএনএফপিএ ও ইউনিসেফের ‘গ্লোবাল প্রোগ্রাম টু এন্ড চাইল্ড ম্যারিজ (জিপিইসিএম)’ এর তৃতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউএনএফপিএর প্রতিনিধি ক্রিস্টিন ব্লখুস বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ হারে বাল্যবিয়ে কমছে। এভাবে দেশের বাল্যবিয়ে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে ২১৫ বছর লেগে যাবে।”
তিনি বলেন, “কন্যাশিশুদের স্কুলে পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে পারলে তা বেশ কাজে দেবে। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবায় বর্ধিত ও সুপরিকল্পিত বিনিয়োগ এবং কম্প্রিহেন্সিভ সেক্সুয়ালিটি এডুকেশন কিশোরীদের তাদের শরীর ও জীবন সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণাপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে তুলবে, যা তাদের পরিবর্তনের দূত ও ভবিষ্যৎ নেতা হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করে দেবে।”
‘গ্লোবাল প্রোগ্রাম টু এন্ড চাইল্ড ম্যারিজ’ এর তৃতীয় পর্যায়ে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি আইনি নীতিমালা আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইউনিসেফ বলছে, এই কর্মসূচি চলবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। সেখানে বাল্যবিয়ে নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ও দক্ষতা বাড়ানো এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করা হবে; আর কাজ করা হবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে।
নতুন এই ধাপে শিশুবিয়ে বিরোধী আইন ও নীতিমালা জোরদার করা, শিশুদের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হার কমানো এবং সরকারের সামাজিক সুরক্ষার স্কিমগুলো আরও কার্যকর করা ও কমিউনিটির সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর মাধ্যমে সামাজিক রীতি-নীতি পরিবর্তনে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
ইউনিসেফের ওআইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ স্ট্যানলি গুয়্যাভুয়া বলছেন, আবারও প্রতিটি শিশুর ক্ষমতায়ন, বিশেষ করে গ্রামীণ কিশোরী ও অল্প বয়সী নারীদের জীবনদক্ষতা তৈরিতে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে তারা কর্মসূচির নতুন এই পর্যায় শুরু করেছেন।
“যেসব জেলায় উচ্চ মাত্রায় শিশুবিয়ে রয়েছে, সে সব জায়গায় আমরা অন্যান্য অংশীজনদের নিয়ে শিশুবিয়ের মূল কারণ মোকাবিলার পাশাপাশি এক্ষত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন এমন সবাইকে যুক্ত করব। সেই সঙ্গে আমরা বিবাহিত ও অবিবাহিত কিশোরী কন্যাশিশুদের সমন্বিত সহায়তা দেব।”
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেন, বাংলাদেশে শিশু অধিকার রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকারের মূলে রয়েছে শিশুবিয়ে নিরসন।
“শিশুবিয়ে নিরসনে গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও শিশুবিয়ে নিরোধ আইনের প্রয়োগ নিশ্চিতে ঘনিষ্ঠ ও কার্যকরভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। শুধু আইনের মাধ্যমে শিশুবিয়ে নিরসন করা যাবে না। সে কারণে এ বিষয়ে মানুষের চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তনে কাজ করার ওপরেও আমরা গুরুত্ব দেব।”
কর্মসূচির আগের পর্যায়গুলোতে ইউএনএফপিএ ও ইউনিসেফ বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের কারণ উদঘাটন, তৃণমূলের সংগঠনগুলোর ক্ষমতায়ন, বিদ্যমান সেবাগুলো আরও জোরদার এবং অসহায় কন্যাশিশুদের সুরক্ষার জন্য কাজ করার ক্ষেত্রেও সরকারকে সহায়তা দিয়ে এসেছে বলে জানানো হয়েছে অনুষ্ঠানে।
ইউএনএফপিএ ও ইউনিসেফ আগামী চার বছরে (২০২৪-২০২৭) বাংলাদেশে শিশুবিয়ে নিরসনে উল্লেখযোগ্য অর্জন চায়। সেজন্য তারা যৌথ কর্মপরিকল্পনার আওতায় ১২ লাখের বেশি কিশোরীকে (১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী) জীবনদক্ষতার প্রশিক্ষণ এবং লিঙ্গ ও যৌন আচরণ ও শিক্ষা সম্বলিত সুষ্ঠু জ্ঞান আওতায় নিয়ে আসবে।
এছাড়া এই কর্মসূচির মাধ্যমে ২১ লাখ ৭৪ হাজার ৩০০ ব্যক্তি এবং ১২ লাখ ৬ হাজার ৪১৩ জন ছেলেশিশু ও পুরুষকে ক্ষতিকর পুরুষতন্ত্র ও জেন্ডার রীতি-নীতি বিষয়ে সচেতনতামূলক সেশনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।