Published : 10 Mar 2024, 08:22 PM
একটি বাটন মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে নরসিংদীর মাধবদীতে একটি খুনের সাড়ে তিন মাস পর একজনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই বলছে, চুরি করতে ঢুকে চিনে ফেলায় গৃহকর্তাকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
মাসুম বিল্লাহ নামে ওই ‘চোরকে’ গত বুধবার গ্রেপ্তারের চার দিন পর রোববার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে আসে পুলিশের বিশেষ ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা।
এতে নির্মল দেবনাথ নামে মিষ্টি ব্যবসায়ী ওই গৃহকর্তাকে খুনের বিষয়টি এবং রহস্য উদঘাটনের পূর্বাপর তুলে ধরেন পিবিআই নরসিংদী জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে মাসুম বিল্লাহ।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “একটি সিম্ফনি বাটন মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে এক নারীসহ তিনজনকে আটকের পর চতুর্থজনের নাম পাওয়া যায় যে সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত।”
তদন্তে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, তদন্তের শুরুতে নিশ্চিত হওয়া যায় নিহত নির্মল দেবনাথের সিম্ফনি বাটন মোবাইল ফোনটি ‘যে বাসায় ঢুকেছিল সে নিয়ে গেছে’। ওই ফোনের হাতবদল হওয়ার সূত্র ধরে এগিয়ে মেলে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তির সন্ধান।
ঘটনার বর্ণনায় পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত বলেন, ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর একাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে মাসুম। ওই ঘটনার সময় মাধবদীর দক্ষিণ বিরামপুরের বাড়িতে গৃহকর্তা মিষ্টি ব্যবসায়ী একাই ছিলেন এবং তার সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মাসুম তাকে কুপিয়ে মেরে ফেলে।
গত ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নির্মল দেবনাথের স্ত্রী মনি দেবনাথ সন্তানদের নিয়ে ভাইফোটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাবার বাড়ি যান।ওই রাতে নিজের মিষ্টির দোকান বন্ধ করে বাসায় এসে একই ঘুমিয়ে পড়েন। পরের দিন সকালে স্ত্রী বাসায় এসে দেখেন বাড়ির দরজা খোলা এবং তার স্বামী রক্তাক্ত মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন।
পরে মাধবদী থানায় হত্যা মামলা হলে থানা পুলিশের তদন্ত শুরুর কিছুদিন পর পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পায়।
এক হাত থেকে অন্য হাতে ফোন
পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত বলেন, তদন্তের এক পর্যায়ে প্রযুক্তি ব্যবহারে নিশ্চিত হওয়া যায় নির্মল দেবনাথের ফোনটি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে ব্যবহার হচ্ছে। পরে পিবিআইর একটি টিম সেখানে গিয়ে ফোনটিসহ এক তরুণীকে আটক করে হেফাজতে নেয়। তরুণীর দাবি, নরসিংদীর সাকিল নামে এক বন্ধু ফোনটি উপহার দিয়েছে। সেই সূত্র ধরে সাকিলকে আটক করলে তিনি তথ্য দেন, রবিন নামে একজনের কাছ থেকে ২৫০ টাকায় ফোনটি কিনে উপহার দিয়েছে।
তদন্তের পরের ধাপে নরসিংদীর যেখানে রবিনের থাকার কথা সেখানে না পেয়ে সন্দেহ বাড়ে এবং বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাকে পাওয়া যায়। তাকে হেফাজতে নেওয়ার পর জানা যায়, তার ফুফাত ভাই মাসুম বিল্লাহ তিন মাস আগে ফোনটি বিক্রির জন্য দিয়েছে।
এদিকে পুলিশের অভিযানের খবর পেয়ে মাসুম লুকিয়ে পড়ে জানিয়ে এই পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, “আমরা মাসুম বিল্লাহর সন্ধানে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালাই। এক পর্যায়ে তার অবস্থান নরসিংদীরর মাধবদী থানাধীন একটি গ্রামে আছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে হেফাজতে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে।”