Published : 12 Mar 2024, 07:52 PM
রোজার প্রথম দিন সকাল সাড়ে ৮টার অফিস ধরতে সাড়ে ৭টাতেই রওনা হয়েছিলেন মরিয়ম নেসা। ধরেই নিয়েছিলেন যানজট হবে, কিন্তু শ্যামলী থেকে গুলশান যেতে লেগেছে মোটে ২০ মিনিট।
তবে ফেরার পথে পরিস্থিতি পাল্টে যায়, পড়তে হয় যানজটের কবলে। ঠিক ৩টা ১০ মিনিটে উবারের কারে অফিস থেকে বের হয়ে শ্যামলী পৌঁছেছেন ৪টা ২০ মিনিটে।
মরিয়ম বললেন, “প্রায় সবগুলো মোড়েই যানজটে পড়তে হয়েছে। গাড়ি চলেছেও খুব ধীরে। এর চেয়ে হেঁটেই আগে যাওয়া যেত।”
স্কুল খোলা নাকি বন্ধ-এই বিভ্রান্তি থাকায় এদিন রাজধানীর সকালের সড়কগুলো বেশ ফাঁকাই ছিল। এমনিতে অফিস সময়ে যে যানজট হয়, সেটাও প্রথম রোজায় ছিল না। তবে বিকালে অফিস শেষ হওয়ার পর চরম যানজট দেখা দেয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাফিজুর রহমান বলেন, “সকালে তো একদমই ফাঁকা ছিল। বিকালে সব অফিস একসঙ্গে ছুটি হওয়ার পর সব গাড়ি একসাথে রাস্তায় নামলে বিপত্তি তৈরি হয়। তবে পুলিশের সব কর্মকর্তারাই রাস্তায় নেমে তদারক করছেন।”
বিকাল ৫টায় এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “সর্বোচ্চ আধ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।”
সকালে ফাঁকা রাস্তায় মিরপুর থেকে ২৫ মিনিটেই ভাড়ার মোটরসাইকেলে বারিধারার অফিসে পৌঁছান ইকবাল মাহমুদ। কিন্তু বিকাল সোয়া ৪টার দিকে অফিস থেকে বের হয়েই পড়েন যানজটের কবলে।
ইকবালের অভিজ্ঞতায়, “অফিস থেকে বের হয়ে একটা ‘ঢাকা চাকা’ বাসে উঠলাম। এক থেকে দেড় মিনিট চলার পরেই কানাডিয়ান হাই কমিশনের সামনে বাসটা সেই যে যানজটে পড়লো- একেবারে ২৫ মিনিট সেখানেই। বিরক্ত হয়ে এক পর্যায়ে বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করি।”
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে অফিস শেষ হওয়ার পরপরই রাজধানীর বনানী থেকে মহাখালী, সাতরাস্তা, মগবাজারগামী সড়কে যানবাহনের ভিড় বাড়তে থাকে।
বেসরকারি চাকুরে এহসানুল ইসলাম জানালেন, কাকলী মোড়ের সিগন্যালের জন্য গন্তব্যে পৌঁছাতে এদিন বেশি সময় লেগেছে তার।
তবে রোজার কারণে অফিস ছুটির সময়ে যে যানজট হওয়ার আশঙ্কা ছিল, তেমনটা হয়নি বলে মনে করেন এহসানুল।
“অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে রাস্তায় গাড়ি অনেক বেশি। যানবাহনের চাপ ছিল। কিন্তু অনেকক্ষণ কোথাও আটকে থাকতে হয়নি। বনানী থেকে গুলশানে পৌঁছাতে অন্যান্য দিনের তুলনায় ১৫ মিনিট সময় বেশি লেগেছে।”
মগবাজারের বাসিন্দা চৈতি ইসলাম বলেন, “মহাখালী থেকে ৩টায় গাড়িতে উঠে বিকাল সাড়ে ৪টায়ও মগবাজার পৌঁছাতে পারিনি। মহাখালী টার্মিনালে অনেক যানজট ছিল। তারপর গাড়িও অনেক বেশি। আস্তে আস্তে যাচ্ছে গাড়িগুলো।”
আজিমপুর থেকে আশুলিয়া পথে চলাচলকারী বিকাশ পরিবহন বাসের কন্ডাকটর হাবুল দুপুর আড়াইটার দিকে মহাখালিতে যাত্রী নামানোর সময় বললেন, “আজ সকাল থেকে জ্যাম পাই নাই।”
গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পথে চলাচলকারী ৮ নম্বর বাসের চালক ইসমাইল হোসেন বললেন, “সকালে জ্যামও আছিল না, যাত্রীও কম পাইছি।”
যাত্রী কম থাকায় রাজধানীর চিটাগাং রোড, রায়েরবাগ, যাত্রাবাড়ী ও মতিঝিল রুটে গণপরিবহন চলাচল অনেক কম ছিল। অফিসগামী ও শিক্ষার্থীদের চলাচলের অন্যতম এই রুটে বন্ধের দিন ছাড়া অন্যান্য সময়ে সকাল থেকেই যানজট থাকে।
মঙ্গলবার সেই ভিড় দেখা যায়নি; সড়ক ছিল অনেকটাই ফাঁকা। গণপরিবহনের সংখ্যাও কম থাকায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে টোল দিতে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয়নি।
এই পথে চলাচলকারী মদনপুর-মতিঝিল রুটের হিমালয় পরিবহনের চালক সেলিম সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘চিটাগাং চৌরাস্তার মোড়ে একটা সিগন্যাল পাইছি। তাছাড়া অফিস টাইমেও আজ ভিড় নাই। গাড়িও প্যাসেঞ্জারও কম। পহেলা রমজানতো, তাই অনেকেই বাহির হয় নাই।’’
সাধারণ সময়ে মাতুয়াইল থেকে গুলিস্তান আসতে ২৫ থেকে ৩৫ মিনিট সময় লাগে ভিড় ঠেলে আসতে। তবে প্রথম রোজায় ১২ মিনিটের মতো লেগেছে বলে জানালেন তিনি।
সকালে মেট্রোতেও যাত্রী কম
অফিস টাইমে মেট্রোরেলের চেনা ছন্দ থাকলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর চাপ কমেছে বলেছে জানিয়েছেন মিরপুর-১১ স্টেশনের কাস্টমার রিলেশন অ্যাসিস্টেন্ট।
নাম প্রকাশ না করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল-সন্ধ্যা দুই শিফটে মেট্রোরেলের হিসার রাখা হয়। দুই শিফটেই মিরপুর-১১ স্টেশন থেকে সাধারণত একক যাত্রার ১৭০০টি টিকেট বিক্রি হয়৷
“তবে যা যাত্রী দেখছি, দুপুর ২টা পর্যন্ত অন্যদিনের চেয়ে ৫০০ টিকেট কম বিক্রি হওয়ার ধারণা করছি৷ ইভনিংয়ে কী হবে, বোঝা যাচ্ছে না৷"
রোজার কারণে মানুষ বাইরে কম বের হচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি৷
টিকেট কাউন্টারে তুলনামূলক কম যাত্রী দেখা যায়৷ ফলে খানিক অবসর পেয়েছিলেন টিকেট বিক্রেতাও৷ অথচ অন্যদিন একের পর এক টিকেট কেটে যেতে হয় তাকে৷
কাউন্টারে দেখা মিলল মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইলমে ইলামী রাইয়ানের। তিনি মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী, যাবেন শেওড়াপাড়া৷
রাইয়ান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে লোক অনেক কম। রোজা-রমজানের দিন তো, লোকজন বাসায় রেস্ট নিচ্ছে৷"
তবে আগারগাঁও স্টেশনের টিকেট কাউন্টারের সামনে মিরপুর-১১ স্টেশনের চেয়ে চাপ একটু বেশি ছিল৷
সেখানে পাওয়া যায় মোফাজ্জল নামের একজনকে৷ তিনি যাবেন মতিঝিল৷
মোফাজ্জল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিয়মিত যাই মেট্রোরেলে৷ আজকের মত ফাঁকা কোনোদিন পাইনি৷ এই টাইমে প্ল্যাটফর্ম পুরো ভরা থাকে৷ সে হিসাবে আজকে তো লোক কমই৷"