Published : 04 Jun 2025, 10:55 AM
ব্যক্তি পর্যায়ে স্বর্ণ আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এখন থেকে বছরে একবারের বেশি স্বর্ণের বার আমদানি বন্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বর্তমানে নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্ক-কর পরিশোধের মাধ্যমে একজন যাত্রী বছরে যতবার ইচ্ছে ততবার ১১৭ গ্রাম বা ১০ ভরি স্বর্ণের বার আনতে পারেন।
নতুন বিধিমালা অনুযায়ী একজন যাত্রী বছরে সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম বা ১০ ভরি স্বর্ণের বার বা স্বর্ণ পিণ্ড একবার আনতে পারবেন।
নতুন করে অপর্যটক যাত্রী ব্যাগেজ বিধিমালা জারি করে এ বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে। এটি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের ৩০ দিন পর কার্যকর হবে।
একই সঙ্গে স্বর্ণবার আনার ক্ষেত্রে শুল্ক-করও বাড়ানো হয়েছে।
বর্তমানে ১১৭ গ্রাম বা ১০ ভরি স্বর্ণের বার আনতে শুল্ক-করতে দিতে হয় ৪০ হাজার টাকা; নতুন বিধিমালা অনুযায়ী এটি দাঁড়াবে ৫০ হাজার ১৫৫ টাকা।
এর বেশি স্বর্ণ কেউ লুকিয়ে আনলে তা আইন অনুযায়ী বাজেয়াপ্ত করা হবে।
দেশে বাণিজ্যিকভাবে সোনা আমদানির অনুমতি থাকলেও এতে আগ্রহ দেখা যায় না সোনা ব্যবসায়ীদের; বরং চোরাচালান ও ব্যাগেজ বিধির অধীনেই আমদানি হয় বেশি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান বাজেটের আগে সোনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কয়েক দফা বসেছেন এবং বাণিজ্যিক আমদানি বাড়াতে বাধা কোথায় তা শুনেছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। মতবিনিময়ের জন্য সেখানে সংবাদকর্মীদেরও রাখা হয়।
বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দেশে সোনা চোরাচালানের ৯৯ শতাংশই ধরা পড়ে না। এর পেছনে সোনা ব্যবসায়ীরা রয়েছেন কি না, সেই ইঙ্গিতও তিনি দেন।
আব্দুর রহমান খান সেদিন বলেন, "এই চোরাচালান দেশের মানুষের জন্য ভালো নয়, কারো জন্যই ভালো নয়। তাহলে এই খারাপ কাজটা আমরা কেন করে যাচ্ছি?”
ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আর যদি বলেন এটা করছি না, তাহলে এগুলো আসে কোথা থেকে? আমরা ১০০টার মধ্যে একটা ধরতে পারি; নানা কারণে ৯৯টা ধরতে পারি না।
"আপনাদের সমস্যাগুলো কী, আমাদের জানান। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে নিতে চাই। বাজারে এত এত সোনা, অথচ সোনা আমদানি নেই কেন? এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। এর জবাবটা আমি খুঁজতে চাই।”
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহার হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে সেদিনই এটি পরিবর্তন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) তথ্য অনুযায়ী, বছরে ১৮ থেকে ২০ টন নতুন সোনার চাহিদা আছে বাংলাদেশে। অবশ্য স্বর্ণ নীতিমালা (২০১৮) অনুযায়ী, দেশে বছরে সোনার চাহিদা আরও বেশি। নীতিমালা অনুযায়ী এর পরিমাণ ১৮ থেকে ৩৬ টন।
আমদানির তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালে দেশে বৈধভাবে অন্তত ৫৪ টন সোনা এসেছিল।
তবে বৈশ্বিক বাজারের অস্থিতিশীলতার প্রভাব পড়েছে সোনা আমদানিতেও। সোনার উচ্চমূল্য আর ডলারের বিনিময় হারের দাপটের সঙ্গে বাংলাদেশের রিজার্ভে টান পড়তে থাকলে সোনা আমদানি কমে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে যেখানে ৪১ লাখ ৬৪ হাজার ডলারের সোনা আমদানি করা হয়েছিল, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আসে ৬ লাখ ৭০ হাজার ডলারের সোনা। এক বছরের মাথায় আমদানি কমেছে প্রায় ৮৪ শতাংশ।
এসব মূলত প্রাতিষ্ঠানিক আমদানির তথ্য। বিদেশ থেকে আসার সময় একজন যাত্রী যে পরিমাণ সোনা আনতে পারেন, তার শুল্ক যেমন কম; তেমনি বিনা শুল্কে আনা সোনার তথ্য নথিভুক্তও করে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
প্রাতিষ্ঠানিক আমদানি কমার তথ্য মেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের-এনবিআর পরিসংখ্যানেও। সেখানে দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯টি কোম্পানিকে সোনা আমদানির ডিলার হিসেবে লাইসেন্স দিলেও লাইসেন্স পাওয়ার পর ২০২০ থেকে ২০২৩ এর জুন পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৮২ লাখ ডলার ব্যয় করে সাতটি কোম্পানি ১৩৯ কেজি ৬৪০ গ্রাম ওজনের সোনার বার আমদানি করেছে। ১২টি কোম্পানি লাইসেন্স পেয়েও আমদানি করেনি।
পুরনো খবর