Published : 20 Jun 2025, 01:11 AM
যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) র্যাংকিংয়ে আগের চেয়ে ৩০ ধাপ পিছিয়ে এবারও ‘বাংলাদেশের সেরা’ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আগের মতই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। এই তিন বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে র্যাংকিংয়ে এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে।
‘কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০২৬’ প্রকাশিত হয় বৃহস্পতিবার, যেখানে দেড় হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের আছে ১৫টি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৫৮৪তম; গত বছর ছিল ৫৫৪ নম্বরে। ১০০ স্কোরের মধ্যে এবার বিশ্ববিদ্যালয়টির সামগ্রিক স্কোর ২৮ দশমিক ৭০।
আগেরবারের মতই কিউএস র্যাংকিংয়ে ৭৬১-৭৭০ নম্বরে রয়েছে বুয়েট। আর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির এবার ৫০ ধাপ পিছিয়ে ৯৫১-১০০০ নম্বরে রয়েছে। গতবার ছিল ৯০১-৯৫০ নম্বরে।
তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। টানা ১৪ বছর তালিকার শীর্ষে রয়েছে এমআইটি। ১০০ স্কোরের মধ্যে ১০০ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অপরদিকে র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে গবেষণা, গবেষণা বরাদ্দ ও পিএইচডি শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার কথা বলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের পরিচালক অধ্যাপক রেজাউল ইসলাম বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বরাদ্দ, তা দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটা অনুষদের যে বরাদ্দ তার চেয়ে কম। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ না, আমাদের গবেষণায় যে বরাদ্দ তা একদম তলানিতে। সেটা দিয়ে গবেষণা করে ভালো জার্নালে প্রকাশ করা ‘সো টাফ’। তারপরও যে আমাদের শিক্ষকরা কলাবরেট করে গবেষণা করছেন তা প্রশংসনীয়।”
তিনি বলেন, “আমাদের গবেষণায় যা বরাদ্দ ও যে মানের গবেষণা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের করা দরকার তা আমরা করতে পারছি না। দ্বিতীয়ত আমাদের সে গবেষণার পরিবেশ নেই। এগুলোর মধ্যেও যে আমরা এতদূর তা আমাদের জন্য অনেক।
“এবার কিউএস র্যাংকিংয়ে মালেশিয়ান কিছু ইউনিভার্সিটি এগিয়েছে। যার কারণ হচ্ছে তাদের গবেষণা বরাদ্দ। তাদের যে গবেষণা বরাদ্দ তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের চেয়ে বেশি। সেখানে আমরা একটু পিছিয়ে পড়ায় আমাদের অবস্থান ৩০ ধাপ পিছিয়েছে। তবে আমরা আমাদের পজিশনে আছি।”
বিদেশি শিক্ষার্থী, পিএইচডি শিক্ষার্থীর ঘাটতিও র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ার কারণ বলে মনে করেন তিনি।
“আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের ঘাটতি রয়েছে। ফলে সেটাও যেহেতু কিউএস র্যাকিংয়ের একটা কম্পোনেন্ট তার জন্যও আমরা পিছিয়ে পড়ছি। তবে এ বছর আমাদের বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে শুরু করেছে।”
র্যাংকিংয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (১০০১-১২০০), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (সবই ১২০১-১৪০০) নম্বরে স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি , ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (আইইউবি), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ের ১৪০০ এর পরে অবস্থান করছে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্যাংকিংয়ে আগের চেয়ে এগোনোর বিষয়ে অধ্যাপক রেজাউল ইসলাম বলেন, “এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা বরাদ্দ ভালো। দ্বিতীয়ত তারা শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ের যে কম্পোনেন্ট তা নিয়ে কাজ করে। উদাহারণ বললে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো ল্যাংগুয়েজ বিভাগ রয়েছে। যেখানে কোনো গবেষণা হয় না। তারপরও আমাদের সেগুলো রাখতে হচ্ছে। যার ফলে, আমাদের ক্ষেত্রটা বড়। যা কিউএস র্যাংকিংয়ে আসছে না। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফান্ড থাকায় পিএইচডি শিক্ষার্থী বেশি থাকে। ফলে তারা সে কম্পোনেন্টগুলোতে এগিয়ে যায়।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানন্নোয়নে উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, “আমরা দায়িত্ব পর বেশকিছু কোয়ালিটেটিভ ও ডকুমেন্টেশনসের জন্য কাজ করছি, যা হয়ত এখন দেখা যাচ্ছে না, তবে সামনে সেটা প্রকাশ পাবে।
“আমাদের অনেকগুলো ভালো গবেষণা হয়। তবে সেটা আমাদের ওয়েবসাইটে ডকুমেন্টেশনের অভাবে আমরা কিছুটা পিছিয়ে। তবে আমরা সেটার কাজ ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের যে গবেষণা কেন্দ্রগুলো রয়েছে, সেগুলোতে আরও কীভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে কলাবরেট করে গবেষণা কাজ বৃদ্ধির চেষ্টা করছি।”
তিনি বলেন, “গবেষণা, বাজেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মানসহ কিউএস র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ার বেশকিছু কারণ আছে। বর্তমানে যেভাবে কাজ চলছে সেভাবে চললে আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয় আরও ভালো করবে।”