Published : 07 Aug 2023, 11:00 PM
চার দিনের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর দুর্ভোগের পাশাপাশি পাহাড়ি নদীগুলোর পানি বেড়ে এবং খাল-জলাশয় উপচে চট্টগ্রামের ১৩টি উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
বৃষ্টির শুরু শুক্রবার থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকা যেমন ডুবছে, তেমনি রোববার নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চতুর্থ দিনের বর্ষণে সোমবার সকাল থেকে কয়েকটি উপজেলার মূল সড়কে এবং রেললাইনে পানি ওঠার খবর এসেছে।
সোমবার রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চন্দনাইশ কলেজ গেট এলাকা থেকে সাতকানিয়ার কেরানিহাট পর্যন্ত সড়কে পানি উঠে যায়। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার মধ্যে দক্ষিণের সাতকানিয়া, বাঁশখালী, পটিয়া ও আনোয়ারা এবং উত্তরের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকার পরিমাণ বেশি।
এছাড়া চন্দনাইশ, বোয়ালখালী ও সন্দ্বীপের কিছু এলাকার মানুষও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বেশির ভাগ উপজেলায় পানি বাড়ছে। এরমধ্যে ১০টি উপজেলায় পানি পরিমাণ বেশি।
তিনি বলনে, “দক্ষিণের উপজেলাগুলোতে পানি বাড়ছে মূলত পাহাড়ি সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বাড়াতে। উত্তরেও ভারি বৃষ্টির সাথে যোগ হয়েছে পাহাড়ি ঢল। বাড়ছে হালদা ও কর্ণফুলীর পানিও।”
উপজেলা ও নগরী মিলিয়ে সোমবার রাত পর্যন্ত ৭৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মোট প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এরমধ্যে নগরীর পরিবারের সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগই উপজেলাগুলোর মানুষ।”
সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ডের তথ্য দিয়েছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে। রোববার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় যা ছিল ৩০৬ মিলিমিটার।
বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে চট্টগ্রামে অতি ভারি বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবার সকাল থেকে নগরীতে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। পরদিন বিকাল থেকে সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও পটিয়াসহ কয়েকটি উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় পানি উঠতে শুরু করে, যা সোমবার কয়েকটি উপজেলার মূল সড়ককেও ডুবিয়ে দেয়।
অপরদিকে সোমবার সকালে ফতেয়াবাদ জংশনে রেললাইনের উপর পানি জমে যায়। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়মুখী ও দোহাজারীমুখী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের দিকে হাটহাজারী রোডের বিভিন্ন অংশে মূল সড়কে পানি উঠে যায়। এতে যানবাহান চলাচল ব্যাহত হয়।
হাটহাজারী উপজেলার ইসলামিয়া বাদামতল এলাকায় কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পানিতে পড়ে মারা যান হাটহাজারী সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিপা পালিত (১৯)।
হাটহাজারীর নন্দীরহাট, ধলই, মেখল, মার্দাশা, মন্দাকিনী, পূর্ব ফরহাদাবাদ কুয়াইশ-বুড়িশ্চর, গড়দুয়ারাসহ কয়েকটি এলাকায় পানি ওঠার খবর পাওয়া গেছে।
রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, সাতকানিয়া, বাঁশখালী ও পটিয়ায় পানিতে কৃষিজমি তলিয়ে গেছে। ক্ষেতে রোপা আমনের চারা থাকায় চিন্তায় পড়েছেন এসব এলাকার কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত তিন চারদিন ধরে অতি বৃষ্টিতে কিছু জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এবার জেলায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছে।
“বেশিরভাগ জমিতে ব্রি ৫১ ও ৫২ জাতের ধানের চারা লাগানো হয়েছে। এগুলো ১০-১৫ দিন পানির নিচে থাকলেও তেমন ক্ষতি হবে না। এখন পর্যন্ত ২৫০০ হেক্টরের মত জমি নিমজ্জিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।”
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গুমাই বিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় অবস্থিত। সেই বিলের পুরোটাই এখন পানির নিচে।
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা: প্রকল্প ঘিরেই ভোগান্তি শেষের আশা
জলাবদ্ধতায় সড়কে গাড়ি রেখে রিকশা নিয়ে বাসায় মেয়র
জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রামে এবার ‘ভুগতে হবে কম’, আশা প্রকল্প কর্মকর্তাদের
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের স্লুইস গেইটের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপজেলার ১৫ হাজার ৫৪৫ হেক্টর কৃষি জমির ৩৫০০ হেক্টর জমিতে ধানের চারা রোপন করা হয়েছিল। যার মধ্যে ১৯৫০ হেক্টর জমি এখন নিমজ্জিত। এরমধ্যে গুমাই বিলের প্রায় ১৭০০ হেক্টর জমিও আছে।
“পুরো গুমাই বিলের আয়তন ৩২০০ হেক্টরের মত। পুরোটাতে চারা রোপন হওয়ার আগেই বর্ষণ শুরু হয়। পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে বিল তলিয়েছে। কাটাখালী স্লুইস গেট পুরো খুলে দেওয়া হয়েছে। রোয়াজারহাট সেতুর অংশ দিয়েও পানি কর্ণফুলী নদীতে নামছে। আজ বিকেল থেকে বৃষ্টি কম আছে।”
বিলে জমা পানি দ্রুত নিষ্কাশন হলে ফলনে তেমন সমস্যা হবে না বলে মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
উত্তরের আরেক উপজেলা রাউজানের দক্ষিণ রাউজান অংশে উরকিরচর, নোয়াপাড়া, বাগোয়ান, গুজরা ও বিনাজুরি ইউনিয়নে ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, পুকুর ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।
দক্ষিণে উপজেলা সাতকানিয়া ও চন্দনাইশের উপর দিয়ে চলে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। সোমবার রাতে চন্দনাইশ কলেজ গেট এলাকা থেকে সাতকানিয়ার কেরানিহাট পর্যন্ত মহাসড়কে পানি উঠে যায়। এতে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
চারগুণ ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিতীয়বার উদ্বোধন হচ্ছে বারইপাড়া খাল খননের কাজ
বৃষ্টি আর জোয়ারে ডুবল চট্টগ্রাম
প্রবল বর্ষণ, টানা তৃতীয় দিন পানির নিচে চট্টগ্রাম
সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া, বাজালিয়া, চরতি ও আমিলাইষের বেশ কিছু এলাকার গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ বলেন, “চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পানি ওঠার বিষয়টি জানতে পেরেছি। ভাটা শুরু হলে পানি নামবে আশাকরি।
“ইতিমধ্যে উপজেলা ও নগরীর জন্য ৩৭০ মেট্রিক টন চাল, ৩৫০০ প্যাকেট বিস্কিট, ৩৫০০ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
নগরীতে মেয়রের ত্রাণ বিতরণ
টানা ভারি বর্ষণে নগরীর তলিয়ে যাওয়া বিভিন্ন এলাকার ৯ হাজার পরিবারকে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষ থেকে দুই দিন থেকে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।
সোম ও রোববার বিতরণের তথ্য সিটি করপোরেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এতে বলা হয়, মেয়রের পক্ষে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা পানিবন্দি মানুষদের হাতে খাবার পৌঁছে দেন।
সিটি মেয়র রেজাউল বলেন, “পানিবন্দি ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের সরিয়ে নিতে কার্যক্রম চলমান আছে।”