Published : 23 Oct 2024, 04:27 PM
জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকা ক্যাম্পেইন নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়াকেই ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ’ বলে মনে করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলেন তিনি বলেন, “চ্যালেঞ্জ হল সবার কাছে টিকার খবর পৌঁছানো। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাকসিন। ১০-১৪ বছর বয়সীদের জন্য সরকার ফ্রি এই ভ্যাকসিন দিচ্ছে। এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সার্টিফায়েড। এবং উৎপাদন থেকে টিকা দেওয়া পর্যন্ত একই তাপমাত্রায় রেখে সংরক্ষণ করা হয়।“
মাসব্যাপী এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার থেকে। বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৫ হাজার ৩২১ জন কিশোরী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে।
সিটি করপোরেশন এলাকার ১০ থেক ১৪ ব্ছর বয়সী সব কিশোরী যেন টিকার আওতায় আসে, কর্তৃপক্ষ সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানান তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ক্লাস টিচাররা যেন নিবন্ধন নিশ্চিত করেন। সিটি করপোরেশনের স্কুলগুলোর মধ্যে ২০ হাজার ছাত্রী টিকা পাবে। সেটা আজকের মধ্যে সবার নিবন্ধন করব। বাকিগুলোও আমরা নিশ্চিত করব। পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে।”
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ৪১টি ওয়ার্ডে মোট ১ লাখ ৩৬ কিশোরীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সিটি করপোরেশন। সে হিসেবে নিবন্ধন করেছে এক পঞ্চমাংশেরও কম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. সারোয়ার আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করা ২৫ হাজার ৩২১ জনের মধ্যে শিক্ষার্থী আছেন ২৪ হাজার ৬৬৯ জন, বাকিরা কমিউনিটির সদস্য।
এছাড়া জেলার ১৫টি উপজেলায় ৩ লাখ ৪৪ হাজার লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ইতিমধ্যে দেড় লাখের কিছু বেশি নিবন্ধন হয়েছে। জেলার তুলনায় নগরীর নিবন্ধন ‘অনেক কম হয়েছে’ বলে মনে করছেন এই চিকিৎসক।
সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফ এর প্রতিনিধি প্রসূন রায় বলেন, “এই টিকার প্রচার যখন শুরু হয়েছিল তখন বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তাই হয়ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে তথ্য যথাযথভাবে পৌঁছাতে পারেনি।
“যারা অনলাইন নিবন্ধন করতে পারবেন না, তাদের ম্যানুয়াল নিবন্ধন করে দেওয়া হবে। স্কুল বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের তালিকা দিলে তাদের নিবন্ধন আমরা করে দেব, এটাকে বলে হোয়াইট লিস্টিং।”
সিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “কোভিডের সময়ও কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল৷ এটার ক্ষেত্রে যেন কোনো গুজব না ছড়িয়ে পড়ে। এই টিকা শতভাগ নিরাপদ ও কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। আমাদের সব প্রস্তুতি আছে।
“শুক্রবার জুমার খুতবায় সব ইমাম সাহেবরা যেন টিকার বিষয়টি বলেন, সেই অনুরোধ করছি। আর মাদ্রাসাগুলোতেও আবার জানানো হবে।”
চট্টগ্রাম নগরীর ১১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিকা দেওয়া হবে জানিয়ে সিসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমাম হোসেন রানা এ বিষয়ে ইতিবাচক সচেতনতা সৃষ্টি করতে গণমাধ্যমের সহায়তা চান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, https://vaxepi.gov.bd/ এই ঠিকানায় গিয়ে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের জন্ম নিবন্ধনের তথ্য দিয়েই টিকার জন্য নিবন্ধন করা যাবে। পাশাপাশি গুগল প্লে স্টোরের VaxEPI অ্যাপ থেকেও নিবন্ধন করা যাবে।
নিবন্ধন শেষে একটি ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করে নিয়ে সেটি দেখিয়ে টিকা গ্রহণ করতে হবে।
গত বছর ঢাকা বিভাগে এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। চলতি বছর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃহস্পতিবার থেকে মাসব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।
এরমধ্যে শুরুর দুই সপ্তাহের ১০ দিন স্কুল পর্যায়ে এবং পরের দুই সপ্তাহের ৮ দিন কমিউনিটি পর্যায়ের কিশোরীদের টিকা দেওয়া হবে।
এইচপিভি ইনফরমেশন সেন্টারের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ নারীদের মধ্যে ১১ জন জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং প্রতি বছর এই রোগে প্রায় ৪৯৭১ জনের মৃত্যু হয়।
পুরনো খবর
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকা নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: চট্টগ্রাম স