Published : 06 Jun 2025, 09:22 PM
কোরবানির ঈদে প্রকৃতি ও পশুপাখির সান্নিধ্যে ঈদের আনন্দ রাঙাতে প্রস্তুত চট্টগ্রাম নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
ঈদে ভিড় থাকে ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার মত বিনোদনকেন্দ্রে। আর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের মধ্যে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত শহরের সাধারণ মানুষের অন্যতম প্রধান গন্তব্য ।
ফয়’স লেইক অ্যামিউজমেন্ট পার্কে শুক্রবার দেখা গেছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এদিনও কিছু দর্শনার্থীর দেখা মিলেছে সেখানে।
হ্রদ, পাহাড় আর বনে ঘেরা বিনোদনকেন্দ্রটি শহরের মধ্যেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানোর এক অনন্য স্থান। হ্রদের পাশের পাহাড়ে স্থাপিত বেইজ ক্যাম্পটি কয়েক বছর ধরেই দর্শনার্থী টানছে।
খোলা আকাশের নিচে আর্চারি, ক্লাইম্বিং ওয়াল, ট্রি টপ অ্যাক্টিিভটি কিংবা লেকে কায়াকিং ও বোট রাইড সেবা মেলে বেইজ ক্যাম্পে।
ফয়’স লেইক কমপ্লেক্সের পরিচালনাকারী কোম্পানি কনকর্ডের উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিশু কিশোর আর অ্যাডভেঞ্চার-প্রেমীদের প্রিয় স্থান এখন বেইজ ক্যাম্পে। এখানে নানা রকম অ্যাকটিভিটিজ আছে। আর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে দেখা মিলতে পারে হরিণ, বানর, সজারু ও বিভিন্ন রকম পাখির।”
ফয়’স লেইকে আসা শিশুদের জন্য আছে অনেক রকম রাইড। এর মধ্যে চলতি বছর ঈদ উল ফিতরে স্থাপন করা নতুন রাইডগুলো হল- স্কাই হুপার মিডি ড্যান্স, কিডল হুইলস, কিডল টাওয়ার, এয়ারবোন শট ও ফ্লাইং বাস।
এখানে আগে থেকেই আছে বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, পাইরেট শিপ, ফেরিস হুইল, শিশুদের হ্যাপি জাম্প, পনি অ্যাডভেঞ্চার, বেবি ড্রাগন, সার্কাস ট্রেন ও বাম্পার বোটসের মত রাইড।
ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কের আরেক আকর্ষণ ‘সি ওয়ার্ল্ড ওয়াটার পার্ক’। ইঞ্জিনচালিত বোটে বিস্তৃত হ্রদ পেরিয়ে যেতে হয় সেখানে। লেকের ওপারে ওয়াটার পার্কে আছে ওয়েভ পুল, মাল্টি স্লাইড ও ড্যানসিং জোনের মত রাইড।
সি ওয়ার্ল্ডের পাশেই ফয়’স লেক রিসোর্ট। আর দেশি-বিদেশি নানা স্বাদের খাবারের স্বাদ নেওয়া যায় পাশের লেক ভিউ রেস্টুরেন্টে।
বিশ্বজিৎ ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের দিন বেলা ২টা থেকেই খোলা থাকবে পার্ক। আর ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে সি ওয়ার্ল্ডের ওয়াটার পার্কে থাকছে ডিজে শো, ডান্স শো এবং ম্যাজিক শো।
“পার্কের সৌন্দর্য বাড়াতে পুরো কমপ্লেক্সে শেষবারের মত পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। নানা জায়গায় রংও করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে।”
এবার লম্বা ঈদের ছুটিতে প্রায় ৮-১০ দিন ধরে প্রতিদিন ৭-৮ হাজার মানুষের সমাগম হবে বলে ধারণা তার।
ফয়’স লেেইক এলাকার আরেক গন্তব্য চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম প্রধান। শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের সমাগম ঘটে সেখানে।
জেলা প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত এ চিড়িয়াখানার প্রধান আকর্ষণ বাঘ। এখানে বাঘের সংখ্যা ১৮টি, যার মধ্যে ৫টি বিরল সাদা বাঘ।
দুই বছর আগে আসা জলহস্তিও এই চিড়িয়াখানার একটা আকর্ষণ। দুটি সিংহ আছে; সেখানেও ভিড় থাকে মানুষের।
১০ একরের বেশি জমিতে প্রতিষ্ঠিত এ চিড়িয়াখানায় আছে এশিয় ভালুক, আফ্রিকান জেব্রা, কয়েজ প্রজাতির হরিণ, ময়ূর, উল্লুক, বানর, মেছো বিড়াল, চিতা বিড়াল, অজগর, বাঘডাশ, উঠ পাখি, ইমু, কুমির ও ঘোড়া। এখানে মোট ৬৮ প্রজাতির ৫২০টি পশু-পাখি আছে।
চিড়িয়াখানার শেষ প্রান্তে রঙিন সিঁড়িও দর্শনার্থীদের ‘ভালো লাগার’ একটা জায়গা। এর পাশে পাখির আবাসস্থল; যেখানে রয়েছে ম্যাকাও, বিভিন্ন রকম বক, টিয়াসহ নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখি।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাৎ হোসেন শুভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের এখানে আসা দর্শনার্থীদের প্রধান আকর্ষণ হলো সাদা বাঘ। ১৮টি বাঘ আছে আমাদের। শিশু-কিশোররা বাঘ দেখে খুব খুশি হয়। ভালুক, কুমির, জলহস্তি আর জেব্রার খাচা ঘিরে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে।
“আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রচুর মানুষ আসবে এবং সবাই খুশি মনে বাড়ি ফিরে যাবে- এমনভাবে সাজানো হয়েছে সব আয়োজন।”
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রবেশমূল্য ৭০টাকা। ঈদের ছুটিতে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানা খোলা থাকবে।
চট্টগ্রামে বিনোদনকেন্দ্র হাতেগোনা। তার মধ্যে বড় দুটি বিনোদনকেন্দ্র- আগ্রাবাদের কর্ণফুলী শিশু পার্ক ও চান্দগাঁওয়ের স্বাধীনতা কমপ্লেক্স পার্ক গত বছরের ৫ অগাস্টের পর থেকে বন্ধ। সেগুলো এখনো চালু হয়নি।
ইতোমধ্যে বিনোদন কেন্দ্র এবং পতেঙ্গা সৈকতের মত উন্মুক্ত স্থান ঘিরে ট্যুরিস্ট পুলিশের দল টহল দিতে শুরু করেছে।
জরুরি প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কন্ট্রোল ০১৩২০-০৫৭৯৯৮ এ যোগাযোগ করা যাবে। পাশাপাশি জাতীয় জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯ এর মাধ্যমেও সেবা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে সিএমপি।