Published : 13 May 2025, 11:30 PM
আটকে থাকা ঋণের কিস্তির অর্থ পেতে নানান শর্ত নিয়ে অনেক আলোচনার পর অবশেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দিক থেকে সুসংবাদ আসছে বলে জানতে পেরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তি করতে কিছুটা ছাড় দিতে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। এতে অংশ নিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের আমন্ত্রণের বার্তায় এর কারণ বলা হয়নি। মুখপাত্রও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের খবর আইএমএফ আটকে থাকা দুই কিস্তির অর্থছাড় করতে সম্মতি দিয়েছে। এ ঘোষণা দিতেই ডাকা হয়েছে এ সংবাদ সম্মেলন।
দুবাই সফরে থাকা গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বুধবার ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন।
আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি হিসাবে
১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের।
অনেক শর্তের মধ্যে এবার দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনার বড় অংশ আটকে ছিল মুদ্রার বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। এটি পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে না দিলেও সেখানে কিছুটা ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সবশেষে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে দেন দরবার আর আলোচনার পরই আইএমএফের ঋণ ছাড়ে ইতিবাচক সাড়া মেলে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইএমএফ বাকি দুই কিস্তি ছাড় করবে এ বিষয় নিয়ে গভর্নর বক্তব্য দেবেন। বাংলাদেশকে দুই কিস্তির অর্থ জুনে দিতে অআনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থাটি। তবে সংস্থাটির বোর্ড সভায় তা অনুমোদন হতে হবে।
তিনি বলেন, ২৩ মে ওই বোর্ড সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে 'ক্রলিং পেগ' এ এবার কিছুটা ছাড় দিতে রাজি হয়েছে। এ নিয়ে মতবিরোধ থাকায় এতদিন ঋণ ছাড়ের কিস্তি আটকে ছিল।
তিনি বলেন, এই ক্রলিং পেগের করিডর বাড়ানো হবে। তাতে বাজারে চাহিদা-সরবরাহের ভিত্তিতে ডলার দর আগের চেয়ে কিছুটা বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে। তবে কতটা বাড়নো হবে সেই তথ্য তিনি না দিয়ে বলেন, সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর তা তুলে ধরবেন।
বর্তমানে ক্রলিং পেগের মধ্যবর্তী দর ১১৯ টাকা। এর সঙ্গে আরো আড়াই শতাংশ দাম কমতে বা বাড়তে পারে। তাতে বর্তমানে ডলারের সর্বোচ্চ দর দাঁড়ায় ১২৩ টাকা।
চলতি মাসে ঋণের বাকি দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করার আগে বাংলাদেশ সফর করে পর্যালোচনা শেষ করলেও সিদ্ধান্ত জানায়নি ক্রিস পাপাজর্জির নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলটি। আবার তারা আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিল।
দুই সপ্তাহের পর্যালোচনা শেষে ১৮ এপ্রিল সংস্থাটির প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এ বিষয়ে আরও আলোচনা চলবে। জুনের শেষের দিকে দুটি কিস্তির অর্থ পেতে পারে বাংলাদেশ।
আইএমএফ মিশনপ্রধান পাপাজর্জি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা করা হবে।
পরে ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলা সেই বৈঠকের ফাঁকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সেখান থেকে ফিরে সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২৯ এপ্রিল সংস্থাটির সঙ্গে ঋণ নিয়ে দর কষাকষির কথা বলেন। আইএমএফের ঋণ না হলেও বাংলাদেশ চলতে পারবে বলে দাবি করেন তিনি।
পরে আবার ভার্চুয়ালি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাদা বৈঠক হয় আইএমএফ কর্মকর্তাদের।
আর্থিক সংকট সামাল দিতে ২০২২ সাল থেকে কয়েক দফা আলোচনা শেষে পরের ব্ছরের প্রথম দিকে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করে বাংলাদেশ।
ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। সে বছর ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার।
২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
তবে মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, বিদেশি মুদ্রার নিট সঞ্চিতি বা রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও রাজস্ব ব্যবস্থায় সংস্থার ঠিক করে দেওয়া শর্ত পরিপালন না করায় ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড় করছিল না আইএমএফ।