Published : 26 May 2025, 12:14 AM
হানাহানি, সংঘাত যেভাবে মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে, বিভ্রান্ত করছে এবং বহুরকমভাবে সহিংসতার জন্ম দিচ্ছে, তার বিরুদ্ধে মানুষকে জেগে উঠতে হলে নজরুল সাধনায় ব্রতী হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ছায়ানটের উপদেষ্টা ও গবেষক মফিদুল হক।
তিনি বলেছেন, “আমাদের দেশে, প্রতিবেশী দেশে, প্যালেস্টাইনসহ আরও নানা জায়গায় আমরা দেখি সভ্যতার যে অপমান ঘটছে এবং মানবতার যে পদদলন ঘটছে, সেখানে মানুষ যদি তার শক্তিতে রুখে দাঁড়াতে চায়, মানুষ যদি জেগে উঠতে চায়, তাহলে নজরুলকে আরও বড়ভাবে ফিরে পেতে হবে। বরণ করতে হবে।”
নজরুল সাধনায় ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মফিদুল হক বলেন, “কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণের মধ্যে দিয়ে যে শক্তিময়তা আমরা খুঁজে পাই, সেটা যেন সর্বজনে ব্যপ্ত হয়।”
রোববার রাজধানীর ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন মিলনায়তনে শুরু হয়েছে ছায়ানট আয়োজিত দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসব। দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই উৎসবের প্রথম দিনের অধিবেশনে বক্তব্য দেন মফিদুল হক।
‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমার’ সম্মেলক নৃত্যগীতে শুরু হয় প্রথম অধিবেশন। সম্মেলক গান, একক কণ্ঠে গান এবং নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশনায় মুখোরিত হয়ে ওঠে আয়োজন।
মফিদুল হক বলেন, “অসাম্প্রদায়িক, মুক্তসমাজের স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল। ‘বুদ্ধিরমুক্তি আন্দোলন’ এই স্বপ্নেরই একটা বীজ রোপন করেছিল একশ বছর আগে। এই স্বপ্ন কখনও মরে যাওয়ার নয়। এই স্বপ্ন আমরা নানাভাবে বহমান রাখব।
“যেমন, গানে তেমনি আমাদের জীবনাচারে। আমাদের সামাজিক জীবনে, সামষ্টিক জীবনে। নজরুলকে স্মরণের মধ্যে দিয়ে আমরা যেন এই প্রত্যয় খুঁজে পাই।”
অনুষ্ঠানে সম্মেলক কণ্ঠে শিল্পীরা শোনান ‘দেশ গৌড়-বিজয়ে দেবরাজ’। এছাড়া ইউনিভার্সিটি অব ডেভলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে শোনান ‘ত্রিংশ কোটি তব সন্তান’ এবং ‘বিজলী খেলে আকাশে কেন’ গান দুটো।
পরিবেশিত হয় গীতিআলেখ্য ‘কাবেরী তীরে’। একক কণ্ঠে ‘কাবেরী নদী জলে কে গো বালিকা’ পরিবেশন করেন মোহিত খান।
শ্রাবন্তী ধর শোনান ‘এসো চিরজনমের সাথী’। ঐশ্বর্য সমদ্দার শোনান ‘নীলাম্বরী শাড়ি পরি নীল যমুনায়’। ধ্রুব সরকার শোনান ‘রহি রহি কেন সে মুখ পড়ে’। মইদুল ইসলাম শোনান ‘নিশি রাতে রিম ঝিম বাদল নূপুর’।
বিভাস রঞ্জন মৈত্র শোনান ‘ওগো বৈশাখী ঝড়’। নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি ‘এখনো মেটেনি আশা’ গেয়ে শোনান। ‘শ্যাম-সুন্দর গিরিধারী’ গানটি শোনা রেজাউল করিম। প্রিয়ন্তি দেব শোনান ‘পরদেশী বঁধুয়া’।
অরূপ বিশ্বাস ‘সন্ধ্যা মালতী যাবে’, মৃদুলা সমদ্দার ‘ঝরা ফুল দরে কে অতিথি’, জয়েৎ কল্যাণ ‘বেনুকা ও কে বাজায়’ এং শুক্লা পাল সেতু ‘মোর প্রথম মনের মুকুল’ গেয়ে শোনন।
ছায়ানটের ছোটদের দলের পরিবেশনায় সম্মেলক কণ্ঠে ‘ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে’ গানের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অধিবেশন শেষ হয়।
এদিন সেতারে ছিলেন ফিরোজ খান। মন্দিরায় ছিলেন প্রদীপ কুমার রায়। কীবোর্ডে ছিলেন রবিন্স চৌধুরী। বাঁশিতে মামুনুর রশীদ এবং তবলায় ইফতেখার আলম ডলার ও স্বরূপ হোসেন ছিলেন।
সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। এই উৎসব সকলের জন্য উন্মুক্ত।