Published : 20 May 2025, 09:10 PM
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর এখন কোনো বৈধ পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় সংসদ নেই বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক বদিউর রহমান; যিনি উদীচীর সবশেষ কমিটির সভাপতি এবং তেইশতম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের চেয়ারম্যান।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক বদিউর বলেন, উদীচীর তেইশতম জাতীয় সম্মেলনের ‘অসমাপ্ত ও অসম্পূর্ণ কাউন্সিল’ অধিবেশন আগামী ২০ জুন অনুষ্ঠিত হবে।
বদিউর রহমান বলেন, “গত ৬- ৮ ফেব্রুয়ারি উদীচীর তেইশতম জাতীয় সম্মেলনের সমাপনী দিনের নির্বাচনি অধিবেশনে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। যার ফলে সম্মেলনের কাজ অসমাপ্ত ও অসম্পূর্ণ থেকে যায়।”
সম্মেলনে উপস্থিত দেশি-বিদেশি প্রতিনিধির মধ্যে প্রায় আড়াইশ প্রতিনিধি অসমাপ্ত ও অসম্পূর্ণ সম্মেলন গণতান্ত্রিকভাবে সমাপ্ত করার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন বলেও জানান অধ্যাপক বদিউর।
তিনি বলেন, “উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের অচলাবস্থা নিরসনের উদ্দেশ্যে আগামী ২০ জুন শুক্রবার সকাল ১০টায় ঢাকার ইনস্টিটিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি)-এর ষষ্ঠ তলায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ত্রয়োবিংশ জাতীয় সম্মেলনের অসমাপ্ত ও অসম্পূর্ণ নির্বাচনি অধিবেশন আহ্বান করা হয়েছে।”
উদীচীর জাতীয় সম্মেলনে উপস্থিত সকল প্রতিনিধিকে যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে তাদের মতামতের ভিত্তিতে স্বচ্ছ ও সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উদীচীর ঐক্যবদ্ধ ‘কেন্দ্রীয় সংসদ’ নির্বাচনে সহায়তা করার আহ্বান জানান বদিউর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যাখ্যান তপনের, অংশ নেবেন অমিত রঞ্জন
অধ্যাপক বদিউর রহমানের ডাকা এই সংবাদ সম্মেলন ‘উদীচীর সংবাদ সম্মেলন’ নয় বলে সোমবারই বলেছিলেন উদীচীর একাংশের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন।
তিনি বলেছিলেন, “অধ্যাপক বদিউর রহমানের এই সংবাদ সম্মেলন ঐক্যের বদলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে।”
মঙ্গলবার বদিউর রহমানের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন করা হলে জামসেদ আনোয়ার তপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উদীচীর পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় সংসদ আছে এবং আগামী শুক্রবার কমিটির সভায় এ ব্যাপারে আলোচনা করা হবে। অধ্যাপক বদিউরের সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে উদীচীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
তিনি বলেন, “যারা সেই সম্মেলন করেছে, তাদের ব্যাপারে উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।”
উদীচীর আরেক অংশের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, “আমি ঢাকার বাইরে আছি। অধ্যাপক বদিউর রহমান সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেছেন বলে শুনেছি। আমি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সম্মেলনে আমি অংশ নেব এবং উদীচীর সকল প্রতিনিধিদের সম্মেলনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাই। সবাই মিলে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, আমি তা মেনে নেব। ঐক্যবদ্ধ উদীচীই আগামীর সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে বলে আমার বিশ্বাস।”
বিভক্ত উদীচী
গত ৬-৮ ফেব্রুয়ারি তিন দিনব্যাপি ২৩তম জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করেছিল উদীচী। শিশু একাডেমিতে ৮ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের সমাপনী পর্বে কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনাকালে দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
একপক্ষ বর্তমান কমিটিকে রাখার পক্ষপাতি হলেও অপরপক্ষ সাধারণ সম্পাদক বদলে জোরালো অবস্থান নেয়। এতে দুটি পক্ষ তৈরি হয়ে যায় দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে।
এক পক্ষ বর্তমান সভাপতি বদিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে’কে পরের মেয়াদে দুই বছরের জন্য দায়িত্ব দিতে চাইলেও আরেক পক্ষ সাধারণ সম্পাদক পদে চান জামশেদ আনোয়ার তপনকে।
সম্মেলনের পর দুই পক্ষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আলাদা কমিটির তথ্য জানায়।
সবশেষ কমিটির প্রচার ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক কংকন নাগের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি এবং অমিত রঞ্জন দে’কে সাধারণ সম্পাদক বহাল রেখে নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হয়েছে।
অপরদিকে সবশেষ কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খানের সই করা আরেকটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ও জামসেদ আনোয়ার তপনকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় সংসদের নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
উভয় পক্ষই সভাপতি পদে অধ্যাপক বদিউর রহমানকে মেনে নেন এবং তারা দাবি করেন, তারা সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনেই কমিটি ঘোষণা করেছেন।
তবে সম্মেলনের পর থেকে উদীচীর কোনো কর্মসূচিতেই অধ্যাপক বদিউর রহমানকে আর দেখা যায় নি। ওই ঘটনার পর অধ্যাপক বদিউর একটি লিখিত বক্তব্যে বলেছিলেন, “কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় সংসদ সভায় এমন একটি বিষয় নির্বাচনি কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে উদীচীর কর্মীদের যথাযথ প্রতিফলন হয়নি বলে আমার বিশ্বাস।”
বিগত তিন মাসে বেশ কিছু কর্মসূচি আলাদা ব্যানারে আয়োজন করেছে উদীচীর দুই কমিটির লোকজন। এতে উদীচীর বিভক্তি সংস্কৃতি অঙ্গনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি বগুড়ায় উদীচীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে জাতীয় সংগীত পরিবেশনায় বাধা দেওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করা হয়। দুই কমিটিই আলাদা আয়োজনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।
আরও পড়ুন
কমিটি নিয়ে বিভক্তি, উদীচীর সভাপতি বদিউর, সাধারণ সম্পাদক কে?