Published : 29 Nov 2024, 02:22 PM
রাজধানী থেকে একদিনে যেমন বেড়িয়ে আসায় যায়, তেমনি দুতিন দিন থেকে আরাম করেও ঘুরে ফেরা যায় চা কন্যার দেশ থেকে।
তবে একদিনের ভ্রমণে সময় বাঁচাতে হলে শ্রীমঙ্গলের চা জাদুঘর ও মাগুরছড়া পুঞ্জি এড়ানোই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
কারণ শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ মহাসড়কের পাশে কমলগঞ্জ ইউনিয়নে অবস্থিত এই খাসিয়াদের গ্রামে বর্তমানে ঢোকা নিষেধ।
আর চা জাদুঘরে গিয়ে মনে হবে কেনো আসলাম! যে কয়েকটা কক্ষ নিয়ে জাদুঘরটি তৈরি করা হয়েছে সেখানে দেখা যাবে পুরানো্ আমলের ফ্রিজ, টেলিভিশন, ভাঙা পাখা, ট্রান টেবিল, ব্যবহৃত কলম আরও হাবিজাবি কিছু জিনিস।
চায়ের সাথে এসবের কী সম্পর্ক? জানতে চাইলে- রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত রক্ষীর উত্তর- “এগুলো সবই কোনো না কোনো চা বাগানে ছিল। সেখানকার ব্যবর্হত জিনিস এখানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা দূরে এই চা জাদুঘরে গিয়ে এসব দেখে হতাশ হওয়ার পাশাপাশি সময় নষ্ট করার চাইতে, বরং লাউয়াছড়াতে গিয়ে সময় বেশি কাটানো ভালো।
সেখানে বনের মাঝে ঘুরে ফিরে, ভেতরে খাসিয়াদের গ্রাম দেখে, জঙ্গলের মাঝ দিয়ে রেললাইনে ছবি তুলে, সুন্দর মতো চলে যাওয়া যায় মাধবপুর হ্রদের সৌন্দর্য দেখতে।
যাওয়ার সময় আঁকাবাঁকা রাস্তা, আশপাশে চা বাগানের দৃশ্য চোখের আরাম দিতে বাধ্য।
মাধবপুর লেকে আধা ঘণ্টা সময় কাটিয়ে পরের গন্তব্য হতে পারে লাল পাহাড়। সেখানে নূর জাহান টি গার্ডেন এবং রাবার বাগান দর্শন শেষে চলে যাওয়া যায় বধ্যভূমি’ ৭১ দেখতে।
শহরের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেড কোয়ার্টার সংলগ্ন ভুরভুরিয়া ছড়ার পাশে অবস্থিত বধ্যভূমি’৭১ পার্কটি। এখানে আছে ‘সীমান্ত ৭১ ফ্রেশ কর্নার’সহ মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’।
এছাড়াও ঘুরে আসায় যায় সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা আর চা গবেষণা ইন্সটিটিউট।
মনিপুরি কমিউনিটি ট্যুরিজম
একদিনের ভ্রমণ শেষে বিকালের দিকে চা কন্যার ভাস্কর্য দেখে ফিরে আসা যেতে পারে। অথবা একটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে থাকার জন্য বেছে নেওয়া যাতে পারে মুনিপুরিদের আতিথিয়তা।
শ্রীমঙ্গলের আদমপুর বাজার, কমলগঞ্জ গ্রামের ভানুবিল মাঝেরগাঁওয়ের মনিপুরিদের বেশ কয়েকটি বাড়ি নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে তাদের কমিউনিটি ট্যুরিজম বা সম্প্রদায়ভিত্তিক পর্যটন কার্যক্রম।
২০১৮ সাল থেকে নিরঞ্জন সিংহের উদ্যোগে আয়োজনের সূচনা। প্রায় প্রতিটি মনিপুরিদের বাসার সাথে দুটি করে অতিথিশালা রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে দুটি বিছানা। চারজন অনায়াসে থাকা যায়। ভাড়া ২ হাজার টাকা। আর পরিবারগুলোর সাথে সকালের নাস্তাসহ তিনবেলার খাবার খেতে চাইলে দিতে হবে আলাদা খরচ।
তবে খরচ যাই হোক, মনিপুরিদের আতিথিয়তায় মুগ্ধ হয়ে পরদিনও হয়ত ফিরতে মন চাইবে না। নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে ইটকাঠের শহরে ফিরে অন্তত চাঙাবোধ করতেই পারে কটাদিন।
প্রয়োজনীয় তথ্য
রাজধানীর সায়দাবাদ, কলাবাগান, জনপথ মোড় থেকে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার বাস মিলবে। শীতাতপ আর সাধারণ দুই ধরনের পরিবহনই রয়েছে। রাতে রওনা দিলে ভোরবেলাতে পৌঁছানো যাবে শ্রীমঙ্গলে। রেলগাড়িতে যেতে চাইলে ১০দিন আগে টিকিট কাটার চেষ্টা করতে হবে।
খাওয়ার জন্য শ্রীমঙ্গল শহরে পানসী বা পাঁচ ভাই রেস্তোরাঁ বেশি পরিচিত। সকালে শ্রীমঙ্গল নেমে এই রেস্তোরাঁগুলোতে নাস্তা করে মাধবপুর লেক, লাউয়াছড়া ঘুরে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে অন্যান্য জায়গাগুলো দেখতে যাওয়া যেতে পারে।
যাতায়াতের জন্য বেছে নেওয়া যায় সিএনজি। সারাদিনের জন্য ভাড়া নিলে খরচ পড়বে ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা। বসা যাবে অন্তত চারজন। লোকজন বেশি হলে খোলা জিপগাড়ি ভাড়া নেওয়া ভালো হলে। লাল রঙের একটা জিপগাড়িতে চা বাগানের মাঝের রাস্তা দিয়ে যেতে মন্দ লাগবে না।
সাতরঙা চা শ্রীমঙ্গলের প্রায় সব জায়গাতেই মিলবে। এই পানীয়র স্বাদ নিতে আলাদা করে কোথাও যাওয়ার আর প্রয়োজন পড়ে না।
চা গাছের সাথে ছবি তুলতে কোনো বাগানে ঢুকে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। চলতে ফিরতে রাস্তার পাশে বহু চা বাগান চোখে পড়বে। মনের সুখে ছবি তোলা যাবে সেসব জায়গায়।