Published : 12 May 2025, 03:16 PM
বর্তমান ব্যস্ত জীবনে মানসিক, শারীরিক ও আবেগজনিত চাপ নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। তবে জানেন কি, শরীরের কোষীয় স্তরে একটি নীরব শত্রু কাজ করছে, যার নাম ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ বা জারণজনিত চাপ!
এই চাপ শরীরের অভ্যন্তরে কোষগুলোর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা শক্তি হ্রাস, ক্লান্তি এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক মনোরোগ পরামর্শদাতা শেরিল গ্রসকপ এবং মনোবিজ্ঞানী ডা. হান্না হোমস এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
তারা ব্যাখ্যা করেছেন অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কীভাবে শরীর ও মনের ওপর প্রভাব ফেলে এবং এটি মোকাবেলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কী?
‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ বা জারণজনিত চাপ (অক্সিজেনের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়াজনিত) তখন ঘটে যখন শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যালস (অস্থিতিশীল অণু) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফ্রি র্যাডিকেলস দেহে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তৈরি হয়। যেমন- শ্বাসপ্রশ্বাস, হজম, ব্যায়াম ইত্যাদি।
তবে যখন এই অণুগুলো অতিরিক্ত পরিমাণে জমে যায় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাব হয়, তখন কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং স্নায়ুতন্ত্র অতিসংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
শেরিল গ্রসকপ রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেছেন, “যখন অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া এই ক্ষতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না, তখনই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দেখা দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “যারা পারফেকশনিস্টক (নিখুঁত ও নির্ভুল), অতিরিক্ত কাজ করেন, বিশৃঙ্খল পরিবেশে বড় হয়েছেন বা দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতায় ভুগছেন, তাদের মধ্যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের ঝুঁকি বেশি।”
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস মোকাবেলায় পাঁচটি কার্যকর উপায়
পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ
ডা. হান্না হোমস পরামর্শ দিয়েছেন, “রঙিন ফলমূল ও সবজি, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতিটি কামড়কে কল্পনা করতে হবে যেন এটি আপনার কোষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে জ্বালানি দিচ্ছে।”
এছাড়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলতে হবে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়াতে পারে।
মানসম্পন্ন ঘুম নিশ্চিত
ঘুমের সময় শরীরের স্নায়ুতন্ত্র মেরামত হয় এবং কোষীয় স্তরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়, যা অক্সিডেটিভ চাপ কমাতে সাহায্য করে।
ডা. হোমস বলেন, “গভীর ঘুমের সময় শরীর অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।”
নিয়মিত ও সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ
শেরিল গ্রসকপ বলেন, “যদি খাবার বাদ দেন বা অনিয়মিত খান, তবে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়, যা কর্টিসলের মাত্রা বাড়ায় এবং অক্সিডেটিভ চাপ বৃদ্ধি করে।”
তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে প্রোটিন, চর্বি ও শর্করা সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা জরুরি।
আবেগ প্রকাশে বাধা না দেওয়া
আবেগ চেপে রাখা শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শেরিল ব্যাখ্যা করেন, “যদি সারাদিন আবেগ চেপে রাখেন, তবে শরীর সেটা ধরে রাখে, যা প্রদাহ বাড়ায়।”
আবেগ প্রকাশের জন্য ডায়েরি লিখতে পারেন, বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে পারেন বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে পারেন।
পরিবেশের যত্ন নেওয়া
আশপাশের পরিবেশ ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।
শেরিলের ভাষায়, “দূষিত বাতাস, ধুলা, ফ্লুরোসেন্ট আলো, এমনকি সারাদিন ফোনের নোটিফিকেশন— সবকিছুই মিলে শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।”
ফ্লুরোসেন্ট আলো এমন এক ধরনের আলো যা একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়। এই আলো সাধারণত হালকা পিভি সলিড বা গ্যাসের মাধ্যমে প্রবর্তিত হয় এবং এতে একটি ফসফরাস কোটিং থাকে, যা গ্যাসের আলোর বিকিরণকে দৃশ্যমান আলোতে রূপান্তরিত করে। এই ধরনের আলো অনেক বেশি শক্তি সঞ্চয়কারী এবং দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে অনেক অফিস, স্কুল, হাসপাতাল এবং কমার্শিয়াল স্থানে ব্যবহৃত হয়।
তাই সম্ভব হলে জানালা খুলে দিন, এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে সীমা নির্ধারণ করার জরুরি।
অক্সিডেটিভ চাপ ধীরে ধীরে শরীর ও মনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তবে সচেতন জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, আবেগের সঠিক প্রকাশ এবং সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে এই চাপের প্রভাব কমানো সম্ভব।
আরও পড়ুন
চাপও হতে পারে জীবন বদলে দেওয়ার জ্বালানি