Published : 21 May 2025, 11:47 AM
মস্তিষ্কের রোগ যেমন উৎকণ্ঠা, অবসাদ ও উদ্বেগ— এসব থেকে রক্ষা করতে পারে নিয়মিত শরীরচর্চা।
সম্প্রতি চীনের শাংহাই শহরের হুয়াশান হাসপাতালের গবেষক ডা. জিয়া-ই উ'র নেতৃত্বে পরিচালিত প্রাথমিক গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে।
সিএনএন ডটকম-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ‘ফুডান ইউনিভার্সিটি’র অন্তর্গত এই হাসপাতালের গবেষকরা দেখিয়েছেন, ব্যায়ামের তীব্রতা যাই হোক না কেনো, নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে দারুণ ভূমিকা রাখে।
গবেষণাটি ৭৩ হজারের বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর করা হয়েছে, যাদের গড় বয়স ছিল ৫৬ বছর। এদের প্রত্যেকের শরীরের নড়াচড়া পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয় ‘অ্যাক্সেলেরোমিটার’ নামের যন্ত্র।
এর মাধ্যমে জানা যায়, যারা বেশি সময় শারীরিকভাবে সক্রিয় ছিলেন, তারা তুলনামূলকভাবে মস্তিষ্কজনিত বিভিন্ন রোগে কম আক্রান্ত হয়েছেন।
গবেষণার ফলাফলের গুরুত্ব
বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি প্রাথমিক প্রতিবেদন হলেও এর বিশাল নমুনা সংখ্যা ও তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতির নির্ভরযোগ্যতা একে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির ‘আইকান স্কুল অব মেডিসিন’-এর 'ব্রেইন অ্যান্ড বডি রিসার্চ সেন্টার'-এর পরিচালক ডা. স্কট রুসো বলেন, “এই ক্ষেত্রে এত পরিমাণ ডেটা আছে— যা আমাকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।”
যদিও তিনি এই গবেষণায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন না।
ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতার ধরন ও ব্যায়ামের ভূমিকা
ডা. রুসো জানান, “বর্তমানে গবেষকেরা মনে করছেন, বিষণ্ণতা একক কোনো রোগ নয় বরং বিভিন্ন উপধারার সমষ্টি। এর মধ্যে অন্যতম হল ‘ইমিউনোমেটাবলিক সাবটাইপ’।
প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বিষণ্ণতা-আক্রান্ত রোগী এই শ্রেণিতে পড়েন। এদের শরীরে প্রদাহ বেশি থাকে এবং বিপাকক্রিয়াও ভিন্নভাবে কাজ করে। ব্যায়াম এই প্রদাহ কমাতে এবং বিপাকক্রিয়া স্বাভাবিক করতে সাহায্য করতে পারে।
“এই বিশেষ ধরনের রোগীদের চিকিৎসায় ব্যায়াম কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে,” বলেন রুসো।
সক্রিয় থাকাই মূল কথা
এই গবেষণার পরিচালক ও গবেষক ডা জিয়া-ই উ বলেন, “প্রতিদিন এমন কার্যকলাপ করতে হবে যা ক্যালোরি পোড়ায়। যেমন- হাঁটা বা বাগান পরিচর্যা। এগুলোর মাধ্যমে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে।”
সবচেয়ে উৎসাহজনক দিক হল— গবেষণায় দেখা গেছে, যে কোনো মাত্রার শারীরিক কার্যকলাপই উপকারী।
“উপকার পেতে ঘাম ঝরানো ওয়ার্কআউটে যেতে হবে না। সামান্য থেকে মাঝারি মাত্রার কাজও ভালো প্রভাব ফেলে” বলেন এই গবেষক।
পাশাপাশি, নিজের কার্যকলাপ ‘ট্র্যাক’ করতে কোনো ‘স্মার্ট ডিভাইস’ ব্যবহার করাও কার্যকর হতে পারে বলে মন্তব্য করেন ডা. রুসো।
সক্রিয় জীবনের প্রযুক্তিগত সহায়ক
বর্তমানে অনেকেই ব্যায়াম ও শরীরচর্চা নিয়ে সচেতন হলেও সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নয়ন তেমন হয়নি।
“এটা এখনও একটা সচেতন সিদ্ধান্ত ও অভ্যাসের ব্যাপার। তবে এসব ডিজিটাল প্রযুক্তি, যেমন- স্মার্ট ঘড়ি বা অ্যাপসগুলো, ট্র্যাক ও মোটিভেশন দুটোই বাড়ায়,” বলেন ডা. রুসো।
এই চিকিৎসক নিজেই এমন একটি ‘ডিভাইস’ ব্যবহার করেন এবং প্রতিদিন ন্যূনতম লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সচেষ্ট থাকেন।
“আমি প্রতিদিন আমার ন্যূনতম ‘মুভ টার্গেট’ ঠিক করে দেই, আর যদি দেখি সেটা পূরণ হচ্ছে না, তাহলে ঘরের চারপাশে কয়েক রাউন্ড হেঁটে নেই।”
সপ্তাহে কতটা ব্যায়াম দরকার?
বর্তমান ‘ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি গাইডলাইন্স ফর আমেরিকানস’ অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম এবং অন্তত দুই দিন পেশি শক্তিশালী করার ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রুসোর মতে, “যদি সত্যি জনস্বাস্থ্যকে উন্নত করার ইচ্ছা থেকে তাহলে সচেতনভাবে সক্রিয় জীবন বেছে নিতে হবে। আর এই প্রযুক্তিগুলো ব্যক্তিকে নিজস্ব গতিতে সেটা করার সুযোগ দেয়।”
আরও পড়ুন
মাত্র ২০ মিনিটের ব্যায়ামে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য হবে ভালো