Published : 01 Jun 2025, 05:36 PM
ব্যস্ত জীবনে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া যেন এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।
অফিসের চাপ, ব্যক্তিগত দায়িত্ব আর সময়ের অভাবে অনেকেই নিয়মিত খাওয়ার কথা ভুলে যান, কিংবা বেছে নেন দ্রুত তৈরি হওয়া কিন্তু পুষ্টিহীন খাবার।
অথচ একটু পরিকল্পনা আর সচেতন থাকলেই ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও স্বাস্থ্যকর খাওয়া সম্ভব।
রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন পুষ্টিবিদের স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের কার্যকর উপায় নিয়ে দিয়েছেন নানান পরামর্শ।
খাবারের জন্য সময় নির্ধারণ
কাজের চাপে অনেকে বুঝতেই পারেন না যে দুপুর পেরিয়ে গেছে অথচ মুখে এক ফোঁটা খাবারও ওঠেনি! আবার ক্ষুধা লাগলেই হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তাই খেয়ে নেন কেউ কেউ। তবে এতে শরীরের ক্ষতি হয় দ্বিগুণ।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাইফিটনেসপাল’-এর প্রধান ও পুষ্টিবিদ মেলিসা জেগার বলেন, “যেমন-ভাবে কোথাও যেতে হলে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতে হয়, ঠিক তেমনভাবেই প্রতিদিন কী খাবেন তা আগেভাগে ঠিক করে রাখাও এক ধরনের রুটম্যাপ তৈরি করতে হবে।”
তবে কঠোর রুটিন মানার দরকার নেই। বরং নিজের প্রয়োজন বুঝে প্রতিদিনের কাজের মাঝে খাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘নেক্সএন্ডো ওয়েলনেস’-এর পুষ্টিবিদ গ্যাবি জিগলার বলেন, “দিনভর শরীরকে ঠিকভাবে শক্তি জোগানো কাজের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই খাওয়াকে গুরুত্ব দিতে হবে, যেন কাজের মাঝে চাপা না পড়ে যায়।”
দিনপঞ্জিতে খাবারের সময় লিখে রাখা বা স্মার্টফোনে অ্যালার্ম সেট করে এই অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।
খাবার প্রস্তুতির অভ্যাস গড়ে তোলা
খাবার কখন খাবেন সেটা ঠিক করার পরের ধাপ হল কী খাবেন, সেটা নির্ধারণ করা। আর এই কাজ সহজে করতে সাহায্য করে ‘মিল প্রেপ’ বা খাবার প্রস্তুতি।
মেলিসা জেগার বলেন, “বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রস্তুতি নিতে হবে, যা কঠিন নয়। অর্থাৎ, কেনাকাটা করার পরই সবজি ধুয়ে কেটে রাখা বা সারা সপ্তাহের নাস্তা আগেভাগে ভাগ করে রাখা প্রয়োজন। কাজগুলো সময় বাঁচাবে, খাবার নষ্ট হওয়া কমাবে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়াও সহজ করে দেবে।”
সপ্তাহের শুরুতে একদিন সময় নিয়ে সহজ রেসিপি তৈরি করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে। যেমন- ফ্রাইড রাইস বা চিংড়ি সবজি ভুনার মতো রেসিপি হতে পারে দ্রুত প্রস্তুত করার ভালো বিকল্প।
স্ন্যাকিং বা নাস্তাকে ভুলভাবে দেখবেন না
অনেকেই ভাবেন, ‘স্ন্যাকস খাওয়া’ মানেই স্বাস্থ্যহানিকর। তবে নতুন গবেষণা আর পুষ্টিবিদদের মতে, কাজের ফাঁকে সঠিক স্ন্যাকস বা নাস্তা গ্রহণ শরীরের জন্য ভালোই।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইট ক্লিন ব্রো’-এর পুষ্টিবিদ হিলারি সেসেরে বলেন, “খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে বরং শরীরের প্রয়োজন বুঝে খেতে হবে। নিয়ম করে না খেলেও চলবে। তবে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা শরীরের ক্ষতি করতে পারে।”
সঠিক উপাদান হিসেবে তিনি বলেন, “একটি স্বাস্থ্যকর নাস্তা হওয়া উচিত প্রোটিন, আঁশযুক্ত কার্বোহাইড্রেইট আর স্বাস্থ্যকর চর্বির সমন্বয়ে। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ও অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে।”
একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে- সেদ্ধ ডিম, মিশ্র বাদাম আর ছোলা, অলিভ অয়েল, রসুন, লেবুর রস এবং তিলবাটা দিয়ে তৈরি করা খাবার। এগুলো সহজে সঙ্গে রাখা যায় এবং দ্রুত শক্তি দেয়।
পরিকল্পনা করে বাজার
বাজার করা অনেক সময়ই ঝামেলার মনে হয়। বিশেষ করে যারা একা থাকেন বা সময় কম পান। তবে কিছু কৌশল জানা থাকলে দ্রুত ও কার্যকরভাবে বাজার করা সম্ভব।
মেলিসা জেগার বলেন, “যদি সপ্তাহে একবার বড় বাজার করা হয়, তাহলে এমন খাবার কিনতে হবে যেগুলো দিয়ে একাধিক পদ তৈরি করা যায়।”
আর যদি একসাথে অনেক কেনাকাটা করা সম্ভব না হয় তবে গ্যাবি জিগলার-এর পরামর্শ অনুযায়ী, “মোবাইলে একটি চলমান লিস্ট বা তালিকা রাখা উচিত। যখনই কিছু ফুরিয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে সেটা তালিকায় যোগ করতে হবে। এতে বাইরে থাকাকালীনও সহজে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ফেলা যাবে এবং কিছুই ভুলে যাওয়ার ভয় থাকবে না।”
এই অভ্যাস সময় বাঁচায় এবং বাজেটও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
নিজের ওপর বিশ্বাস
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নিজেকে দোষ না দিয়ে, ভুল হলেও আবার নতুন করে শুরু করার মানসিকতা রাখা।
ডায়েট সংক্রান্ত ভুল ধারণা ও 'পারফেকশনিজম' বা সবকিছু নিখুঁত করতে চাওয়ার মানসিক প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াই শ্রেয়।
হিলারি সেসেরে বলেন, “সুস্থ খাওয়া মানে একদম নির্ভুলভাবে সব নিয়ম মেনে চলা নয়। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিকতা থাকলেই তা ফল দেবে।”
তিনি আরও বলেন, “এত নিয়ম আর পরামর্শের ভিড়ে অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তাই প্রধান জিনিসগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। কমপ্লেক্স কার্ব বা জটিল শর্করা, লিন প্রোটিন বা অতিরিক্ত স্যাচুরেইটেড চর্বি না থাকা, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বা চর্বি আর প্রচুর শাকসবজি ও ফল খাদ্যাভ্যাসে রাখতে হবে।”
আরও পড়ুন