Published : 19 Jun 2025, 05:48 PM
দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রুটি পরিচিত খাবার। তবে প্রতিদিনের নাস্তা বা খাবারের টেবিলে রাখা সেই সাধারণ রুটির মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে পুষ্টির পার্থক্য।
বর্তমানে বিশেষ করে দুই ধরনের রুটি নিয়ে আলোচনা বেশি। যার একটি ‘সাওয়ার-ডো’ বা ময়দার খামিরে তৈরি রুটি। অন্যটি হল সম্পূর্ণ গমের আটা বা ‘হোল হুইট’ রুটি।
তবে প্রশ্ন হল এই দুইয়ের মধ্যে কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর?
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ মারিসা কার্প এবং ক্রিস্টেন লরেঞ্জ রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর বিকল্পটি নির্ভর করে ব্যক্তিগত চাহিদা ও রুচির ওপর। তাই দুই ধরনের রুটিই একটি সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।”
হোল হুইট রুটি কী?
হোল হুইট বা সম্পূর্ণ গমের রুটি তৈরি হয় এমন আটা দিয়ে, যেখানে গমের খোসা (ব্র্যান), অঙ্কুর (জার্ম) এবং মজ্জা (এন্ডোস্পার্ম) এই তিনটি অংশই থাকে।
ফলে এই রুটিতে গমের সব প্রাকৃতিক খাদ্য আঁশ ও পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে।
ক্রিস্টেন লরেঞ্জ জানান, “হোল হুইট রুটিতে রয়েছে একটি শক্ত কাঠামো, বাদামি স্বাদ এবং উচ্চমাত্রার খাদ্যগুণ। অপরদিকে, সাধারণ সাদা রুটি প্রস্তুত হয় কেবল গমের মজ্জা অংশ থেকে। ফলে এতে পুষ্টিগুণ অনেক কম থাকে।“
হোল হুইট রুটি বানাতে সাধারণত বাণিজ্যিক ইস্ট ব্যবহার করা হয়, ফলে এটি দ্রুত প্রস্তুত হয়।
পুষ্টিগুণে হোল হুইট রুটি
এই রুটি দেহে প্রয়োজনীয় খাদ্য আঁশের ভালো উৎস, যা হজমে সহায়তা করে এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধা কম রাখে। এটি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও কার্যকর হতে পারে বলে জানিয়েছেন মারিসা কার্প।
পাশাপাশি থাকে ভিটামিন বি, লৌহ, দস্তা ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন। যা শক্তি, রোগপ্রতিরোধ এবং বিপাকক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয়।
১০০ গ্রাম হোল হুইট রুটিতে থাকে ২৩৯ কিলোক্যালরি শক্তি, ৮.৩৩ গ্রাম প্রোটিন, ৪৯.১ গ্রাম শর্করা, ৪.২ গ্রাম খাদ্য আঁশ এবং ১.০৪ গ্রাম চর্বি। এতে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও দস্তার মতো উপাদানও থাকে।
সাওয়ার-ডো রুটি কী?
সাওয়ার-ডো রুটি তৈরি হয় ময়দা, পানি এবং লবণ দিয়ে। তবে এর বিশেষত্ব হল এটি বানাতে সাধারণভাবে ব্যবহৃত ইস্টের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক খামির, যাকে বলা হয় ‘স্টার্টার’। এই ‘স্টার্টার’ আসলে ময়দা ও পানির মিশ্রণ, যা পরিবেশ থেকে প্রাকৃতিকভাবে গঠিত ভালো ব্যাক্টেরিয়া ও বুনো ইস্ট দ্বারা গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত হয়।
মারিসা কার্প বলেন, “এই ধীর গাঁজনপ্রক্রিয়া রুটির স্বাদে একটি টক-মিষ্টি ঘ্রাণ ও চিবান যোগ্য গঠন এনে দেয়। যা একে অন্যান্য রুটির তুলনায় স্বতন্ত্র করে তোলে।”
পুষ্টিগুণে সাওয়ার-ডো রুটি
প্রাকৃতিক গাঁজন প্রক্রিয়ার কারণে সাওয়ার-ডো রুটি হজমে সহজ এবং রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
ক্রিস্টেন লরেঞ্জ বলেন, “গাঁজন প্রক্রিয়া গ্লুটেন এবং ফাইটিক অ্যাসিড ভেঙে দেয়, ফলে এটি অন্ত্রে সহজে হজম হয় এবং পুষ্টি উপাদান শোষণ সহজ হয়। পাশাপাশি, এতে গ্লাইসেমিক সূচক তুলনামূলক কম থাকে, অর্থাৎ এটি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে বাড়ে।”
‘ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)- এর তথ্য অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম সাওয়ার-ডো রুটিতে প্রায় ২৭২ কিলোক্যালরি শক্তি, ১০.৮ গ্রাম প্রোটিন, ৫১.৯ গ্রাম শর্করা, ২.২ গ্রাম খাদ্য আঁশ এবং ২.৪২ গ্রাম চর্বি থাকে।
এছাড়া এতে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও দস্তার মতো খনিজ উপাদান এবং অল্প পরিমাণে ভিটামিন বি৬, ফোলেইট এবং ভিটামিন এ থাকে।
কোন রুটি বেশি স্বাস্থ্যকর?
এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে ব্যক্তিগত পুষ্টিচাহিদা, স্বাদ এবং শারীরিক প্রতিক্রিয়ার ওপর।
মারিসা কার্প বলেন, “সবচেয়ে ভালো রুটি হল সেটাই- যা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের লক্ষ্য, রুচি এবং খাওয়ার পর দেহের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে মানানসই।”
ক্রিস্টেন লরেঞ্জ জানান, “যদি রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ বা হজমের সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তবে সাওয়ার-ডো রুটি হতে পারে উপযুক্ত পছন্দ। তবে খাদ্য আঁশ যদি মূল বিবেচ্য হয়, তবে হোল হুইট রুটি ভালো হবে।”
স্বাদও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। যদি সাওয়ার-ডো রুটির টক-মিষ্টি স্বাদ পছন্দ হয়, তাহলে সেটিই নিজের জন্য সেরা।
আর যদি বাদামি স্বাদের ‘হোল হুইট’ রুটি বেশি ভালো লাগে, তবে সেটিও এক উত্তম বিকল্প।
আরও পড়ুন