Published : 13 May 2025, 04:21 PM
ব্যস্ত জীবনে বন্ধুত্বকে অনেক সময়েই ‘সহজ বিষয়’ বলে ধরে নেওয়া হয়। বিশেষ করে পুরুষের সঙ্গে পুরুষের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে এই ধারণা আরও গভীরভাবে প্রোথিত।
তবে গবেষণা বলছে, নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে গভীর ও সন্তোষজনক বন্ধুত্বের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
নরওয়ের অসলো-ভিত্তিক সংস্থা ‘ব্রাদারস’–এর প্রতিষ্ঠাতা কিম ইভেনসেন সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “পুরুষ হিসেবে একরকম ‘অদৃশ্য নিয়ম’ মানতে হয়। যেমন— ‘ছেলেরা কাঁদে না’, ‘অন্য পুরুষকে ভালোবাসা বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা দুর্বলতা’— এই রকম নানান সামাজিক চাপ বন্ধুত্বকে পেছনে ঠেলে দেয়।”
বন্ধুত্ব নিয়ে কথা বলাও এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা
নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজির অধ্যাপক ডা. নিয়বি ওয়ে তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, কিশোর বয়সে ছেলেরা তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আবেগ প্রকাশ করে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায়।
তবে সেই কথা যদি জনসমক্ষে বলা হয়, তখনই ছেলেরা হাসে বা সেটা ‘মেয়ে সুলভ’ বলে লজ্জা দেয়।
এই বিষয়কে সামনে এনেই ইভেনসেন বললেন, “সেই অস্বস্তি কাটিয়ে বন্ধুকে বলতে হবে, ‘আমি তোকে শ্রদ্ধা করি, তোর সঙ্গে বন্ধুত্বটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’ আর শুরুটা এমন একটা কথাতেই হতে পারে।”
‘ব্রো কোড’ নয়, দরকার সত্যিকারের বন্ধন
ইভেনসেন তার বই ‘ব্রাদার্স: এভরি ম্যান নিডস স্ট্রং, অথেন্টিক ফ্রেন্ডশিপস’ এবং ‘দ্য রিয়েল ব্রো কোড’-এ লিখেছেন, পুরুষদের বন্ধুত্বের মানদণ্ড অনেক সময়েই ভুলভাবে গড়ে ওঠে। মাঝে মাঝে দেখা করা, একসঙ্গে ব্যায়াম করা বা এমনি-ই সময় কাটানো।
অথচ গভীর সম্পর্ক গড়তে দরকার বন্ধুসুলভ একান্ত সময়। যেখানের বন্ধুর সঙ্গে আস্থা ও আবেগের আদান-প্রদান হয়।
তিনি বলেন, “সবসময় যদি বন্ধুর সঙ্গে শুধু গ্রুপে দেখা হয়, তাহলে তার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। চেষ্টা করতে হবে একা একা বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটাতে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করতে।”
সংকীর্ণ পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বিপদ
ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া-এর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রবার্ট গার্ফিল্ড তার বই ‘ব্রেকিং দ্য মেল কোড: আনলকিং দ্য পাওয়ার অব ফ্রেন্ডশিপ’-এ লিখেছেন, “পুরুষরা এমনভাবে বড় হয় যেন তাদের শুধুমাত্র ‘পুরুষোচিত’ আবেগ প্রকাশ করাই উচিত। অন্য আবেগ, যেমন- সহানুভূতি, মমতা, ভালোবাসা বা কান্না— এসব যেন নিষিদ্ধ।”
ইভেনসেন বলেন, “এই মানসিকতা শুধু বন্ধুত্ব নয়, সম্পর্ক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বন্ধুদের সঙ্গে যদি প্রতিনিয়ত ‘পুরুষত্ব’ প্রমাণ করতে হয়, তাহলে সেই সম্পর্কগুলো গভীর হতে পারে না। বরং সেগুলো হয়ে ওঠে প্রতিযোগিতামূলক এবং ক্ষতিকর।”
সম্পর্ক থাকলেই বন্ধুত্বকে অবহেলা নয়
ইভেনসেনের মতে, “প্রেম বা দাম্পত্য সম্পর্ক শুরুর পর অনেক পুরুষ বন্ধুত্বকে অবহেলা করে। কারণ তারা ভাবে, প্রেমিকাই তার সব আবেগের চাহিদা পূরণ করবে। অথচ বাস্তব জীবনে এমন ধারণা সম্পর্কের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।”
তিনি বলেন, “বন্ধুত্বও ঠিক সম্পর্কের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন সম্পর্কে সাম্য বজায় রাখা উচিত। বরং বন্ধুকে সঙ্গীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন, যেন বন্ধুত্ব আর সম্পর্ক দুটা-ই টিকে থাকে।”
যেভাবে পরিবর্তন শুরু করা যায়
এই প্রতিবন্ধকতা কাটাতে হলে প্রথমে নিজের মধ্যেই পরিবর্তন আনতে হবে।
বন্ধুকে জানান অনুভবের কথা: “তোকে বন্ধু হিসেবে আমি অনেক মূল্য দিই”—এই কথাটা বলা হোক পরিবর্তনের শুরু।
দুই বন্ধু একসঙ্গে সময় কাটান: গ্রুপের বাইরে গিয়ে একা একা সময় কাটানো ভালো। এমন কিছু নিয়ে কথা বলতে হবে যা শুধু বন্ধুর ও নিজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ।
আবেগ প্রকাশে দ্বিধা নয়: বন্ধুর প্রতি সহানুভূতি, কৃতজ্ঞতা বা ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে। এতে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
প্রেম বা বৈবাহিক সম্পর্কের পাশাপাশি বন্ধুত্বও সময় দেওয়া: দুটো সম্পর্ক এবং দুটোই আলাদা বন্ধন। তাই সময় দেওয়া উচিত দুটোকেই।
আরও পড়ুন