Published : 18 Jun 2025, 03:50 PM
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার পরও জেল খাটতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী।
তিনি বলেছেন, “শপথ অনুষ্ঠান (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের) পর্যন্ত ডাক পেয়েছি, এখনো কার্ড পাই। আমি কীভাবে স্বৈরাচার হলাম, ফ্যাসিবাদ হলাম বলেন। এই সরকার কীভাবে আমাকে ফ্যাসিবাদ বানাল? অন্যায়ভাবে তারা আমাকে ধরছে। আমি ২০ দলের নেতা।
“তার পরও আমাকে অ্যারেস্ট করেছে। কত বড় স্বৈরাচার এই ইউনূস সরকার। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে মামলা করেছি। তার পরও আমাকে অ্যারেস্ট করেছে।”
বুধবার এক হত্যাচেষ্টার মামলায় তিন দিনের রিমান্ড আদেশ হওয়ার পর আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শওকত হাসান নিলু মারা যাওয়ার পর দলটি থেকে বেরিয়ে আসেন বাবুল সরদার চাখারী। তার নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই আত্মপ্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ পিপলস পার্টি’ (বিপিপি)। এই দলটি পরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেয়।
বাবুল সরদার চাখারী বলেন, “বিএনপির ২০ দলের নেতা আমি। তার পরও আমাকে জেল খাটতে হয় এই সরকারের আমলে। আমি আওয়ামী লীগ করিনি কখনেও। তার পরও আমার বিরুদ্ধে মামলা দিছে। এই সরকার স্বৈরাচারী আচরণ করছে। ড. ইউনূস ও আইন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছি।
“অন্যায়ভাবে আমাকে অত্যাচার করছে। এদেশে আইন বলতে কিছুই নেই। পুলিশ একটার পর একটা মামলা দেয়। জেলখানা থেকে বের হতে পারে না কেউ। এটা কোন ধরনের আইন, কোর্ট জামিন দেয়, আপনারা অ্যারেস্ট করেন।”
২০২৩ সালে পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে গণঅধিকার পরিষদ কর্মী বদরুল ইসলাম সায়মনকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন পল্টন থানার এসআই বিমান তরফদার। বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম এম মিজবাহ উর রহমানের আদালতে ওই আবেদনের ওপর শুনানি হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী এ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। বাবুল সরদার চাখারীর পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি নিজেই কথা বলেন।
বাবুল চাখারী আদালতকে বলেন, “আমি কখনও আওয়ামী লীগ করিনি। আমি ২০ দলে আছি। প্রসিকিউশনে ফারুক ভাই আছেন, তিনি জানেন। আমার বিরুদ্ধে চারটা হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। জামিন পেয়ে গেইট (কারাফটক) থেকে বের হব, তখন আটকে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “২০২১ সাল থেকে আমি ২০ দলে। কীভাবে আমি আওয়ামী লীগে গেলাম এবং ভাংচুর করলাম। হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আপনার কাছে বিচার চাই। কীভাবে ফ্যাসিবাদের সাথে যুক্ত হলাম? আপনার কাছে বিচার চাই।”
শুনানি শেষে আদালত বাবুল চাখারীর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পথে চিৎকার করে তিনি বলেন, “এই সরকার, স্বৈরাচার সরকার। আমি আন্দোলন করার পর যদি আমাকে জেল খাটতে হয়! ৮ মাস জেল খাটতেছি, এই সরকারের অত্যাচারে।”
স্বামীকে দেখতে আদালতে উপস্থিত হন তার স্ত্রী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাজমা আক্তার।
তিনি বলেন, “আমরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আন্দোলন করেছি। গত ১৮ নভেম্বর তাকে (বাবুল চাখারী) বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ দিল পুলিশ। কিন্তু তাকে চাঁদাবাজির মামলা দিল না কেন? তাকে এসব মামলায় (হত্যা মামলা) গ্রেপ্তার দেখানো হলো।”
নাজমা আক্তার বলেন, “গত ১৬ বছর আমরা কেউ ভোট দিতে পারিনি। তত্ত্বাবধাক সরকারের মাধ্যমে একটি নির্বাচনে সরকারকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করব। এই ১৬ বছর কি ফাও ফাও আন্দোলন করলাম?
“এক ফ্যাসিস্ট সরকার গেল, আরও রয়ে গেছে। আমি মনে করি, বর্তমানের আইন উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের দোসর। এখনো আওয়ামী লীগের অনেক দোসররা বসে আছে। তারা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
বাংলাদেশ পিপলস পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “একটা মামলায় জামিন পেলে আরেকটা মামলা দিয়ে আটকে দিচ্ছে। তারা চাচ্ছে কী? আমার দলের লোকজন প্রত্যেকে ভয়, আতংকে সময় পার করছে।
“কখন তাদের ধরে নিয়ে যায়। একেক জনকে ফোন দিয়ে বলে, দেখা করেন। এটা কোন ধরনের যড়যন্ত্র। আমরা জানতে চাই, তারা চাচ্ছে কী?”
বাবুলের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বিবরণ অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সরকারের গুম, খুন, নিপীড়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে পল্টনে সমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি। এতে গণঅধিকার পরিষদসহ অন্যান্য সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।
এজাহারে বলা হয়, ওই সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের কর্মী বদরুল ইসলাম সায়মনও অংশ নেন। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আসামিরা অতর্কিতভাবে হামলা করে। এ সময় আসামিদের ছোঁড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে সায়মন গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেন তিনি।
এ ঘটনায় গত ২৯ এপ্রিল সায়মন বাদী হয়ে রাজধানীর পল্টন মডেল থানা হত্যাচেষ্টা মামলা করেন, যাতে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ ২৪৫ জনকে আসামি করা হয়।