Published : 08 Feb 2023, 09:01 PM
দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সহিংসতা রোধে দলমত নির্বিশেষে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
বুধবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এ আহ্বান জানান তিনি ।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “বলার অপেক্ষা রাখে না, দুনীতি দেশের অন্যতম বড় সমস্যা। এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। সন্ত্রাস ও সহিংসতা দেশে একটা বড় ব্যাধি। এ সংগ্রামে সামিল হতে হবে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে, না হলে এগুলো দুর করা যাবে না।”
দুনীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের মাধ্যমে শোষণ মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবব্ধ হয়ে কাজ করতে রাষ্ট্রপতির আহ্বানের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
রওশন এরশাদ বলে, “প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিবেচনায় ইতিবাচক। মাথাপিছু জাতীয় আয় পূর্ববর্তী অর্থবছর থেকে ২৩৩ মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
“কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নে জিডিপি কতটা কার্যকর তা নিয়ে ইদানিং প্রশ্ন উঠেছে। শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়লেই দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইবে তা বলা যাবে না। সাধারণ মানুষের জীবনমানে কতটুকু উন্নতি হয়েছে তা দেখতে হবে। প্রবৃদ্ধি বিতর্কে না গিয়ে সরকারের উচিত হবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। তাহলে বৈষম্য কমবে, সাধারণ জনগণ উপকৃত হবে।”
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের রক্ষা করতে হলে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে কৃষক ন্যায্য মূল্য পায়, ভোক্তারাও সহনীয় দামে খাদ্যশস্য কিনতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে খদ্যশস্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।”
সম্প্রতি বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ‘খারাপ হওয়ার আশঙ্কা’ দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে রওশন এরশাদ বলেন, “বিদ্যুৎ সঙ্কটকালে সব মহলের আপত্তির পরেও সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ালে সব কিছুর খরচ বাড়বে। ফলে আরেক দফা বাড়বে দ্রব্যমূল্য। ক্ষতিগ্রস্ত হবে রপ্তানি খাত। এ সময় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম অপরিবর্তিত রাখা উচিত ছিল। আমি আশা করব, বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে সরকার।”
রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডের ফলে দেশের অর্থনীতি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য সব রাজনৈতিক দল প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি মনে করি, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও অবাধ।”
মোবাইল ফোনে আড়িপাতা
রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে মোবাইল ফোনে আড়িপাতার সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জিএম কাদের।
দেশি বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে যেটা শুনতে পাচ্ছি, একটি গোয়েন্দা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে। সেটা আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারছি, সংবাদপত্র থেকে।
“সেটা হল সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিবিদ, আইনজীবীর স্মার্টফোনে আড়িপাতা হচ্ছে। আর এতে ব্যবহৃত হচ্ছে ইসরাইলি কোম্পনি এনএসও গ্রুপের তৈরি করা স্পাইওয়্যার পেগাসাস।”
তিনি জানান, “সুনির্দষ্ট অভিযোগ ছাড়া বিশেষ ব্যক্তিদের টার্গট করে তাদের ফোনে আড়িপাতা অনৈতিক ও বেআইনি। এটা সংবিধানের লঙ্ঘন। এগুলো ব্যবহৃত হয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের জন্য।
“আমাদের কথা হল, এখানে নজরদারিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশেষ করে যারা সরকারবিরোধী রাজনীতি করেন, তাদের মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি অনুমোদন ব্যতিরেকে রেকর্ড করা হয় বলে শোনা যায়।”
“এসব কাজের যুক্তি ও উদ্দেশ্য কী হতে পারে?” - প্রশ্ন রাখেন তিনি।
জি এম কাদের বলেন, “আরেকটি উদ্দেশ্য হতে পারে- সব রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতে চায় সরকার, তার সুযোগ সৃষ্টি করা; রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর এ ধরনের আড়িপাতা, নজরদারি করে হয়রানি করা, বিরোধীদের কথা বলা বা স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা সৃষ্টি করা। কথা বলা, মতপ্রকাশের অধিকার সবার জন্মগত অধিকার।”
আরও খবর-
জেনে নিন আপনিও পেগাসাস স্পাইওয়্যারের শিকার কি না
পেগাসাস স্পাইওয়্যার কী, কীভাবে এটা ফোন হ্যাক করে?
পেগাসাস কেলেঙ্কারি: বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ফোনে আড়িপাতার ঘটনা ফাঁস