Published : 10 Apr 2024, 10:45 AM
‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ আজ খুশির ঈদ খুশি মনেই উদযাপন করছে মালয়েশিয়া প্রবাসীরা। এবছর দেশটিতে রোজা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের সঙ্গে। আমরা ভেবেছিলাম, হয়ত এবার বাংলাদেশের সঙ্গে একইদিনে ঈদ উদযাপন করব। কিন্তু না, বাংলাদেশের একদিন আগেই মালয়েশিয়ায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে আজ।
অর্থাৎ, স্বদেশে আপনজনসহ সবাইকে রোজায় রেখে আমরা খুশির ঈদের বার্তা দিয়ে দিলাম। এমনিতে রোজা ৩০টা হলে ঈদের প্রস্তুতি নিতে একটু বেশি সময় পাওয়া যায়। সেটা ভালো। রোজা ২৯ হলে একটু তাড়াহুড়ো হয় আয়োজনে। আরো একটা সুবিধা আছে এখানে। সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ ঈদের একদিন আগেই প্রবাসে থাকা আপনজন ও বন্ধুদের ঈদ মোবারক জানিয়ে নিতে পারেন যথেষ্ট সময় নিয়ে। এই তো আজ নানাভাবে দেশ থেকে প্রবাসীদের ঈদ মোবারক জানাচ্ছেন আমাদের আপনজন ও বন্ধুরা।
আমরা মালয়েশিয়া প্রবাসীরা আজ ও কাল দুদিন ঈদের শুভেচ্ছা জানাব দেশে রেখে আসা স্বজনদের। এ যেন দুদিন ঈদ উদযাপনের সুযোগ। দারুণ ব্যাপার। আজ বুধবার সকাল ৭টা থেকে হাজার হাজার বাংলাদেশি মুসল্লির আগমনে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে কুয়ালালামপুরের হাংতুয়ায় অবস্থিত মসজিদ আল বুখারি। পুরো মালয়েশিয়ায় একসঙ্গে এতো বাংলাদেশি আর কোনো মসজিদে পাওয়া যাবে না হয়ত। কুয়ালালামপুরে সড়কের আশপাশ ও যাতায়াত ব্যবস্থার অপূর্ব সমন্বয় থাকায় হাংতুয়া মসজিদ আল বুখারিতে বাংলাদেশিদের সমাগম হয় খুব বেশি।
অধিকাংশ বাংলাদেশি নানা রঙের পাঞ্জাবি পরে এসেছেন মসজিদে। মুখে আনন্দ, তবে অন্তরে সামান্য কষ্ট চেপে রেখেছে সবাই। বোঝাই যায় অন্তর্দৃষ্টিতে দেখলে। দেশের মাটির গন্ধ না পাওয়ায় যেন কষ্ট। চাপা কষ্ট। রঙিন পাঞ্জাবি আর রঙিন পোশাকে পাড়া প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে না পারার কষ্ট, মায়েদের হাতে তৈরি খাবারের স্বাদ না নিতে পারার কষ্ট।
এখানে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয় মসজিদ আল বুখারিতে। ঈদ জামাতে প্রায় ১০ হাজারের বেশি মুসল্লি অংশ নেন। এর প্রায় ৮০ ভাগ মুসল্লি বাংলাদেশি। বাকি ২০ ভাগ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ। ঈদ জামাত শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়ে চারদিকে দেখি অসংখ্য পরিচিত মানুষ। ভাই, এলাকাবাসী, দেশবাসী, একে একে অনেকের সঙ্গে কোলাকুলি ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে কেটে যায় ঘণ্টাখানেক সময়। পাশাপাশি বাংলাদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে ঈদের অনুভূতি প্রকাশ করতে থাকি আনন্দ উৎসবের আমেজে। কখনো একক, কখনো দলীয়ভাবে।
নামাজ শেষে বাসায় ফেরা। বাসায় বন্ধু-বান্ধব ছোট ভাইদের নিয়ে প্রথমে সেমাই খাওয়া, তারপর মাংস দিয়ে পেট ভরে সুগন্ধি চালের সাদা ভাত খাওয়া, সবাই মিলে আনন্দে। ফাঁকে ফাঁকে দেশে ভিডিও কলে কথা বলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় তো হচ্ছেই। পরিবারের ঈদ প্রস্তুতি জেনে নেওয়া, নানা পরামর্শ দেওয়াও চলছে। কারো কারো বাসায় হালিম, চটপটি, হালুয়া ও পায়েসসহ নানা পদের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে বন্ধুদের মাঝে। নানা চেষ্টায় ঈদের আমেজ সৃষ্টির প্রয়াস। আনন্দ করার চেষ্টা।
হাংতুয়া মসজিদ আল বুখারি ছাড়াও কুয়ালালামপুরের বিভিন্ন মসজিদে মূলত বাংলাদেশি, ইন্দোনেশীয় ও পাকিস্তানিসহ আরব দেশের মুসল্লির প্রাধান্য দেখা যায়। এমনকি জাতীয় মসজিদ নেগারায়ও। কারণ, মালয়েশিয়ানরা ফিরে গেছেন কাম্পুং-এ। ‘কাম্পুং’ মানে গ্রাম। এখানেও ঈদ মানে মূলত গ্রামে ফেরা। শেকড়ে ফেরা। জন্মস্থানে শুধু পরিবার নয়, পাড়াপড়শি ও শৈশবের বন্ধুরা আছে। তাদেরকে ছাড়া আসলেই ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণ হয় না। তাই তো বাংলাদেশের মতো মালয়েশিয়ানরাও ঈদে গ্রামে ফিরে যায়। এবারও ফিরে গেছে ফাঁকা করে দিয়ে সদা সরগরম কুয়ালালামপুর শহরকে।
এই ফাঁকা নগরেই প্রবাসীরা উদযাপন করছে ঈদ। স্বদেশ ও স্বজন ছেড়ে দূর পরবাসে ঈদ উদযাপনে আনন্দের আমেজ আনতে শত চেষ্টা করি আমরা। আনন্দ হয় বটে। উৎসব উৎসব ভাবও হয়। হচ্ছে। তবে জন্মভূমির মাটির গন্ধ ছাড়া কেমন জানি একটা শূন্যতা থেকেই যায়। সেই শূন্যতা কেবল মনের ভেতর থাকে, কিন্তু ঠোঁটে আসে না। এ যেন বাইরে আনন্দ, ভেতরে শূন্যতা।