Published : 07 Oct 2024, 06:45 PM
দুদিন পরই শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। বাগেরহাটে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমার রং তুলির আঁচড় শেষে চলছে সাজসজ্জার কাজ।
অসাম্প্রদায়িক দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে এবার শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে বলে আশা জেলা প্রশাসন ও আয়োজকদের। শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বাগেরহাটের সবগুলো মণ্ডপে বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে রোববার থেকেই মোতায়েন করা হয়েছে আনসার বাহিনীর সদস্যদের। এ বছর জেলার নয় উপজেলাতে ৫৯৭টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১৫৩টি মণ্ডপে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জেলা শহরের দশানী সার্বজনীন মন্দিরটি প্রায় শতবর্ষী। এই মন্দিরে প্রতিমার রং তুলির আঁচড় শেষে চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জার কাজ। রোববার থেকে মন্দিরের ফটকে নিরাপত্তা দিচ্ছেন আনসার সদস্যরা।
প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের সিকদারবাড়িতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হয়ে আসা দেশের সবচেয়ে বেশি প্রতিমার দুর্গাপূজাটি এবার স্বল্প পরিসরে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
সিকদার বাড়িতে সবশেষ ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০২৩ সালে ৫০১টি প্রতিমা নিয়ে পূজা হয়। এ বছর শুধু দুর্গার কাঠামোতেই পূজা হবে।
দশানী সার্বজনীন মন্দিরে পূজা নিয়ে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে একটা আগ্রহ দেখা যায়। এবারও তার কমতি হয়নি। প্রতিবছর দুর্গাপূজার অপেক্ষায় থাকেন অনেকেই।
স্থানীয় জুয়েল শেখ বলেন, “আমি মুসলমান, জন্মের পর থেকে দশানী সার্বজনীন পূজা মণ্ডপে আসি। নাড়ু বানানোর জন্য নারকেল দিতে আসছি। হিন্দু, মুসলমান বলে এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই মিলে আমরা দুর্গোৎসব পালন করে থাকি। আশা করছি, দীর্ঘদিনের সম্প্রীতি এখানে নষ্ট হবে না।”
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের বাগেরহাট জেলা শাখার সভাপতি প্রদীপ বসু সন্তু বলেন, “শান্তিপূর্ণ ও আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে এ বছর পূজা অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সবচেয়ে বড় যে পূজাটি সিকদারবাড়িতে হয়ে আসছিল, এ বছর সেটি সেভাবে হচ্ছে না। তবে বাগেরহাটের চিতলমারীতে বেশি প্রতিমা নিয়ে পূজা হচ্ছে।
“জেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা করতে প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার সভা হয়েছে। প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো নিয়মিত খোঁজ-খবর নিচ্ছে। সবাই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।”
এরই মধ্যে অনেক মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা দিচ্ছেন; পূজায় কোথাও ভয়-ভীতি আছে বলে মনে করছেন না এই নেতা।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. রাসেলুর রহমান বলেন, “শারদীয় দুর্গোৎসবকে প্রশাসন সব সময় গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হবে না। জেলার ৫৮৭টি পূজা মণ্ডপের মধ্যে ১৫৩টিকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব মণ্ডপে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে।
“এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ মোটরসাইকেল ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল চলছে। অধিক ঝুঁকিতে থাকা মণ্ডপে বাড়তি নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এরই মধ্যে আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। যৌথবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।”
সবার সহযোগিতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ঠিক রেখে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা শেষ করার আশা এই পুলিশ কর্মকর্তার।