Published : 05 Jun 2025, 03:59 PM
খুলনা নগরীর জোড়া গেইট কোরবানির পশুর হাটে রোববার থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির পশু আসতে শুরু করেছে। তবে এখনও কাঙ্ক্ষিত সংখ্যায় পশু বিক্রি হয়নি। বিক্রেতাদের ধারণা, শুক্রবার পর্যন্ত ক্রেতারা সময় নেবেন।
হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরে পশু রাখার জায়গার সংকট থাকায় অনেক ক্রেতা ঈদের আগের দুই দিনই পশু কেনাকাটায় বেশি আগ্রহী হন। ঈদের আগের দিন সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হবে এখানে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হাটের ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যোগাযোগ সুবিধার কারণে এ হাটে সবচেয়ে বেশি ক্রেতা সমাগম হয়। তবে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে খরচে সতর্কতা অবলম্বন করছেন অনেকেই। অন্য বছরের তুলনায় এখনো ক্রেতা কম দেখা যাচ্ছে।
হাট পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব খুলনা সিটি করপোরেশনের স্টেট অফিসার গাজী সালাউদ্দীন বলেন, “হাটটিতে মূল কেনাবেচা হয় ঈদের আগের দুই দিন ও ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত। এখন নদী ও সড়ক পথে পশু আসছে। আজকাল হাট জমজমাট হবে।”
হাটের নিরাপত্তাও অনেক জোরদার করা হয়েছে। যৌথ বাহিনীর সার্বক্ষণিক টহল রয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান সালাউদ্দীন।
হাটের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা গেছে, বুধবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত হাটে ২৪৬টি গরু, ১৪৯টি ছাগল এবং দুটি ভেড়া বিক্রি হয়েছে। হাসিল আদায় হয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৯৯১ টাকা।
গত বছর এই হাটে ছয় হাজার ২৭টি পশু বিক্রি হয়েছিল এবং রাজস্ব আদায় হয়েছিল দুই কোটি ২৫ লাখ ৭৮ হাজার ৫২৭ টাকা।
খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খুলনা সিটি করপোরেশন হাটটির আয়োজন করে ঈদের আগের সপ্তাহজুড়ে।
খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নূরুল্লাহ মো. আহসান জানান, বিভাগের ১০ জেলায় মোট ১৬৯টি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে স্থায়ী ১২০টি এবং অস্থায়ী ৪৯টি। এ হাটগুলোর মধ্যে খুলনায় রয়েছে ২২টি, বাগেরহাটে ৩৩টি, সাতক্ষীরায় ১৫টি, যশোরে ১৯টি, ঝিনাইদহে ২২টি, মাগুরায় ১৯টি, নড়াইলে আটটি, কুষ্টিয়ায় ১৭টি, চুয়াডাঙ্গায় আটটি এবং মেহেরপুরে ছয়টি।
বিভাগের ১০ জেলায় চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত পৌনে চার লাখ কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও বিভাগে চাহিদার তুলনায় কোরবানির পশুর সংখ্যা বেশি আছে। ফলে পশুর বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলেই ধারণা।
নড়াইলের কালিয়া থেকে বিক্রির জন্য গরু নিয়ে আসা খামারি জামির বিশ্বাস বলেন, “২৫ বছরের বেশি সময় ধরে এই হাটে আসি। এবার দুটি মাঝারি গরু এনেছি। তবে এখনও আশানুরূপ ক্রেতার দেখা মেলেনি।”
তবে শুক্রবারের মধ্যে সব গরু বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে বড় গরুর সংখ্যা খুব বেশি নেই। মাঝারি আকারের গরুরই আধিক্য। ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে গরুর চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি।
হাটে গরুর পাশাপাশি বিক্রির জন্য আনা হয়েছে ছাগল ও ভেড়া।
হাটটিতে পশু কিনতে আসা আনোয়ার হোসেন, রেজা আহমেদসহ কয়েকজন ক্রেতা বলেন, পশুর দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। তবে এ হাটের হাসিল বেশি বলে অভিযোগ করেন তারা।
অবশ্য হাট পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সালাউদ্দীন বলছিলেন, “হাটে এবার হাসিল কমানো হয়েছে। অন্য বছর পাঁচ শতাংশ হারে হাসিল নেওয়া হলেও এবার তা চার শতাংশ করা হয়েছে।”
২০ মণের ‘পিটবুল’
হাটে আসা একটি গরু সবার দৃষ্টি কেড়েছে। ২০ মণ ওজনের গরুটির নাম রাখা হয়েছে ‘পিটবুল’। হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটাই এখন পর্যন্ত এই হাটের সবচেয়ে বড় গরু।
ফ্রিজিয়ান জাতের এ গরুটি এসেছে বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার গাংনী থেকে। এই গরুর বয়স ৫ বছর ১০ দিন। দাম হাঁকা হচ্ছে ১২ লাখ টাকা।
গরুটির মালিক মো. শফিউল্লাহ বলেন, ওষুধ কোম্পানির চাকরি ছেড়ে এলাকায় মাছ আর গরুর খামার গড়েছেন তিনি। মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী (র্যাপার) ‘পিটবুল’ এর নামানুসারে তিনি এর নামকরণ করেছেন।
শফিউল্লাহ বলেন, মানুষ গরু দেখে যাচ্ছেন, ছবি তুলছেন; তবে এখনো কেউ দাম বলেননি। প্রকৃত ক্রেতা পেলে আলোচনা করে দাম চূড়ান্ত করার ইচ্ছা তার।
হাটের পাশেই পশুর খাদ্য ও আনুষঙ্গিক পণ্য নিয়ে বসেছেন মৌসুমী বিক্রেতারা। বিক্রি হচ্ছে গমের ভুষি, পাতার ভুসি, ধানের ভুসি, খইল, শুকনা খড় ও তাজা ঘাস। সঙ্গে রয়েছে চাটাই, টুকরি, গাছের গুঁড়ি, রঙিন মালা ইত্যাদি।