Published : 27 May 2025, 01:53 PM
ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে লালমনিরহাটে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। তবে হাটে গরু-ছাগলের সরবরাহ বাড়লেও ক্রেতার উপস্থিতি তুলনামূলক কম। আর এতে পশুর ন্যায্য দাম না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
তবে এর মধ্যে ভারতীয় গরু প্রবেশ করলে দাম আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন খামারিরা। এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় গরুর প্রবেশ ঠেকাতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।
লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় জানিয়েছে, এ বছর জেলায় মোট এক লাখ ৭১ হাজার ৭৭৭টি কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৬৩১টি।
শনিবার জেলা শহরের দুরাকুটি ও রোববার আদিতমারী উপজেলার কুষ্টারীরহাটে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি হাটেই গরু-ছাগলে একেবারে ঠাসা। তিল ধারণের জায়গা নেই। জেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী দুরাকুটি হাটে সকাল থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে গরু আসতে থাকে; যা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঠ ভরে যায়।
এই হাটে ভাটিবাড়ী থেকে আসা খামারি ও ব্যবসায়ী আলমগীর বলেন, “তিনটা বড় ফ্রিজিয়ান ষাঁড় নিয়ে এসেছি। প্রতিটির ওজন ৮ থেকে ১০ মণ; যা কিনেছি এক লাখ ৫০ থেকে ৬০ হাজারে। কিন্তু হাটে এসে দেখি দাম বলছে, এক লাখ ২০ থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। এই দামে বেচলে প্রতি গরুতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লস হবে।”
“একটি গরুকে খাওয়াতে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ হয়। যদি বিক্রি না হয়, তাহলে তো আরও লোকসান হবে।”
শেষ পর্যন্ত আশানুরূপ দাম না পেয়ে তিনটি গরুই বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান এই খামারি।
এই হাটে গরু কিনতে এসেছেন রহিম উদ্দিন। তিনি বলেন, “ঈদের তো আরও বেশ কিছুদিন বাকি। তাই হাট ঘুরে দাম দেখছি। এ ছাড়া বেচা কেনাও তেমন একটা নেই। আর খামারিরাও গরু ছাড়ছেন না।”
ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের খামারি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “একটা গরু মোটাতাজা করতে বছরের পর বছর পরিশ্রম করতে হয়। এখন খাবারের দামও অনেক বেশি। কিন্তু দাম ঠিকমত পাচ্ছি না।”
“গত বছর একটা উন্নত জাতের ষাঁড় দুই লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এবার তিনটি ষাঁড় প্রস্তুত করেও ভালো দাম পাচ্ছি না।”
রোববার আদিতমারী উপজেলার কুষ্টারীরহাট ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। আদিতমারী থেকে আসা ব্যবসায়ী মজিদুল বলেন, “প্রতিবছর ঈদের আগে গরু বিক্রি করে ভালো লাভ করতাম। এবার হাটে এসে দেখি গরু অনেক, কিন্তু ক্রেতা নেই। দামও নেই। তাই বাধ্য হয়ে গরু ফেরত নিয়ে যাচ্ছি।”
জেলার অন্য হাটগুলোর মধ্যে শিয়ালখোওয়া, বড়াবাড়ী, দইখাওয়া, চামটারহাটসহ অন্য হাটের খবর নিয়েও একই রকম খবর পাওয়া গেছে। হাটগুলোতে প্রচুর গরু উঠলেও তুলনামূলক ক্রেতার সংখ্যা ছিল অনেক কম।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অন্য বছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে পশু কিনে নিয়ে যেতেন। এবার সেই উপস্থিতি নেই বললেই চলে। ফলে সরবরাহ থাকলেও চাহিদা নেই; যার কারণে দামও পাওয়া যাচ্ছে না।
দুরাকুটি হাটের ইজারাদার হায়দার আলী বলেন, পাইকারদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। কয়েকটা হাট গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এ ছাড়া হাটে সঠিক নিয়মে টোল আদায় হচ্ছে। তবে আগের মত বাড়তি চাপ নেই।
ভারত থেকে অবৈধভাবে পশু আসা ঠেকাতে সীমান্তে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নে জবাবে লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, “সীমান্তে টহল বাড়ানো হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই যেন ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু কিংবা অন্য কিছু প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি তৎপর রয়েছে।”