Published : 03 Jun 2025, 04:32 PM
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ঝালকাঠি চার উপজেলায় ৪১টি পশুর হাট বসেছে। তবে ঈদ ঘনিয়ে এলেও জমে ওঠেনি হাটগুলো।
ব্যবসায়ী ও খামারীরা বলছেন, অল্পসংখ্যক ক্রেতা আসলেও ভালো দাম বলছেন না তারা। ক্রেতা কম থাকায় প্রত্যাশার চেয়ে কম দামে পশু বিক্রি করতে হচ্ছে। দামের আশায় এক হাটে না থেকে বিভিন্ন হাটে ঘুরছেন তারা।
তবে এ বছর জেলায় কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত পশু প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আসাদুজ্জামান।
জেলা প্রশাসনের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী এবার ঝালকাঠি পৌরসভায় দুটিসহ সদর উপজেলায় ছয়টি অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
নলছিটি পৌরসভায় একটিসহ নলছিটি উপজেলায় চারটি, রাজাপুর উপজেলায় সাতটি এবং কাঠালিয়া উপজেলায় চারটি অস্থায়ী হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এই ২১টি অস্থায়ী হাট ছাড়াও জেলায় আরও ২০টি স্থানে সারা বছরে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে হাট বসে। যেমন ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের শতবর্ষী সুগন্ধিয়া বাজারে হাট বসে সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার।
ঐতিহ্যবাহী এই হাটে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হয় ঝালকাঠি সদর উপজেলার নথুল্লাবাদ ইউনিয়নের খামারী ও ব্যবসায়ী সৈয়দ মনিরের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে এখনও অনেকে বাড়ি এসে পৌঁছাননি, অনেকে বেতন-বোনাস পাননি তাই এখনও বাজার জমেনি। তবে ঈদের দু-একদিন আগে ও শেষ মুহূর্তে ভালো দাম পাওয়া যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “এছাড়া এই বাজারে কোনও দিন কেনা-বেচায় ফি দিতে হতো না। এ বছর নতুন করে উপজেলা প্রশাসন এই বাজার ইজারা দিয়েছে। এখন প্রতিটি গরু বিক্রির জন্য ৫০০ টাকা করে দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে।”
এই খামারী বলেন, “শনিবার দুপুর পর্যন্ত হাটে ছিলাম, দুই-একজন ক্রেতা দাম জিজ্ঞেস করেছে। গরু বাঁধার জন্য সারি সারি বাঁশ বেঁধে রাখা হয়েছে; কিন্তু সবই খালি পড়ে আছে- বাজার জমছে না।”
এ বিষয়ে স্থানীয় জহিরুল ইসলাম বলেন, “ইজারা দেওয়ার পর এই বাজারে এখনও যাইনি। শুনেছি এক লাখ টাকায় গরু বিক্রি হলে ৩০০ টাকা ও এক লাখের উপরে বিক্রি হলে ৫০০ টাকা দিতে হয় ইজারাদারদের। ”
ঝালকাঠির আরেক স্থায়ী হাট রাজাপুর উপজেলার বাগরি বাজারে কথা হয় খামারী ও ব্যবসায়ী সুমনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “বৃষ্টির কারণে ক্রেতারা গরু আগে কিনে রাখতে চান না। এ কারণে বেচা-কেনা কম।”
তবে এ হাটের মোফাজ্জেল নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, হাটে নিয়ে আসা তার দুটি গরুই মোট ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ক্রেতা ফাইয়াজ ইফতেখার জানান, “মণ ছয়েক ওজনের গরু খুঁজছি, কিন্তু এখনও পাইনি। দেশি ও ক্রস জাতের ৫ থেকে সাড়ে ৫ মণের যা পাচ্ছি তার দাম চাইছে দুই লাখের বেশি। দেশি ৬ মণ ওজনের গরু দেড় লাখ টাকার মধ্যে নেয়ার চেষ্টা করব।”
এদিকে ঝালকাঠির শেখেরহাট ইউনিয়নের গরু খামারি মিনহাজের সঙ্গে কথা হয় তার খামারে।
তিনি বলেন, “কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারও তিনি দুটি ছোট ও দুটি বড় গরু প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে দুট তিন মণ ওজনের আর দুটি পাঁচ মণের। তবে কোনো হাটে এখনও ভালো দাম ওঠেনি, তাই বিক্রি করিনি।”
নলছিটি উপজেলার মগড় ইউনিয়নের খামারি আলী হোসেন বলেন, তিনি চারটি বড় গরু নিয়ে হাটে নিয়ে মাত্র একটি বিক্রি করতে পেরেছেন। এছাড়া সাড়ে ৫ মণের একটি গরুর দাম খামারে এসে দুই ক্রেতা এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা দাম বলে গেছেন।
তিনি বলেন, সব সময়ের মতো ঢাকা বা বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এখনও গ্রামে এসে পৌঁছায়নি। তারা ফিরলেই কোরবানির হাট-বাজার জমে উঠবে।
তবে এবার ভারতীয় গরু না আসায় ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন এই খামারি।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, এ বছর জেলায় ৩০ হাজার কোরবানির পশু প্রস্তুত আছে। ৪১টি হাটেই ভালো বেচাকেনা হবে এটা আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাটগুলো এখনও জমে না উঠলেও এ বছর ভারতীয় গরুর আমদানি না থাকায় শেষের দিকে ভালো বেচাকেনার আশা করা যাচ্ছে।
বাজারগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হবে বলে জানান এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।