Published : 05 Jun 2025, 04:27 PM
ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে পিরোজপুরের পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা সমাগম ততই বাড়ছে। জেলার প্রধান প্রধান হাটগুলোতে এরই মধ্যে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের গরুর ব্যাপক আমদানি ঘটলেও সেই অনুপাতে বিক্রি বাড়েনি।
বিক্রেতাদের ধারণা, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের’ কারণে বড় গরুর চাহিদা এমনিতেই কম। গড়পড়তা বিক্রি এখনো কম মনে হচ্ছে। এই অবস্থায় গরুর ন্যায্যমূল্য নিয়েও তাদের আশঙ্কা রয়েছে।
পিরোজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ছোট-বড় খামার থেকে কোরবানিযোগ্য ৪৬ হাজার ৯৩৫টি পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ষাঁড় ও গাভী মিলিয়ে রয়েছে মোট ২৬ হাজার ৯২০টি, মহিষ রয়েছে ২১০টি, ছাগল রয়েছে ১৭ হাজার ৭০০টি, ভেড়া রয়েছে ১৮ হাজার ৮৭টি এবং অন্যান্য কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে আটটি।
এ বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৪০ হাজার ২৫৭টি। জেলায় যে পরিমাণ কোরবানির পশু মজুদ আছে, তাতে প্রায় ২১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পিরোজপুর জেলার সাতটি উপজেলায় মোট ৫৫টি কোরবানির পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে পিরোজপুর পৌর হাট, সদর উপজেলার পাঁচপাড়ার হাট, ভান্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া হাট, নাজিরপুরের দীঘিরজান হাট সবচেয়ে বড়।
বৃহস্পতিবার হাটগুলোতে খবর নিয়ে জানা গেছে, হাটগুলোতে জনসমাগম হলেও ক্রেতা অনুপাতিক হারে কম। বিশেষ করে বড় পশুর ক্রেতা অনেকটাই কম। দেশি ছোট ও মাঝারি আকারের গরুই বেশি কিনছেন ক্রেতারা। হাটে ৩০-৪০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত গরু রয়েছে। এ ছাড়া প্রকারভেদে বিভিন্ন জাতের ছাগলও রয়েছে।
জেলার কয়েকজন খামারি জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর বড় গরুর চাহিদা ভাল ছিল। এসব গরু সাধারণত বড় ব্যবসায়ী বা রাজনৈতিক নেতারা কিনতেন। অনেকে একাধিক পশুও কোরবানি দিতেন। কিন্তু এ বছর অবস্থা ভিন্ন। অনেকেই আত্মগোপনে, অনেকে নামমাত্র মূল্যে গরু কোরবানি দিচ্ছেন। ফলে সেই টাকা গরুর বাজারে আসছে না। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাবটা বাজারে পড়বে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।
পাঁচপাড়া হাটের গরু ব্যবসায়ী এমরান সিকদার বলেন, “এ বছর অনেক ক্ষতি হবে। সঠিক দামে কেউ গরু বিক্রি করতে পারবে না। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কোরবানির দেওয়ার সংখ্যা কম হতে পারে। কারণ, যারা বেশি দামে আগে গরু কিনতেন তারা কেউ আসছেন না।”
‘রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবের’ কথা বলছিলেন দীঘিরজান হাটে গরু নিয়ে আসা খামারি লিটু শেখও। তার মন্তব্য, আগের যে শ্রেণিটা বেশি দামে গরু কিনত বা বেশি গরু কিনত, এবার তাদের হাঁকডাক নেই।
তিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন, “হাটে উপচেপড়া ভিড় থাকলেও গরুর ঠিকঠাক দাম পাচ্ছি না। দাম যাচাই করে চলে যাচ্ছেন অনেকে। এতদিন ধরে কষ্ট করে বড় করা পশুটি কম দামে বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার তুলনামূলক আমাদের লাভের পরিমাণটা কম হবে।”
ভান্ডারিয়া ধাওয়া পশুরহাটের গরু ব্যবসায়ী হারুন মিয়া বলেন, “হঠাৎ বৃষ্টির কারণে হাট থেকে ক্রেতারা চলে যায়। পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এবং হাটের পরিবেশ স্যাঁতস্যাঁতে হওয়ার কারণে ক্রেতারা বেশিক্ষণ হাটে থাকেন না।”
পিরোজপুর সদর উপজেলার পাঁচপাড়া বাজারের ইজারাদার আব্দুল হাই বলেন, “বৃহস্পতিবার অনেক গরু উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি, ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা ভালোভাবে তাদের কোরবানির পশু কিনবে এই হাট থেকে।”
নাজিরপুর উপজেলার দীঘিরজান স্থায়ী পশুর হাটের ইজারাদারের দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমান শরীফ বলেন, এ বছর এই হাটে প্রচুর পরিমাণ গরুর আমদানি হয়েছে। তবে ক্রেতা সমাগম কিছুটা কম। এ বছর কোরবানির পশুর দাম কম।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, তারা এখনো বাজার যাচাই করছেন। তাছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে বাইরে পশু রাখা নিরাপদ নয়। এ ছাড়া শহরে জায়গা সংকট তো আছেই। ঈদের আগের দিন কিনলে দাম আরও কিছুটা কম হবে।
ভান্ডারিয়ার ধাওয়া হাটে আসা সাইফ উদ্দিন মল্লিক বলেন, “গরুর দাম সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। নিজের জন্য দেশি জাতের মাঝারি সাইজের গরু কেনার ইচ্ছে আছে।”
নাজিরপুর দীঘিরজান হাটে আসা রুহুল আমীন সিপার নামে এক ক্রেতা বলেন, “গরুর দাম এ বছর কমই মনে হচ্ছে। গরু কিনে বাড়িতে এতদিন রাখা সম্ভব না, তাই ঈদের আগের দিন কিনব।”
এদিকে পিরোজপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে হাটগুলোতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা । জাল টাকা শনাক্ত করার জন্য হাটে রয়েছে মেশিন।
আর জেলা প্রাণিসম্পদের পক্ষ থেকে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হেলথ ক্যাম্প বসানো হয়েছে।