Published : 31 May 2025, 11:55 PM
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় মেঘনা নদীতে ট্রলার ডুবির ঘটনায় একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরের এ ঘটনায় পুলিশ ও আনসারের একজন করে সদস্যসহ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন পাঁচজন। বাকি তিনজন নারী ও শিশু।
ভাসানচর থেকে আসার পথে এ ট্রলার ডুবির ঘটনায় জীবিত উদ্ধার ৩৪ জনকে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ও সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনাস্থল থেকে নোয়াখালী যুব রেডক্রিসেন্টের বিভাগীয় প্রধান (প্রশাসন সংগঠন ও সদস্য সংগ্রহ বিভাগ) মো. জোবাইর হোসেন বলেন, যে ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়েছে তার নাম গিয়াস উদ্দিন। বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর। তিনি ডাক বিভাগে চাকরি করেন বলে তারা শুনতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, রাত পৌনে ৮টার দিকে উদ্ধার কাজ সমাপ্ত করে ফায়ার সার্ভিস ও যুব রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা ফিরে গেছেন।
সুবর্ণচর ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আরিফুল ইসলামও রাতের মত উদ্ধার কাজ শেষ হওয়ার কথা বলেছেন।
হাতিয়ার মেঘনা নদীতে ঝড়ো বাতাস ও ঢেউয়ের তোড়ে যাত্রীবাহী এ ট্রলার ডুবে যায়।
উপজেলার ভাসানচর থেকে তিন পুলিশ সদস্য, আনসার সদস্য, রোহিঙ্গা রোগী, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তাসহ ৩৯ জনকে নিয়ে ট্রলারটি রওনা হয়েছিল।
পরে হরণী ইউনিয়নের করিম বাজার ঘাটের কাছে ডুবারচর এলাকায় ট্রলারটি ডুবে যায় বলে হাতিয়া থানার ওসি এ কে এম আজমল হুদা জানান।
দুর্ঘটনার পর পরই নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ উদ্ধার কাজ শুরু করে।
উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের বরাতে ওসি আজমল বলেন, দুপুর ২টার দিকে ভাসানচর থেকে যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি হরণী ইউনিয়নের আলী বাজার ঘাটের উদ্দেশে যাত্রা করে। ভাসানচর থেকে সাত-আট কিলোমিটার দূরে গিয়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের ফলে মেঘনা নদী উত্তাল থাকায় টানা চার দিন হাতিয়ার সঙ্গে নৌ যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এ কারণে হাতিয়া সারাদেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল।
চার দিন পর শনিবার সকাল থেকে নোয়াখালীর মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে হাতিয়ায় নৌচলাচল স্বাভাবিক হয়। মূল ভূ-খণ্ড থেকে হাতিয়া যেতে নৌপথে প্রায় সোয়া ঘণ্টা সময় লাগে।
হাতিয়া থানার ওসি আজমল বলেন, তলা ফেটে ট্রলারটি ডুবে যায়। ওই সময় সেখানে থাকা অন্য ট্রলারের জেলেদের কয়েকজন যাত্রীকে জীবিত এবং একজনকে মৃত উদ্ধার করেন।
পরে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং যুব রেডক্রিসেন্ট সদস্যরা উদ্ধার কাজে যোগ দেন। রাত ৮টা পর্যন্ত দুই পুলিশ সদস্যসহ ৩৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে এক রোহীঙ্গা নারীকে আশংকাজনক অবস্থায় সুবর্নচর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান ওসি।
এছাড়া আরও ৮ জনকে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে।
তারা হলেন- পুলিশ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান (৫২) ও মো. ফরহাদ (২৫), ভাসানচর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ফারজানা বিনতে মমিন, রোহিঙ্গা নাগরিক ইসমত আরা (১৯), মোহাম্মদ তারেক (২৫), ফাতেমা খাতুন (৪৪), মোহাম্মদ করিম (১২) ও ভাসান চরের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. মোস্তাফিজর রহমান বলেন, হাসপাতালে ভর্তি আটজনের মধ্যে পুলিশের এক এসআই, এক কনস্টেবল, একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও চারজন রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে সাতজনের পানিতে ডোবার কারণে একটু বুকে ব্যাথা হচ্ছে। এছাড়া তাদের সার্বিক অবস্থা ভালো আছে। তবে সিনিয়র স্টাফ নার্স ফারজানা বিনতে মমিনের ফুসফুসে পানি চলে যাওয়ায় তাকে অক্সিজেন দিতে হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্য ফরহাদ বলেন, ”আমাদের ট্রলারটা ভালো ছিল, মাঝিও ভালো ছিল। ট্রলারটা নতুন ছিল। আমরা এই পাশের ঘাটে প্রায় পৌঁছে গেছিলাম। এসময় মাঝখানে একটা চরে আমাদের ট্রলারটা আটকে যায়। চরের ওপর যখন ট্রলারটা চালানো হচ্ছিল ওইসময় কয়েকটা ধাক্কা খেয়েছিল।
”ধাক্কা খাওয়ার পরে দেখলাম যে হঠাৎ করে ট্রলারের ভেতর থেকে পানি বের হচ্ছে। এরপর একটা ঢেউ এসে বাড়ি মারার পর ট্রলারটা উল্টে গেছে। এরপরে আমরা যে যার মত চেষ্টা করে প্রায় দুই ঘণ্টা ভেসে ছিলাম।
”পরে আমাদেরকে উদ্ধার করার পর ওই ট্রলারে এবং পরে আরো একটি ট্রলারে নিখোঁজদের খোঁজা হয়। আমাদের সাথে থাকা অপর পুলিশ সদস্যকে পাওয়া গেছে কিনা আমি জানি না।“