Published : 07 Jun 2025, 01:52 PM
ম্যাচ শেষে কোচকে জিজ্ঞেস করা হলো, “এবারও কি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হতে ইতালি?” কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তি বললেন, “এরকম খেলতে থাকলে দুর্ভাবনা তো আছেই!” অথচ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মাত্রই প্রথম ম্যাচ খেলল দলটি। এই ম্যাচের পারফরম্যান্স এতটাই বাজে যে, এখনই তাদেরকে ঘিরে ধরেছে শঙ্কা!
চারটি শিরোপা জিতে বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় সফলতম দল ইতালি। কত সমৃদ্ধ ইতিহাস, গৌরবময় ঐতিহ্য, বিশ্বজুড়ে কত সমর্থক তাদের। অথচ গত দুটি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেনি তারা। এবারও বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচেই উড়ে গেছে তারা।
ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ‘আই’ গ্রুপে শুক্রবার ইতালিকে ৩-০ গোলে হারায় নরওয়ে।
বাছাইয়ে ইতালির এটি প্রথম ম্যাচ হলেও নরওয়ের ছিল তৃতীয় ম্যাচ। তিন জয়ে তারা আছে শীর্ষে।
অসলোতে ম্যাচের প্রথমার্ধেই গোল তিনটি করে নরওয়ে। চতুদর্শ মিনিটে ইতালির দুইজনের মাঝখান দিয়ে বল নিয়ে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে দারুণ এক ডিফেন্সচেরা পাস দেন আন্তোনিও নুসা। বল পেয়ে পাশে থাকা ডিফেন্ডারকে ছিটকে দিয়ে দিয়ে গোল করেন আলেকসান্দার সরলথ।
৩২তম মিনিটে মার্টিন ওডেগোরের কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সের ভেতর জোরালো শট নেন সরলথ। ডাইভ দিয়ে ঠেকান ইতালিয়ান গোলকিপার জানলুইজি দোন্নারুম্মা।
দুই মিনিট পরই আরেকটি গোল পায় নরওয়ে। শুরু থেকেই দারুণ খেলতে থাকা নুসা প্রথম গোল বানিয়ে দেওয়ার পর নিজেই দুর্দান্ত গোল করেন প্রায় একক দক্ষতায়। এবারও ইতালির দুজনকে কাটিয়ে চোখের পলকে বক্সে ঢুকে আচমকা শট নিয়ে নেন ২০ বছর বয়সী এই উইঙ্গার। দোন্নারুম্মা নাগাল পাননি বলের।
৪২তম মিনিটে আবার ইতালির দুজনের মাঝ দিয়ে বক্সে দারুণ থ্রু বাড়ান ওডেগোর। বল ধরে দোন্নারুম্মাকে কাটিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় জালে পাঠান আর্লিং হলান্ড।
৬৫তম মিনিটে নরওয়ের আরেকটি প্রচেষ্টা প্রতিহত হয় পোস্টে। এছাড়া দ্বিতীয়ার্ধে সেভাবে সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি আর কোনো দল।
ইতালির খেলায় তো ম্যাচজুড়েই ছিল না কোনো ধার কিংবা দাপট। বলের লড়াইয়ে তারা এগিয়ে ছিল অনেক। ৬৩ শতাংশ সময় বল ছিল তাদের কাছেই। কিন্তু ছিল না তেমন কোনো পরিকল্পনা বা গোছানো আক্রমণ। গোলে ছয়টি শট নিয়ে লক্ষ্যে বল রাখতে পারে তারা স্রেফ একবার। সেটিও ৯০ মিনিট শেষে যোগ করা সময়ে। তাতেও গোল হয়নি।
প্রথম ম্যাচ শেষেই তাই প্রশ্ন উঠল, ৪৮ দলের বিশ্বকাপেও কি খেলতে পারবে না ইতালি? ভরসা জাগানোর মতো উত্তর দিতে পারলেন না কোচ স্পালেত্তি।
“এরকম খেলতে থাকলে দুর্ভাবনা তো আছেই। সবসময়ই শঙ্কা আছে। এরকম একটি পারফরম্যান্সের পর অবশ্যই নিজেদেরকে প্রশ্ন করা উচিত এবং উপলব্ধি করা উচিত যে, বড় সমস্যা আছে এখানে। সেই সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হবে। এটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”
ক্লাব মৌসুমে দারুণ পারফর্ম করা কিছু ফুটবলার দেশের জার্সিতে ছিলেন একদমই বিবর্ণ। কোচ কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন ফুটবলারদেরই।
“ব্যক্তিগতভাবে ফুটবলারদের আরও প্রাণবন্ত, আরেকটু উদ্যমী হতে হবে। বাড়তি কিছু যোগ করতেই হবে আমাদের, নইলে কিছু না কিছু বদলাতে হবেই।”
“আমরা তো এমন দল নই, এই ছেলেরা এমন ফুটবলার নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমরা আরও অনেক কিছু করতে পারি মাঠে। অবশ্যই সময়টা কঠিন।”
প্রশ্ন ও সমালোচনা হয়েছে স্পালেত্তির দল নির্বাচন নিয়েও। তার চাকরিও নড়বড়ে বলে ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। তার সামনেও যে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে, তা স্বীকার করছেন কোচ।
“ফেডারেশন সভাপতির সঙ্গে কথা বলে তাদের মনোভাব বুঝতে হবে আমাকে, আমার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদের ভাবনা জানতে হবে।”
“এই দল আমি বেছে নিয়েছি এবং এটা নিয়েই চালিয়ে যাব। এই ফুটবলারদের বেছে নিয়েছি কারণ, ওদের মান আছে। কিন্তু মানই ফুটবল মাঠে যথেষ্ট নয়। আমরা যদি এতটাই নড়বড়ে হই যে অফসাইড ফাঁদ ধরে রাখতে পারি না, প্রতিপক্ষ ও বল তাড়া করতে পারি না, তাহলে বুঝতে হবে আত্মবিশ্বাসের কমতি আছে প্রবল।”
ইতালির পরের ম্যাচ মলদোভার বিপক্ষে সোমবার। গ্রুপের অন্য দুই দল এস্তোনিয়া ও ইসরায়েল।