Published : 08 May 2025, 11:17 AM
লিভারপুল, অ্যাস্টন ভিলার পর এবার আর্সেনাল- টানা তিন ধাপে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দলকে হারিয়ে ফাইনালে পিএসজি। এমন মোক্ষম সময়ের অপেক্ষাই বুঝি করছিলেন লুইস এনরিকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করার পর ফরাসি লিগ নিয়ে ট্রলের জবাব দিলেন পিএসজি কোচ।
এবারের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যে দল ছিল অপ্রতিরোধ্য, চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও প্রাথমিক পর্বে যারা ছিল সেরা, সেই লিভারপুলকে শেষ ষোলো থেকে বিদায় করে দেয় পিএসজি। এরপর কোয়ার্টার-ফাইনালে তারা হারায় অ্যাস্টন ভিলাকে। সেমি-ফাইনালে তারা সামনে পায় আর্সেনালকে, কোয়ার্টার-ফাইনালে যারা পর্যদুস্ত করে এসেছে রেয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবকে।
কিন্তু দুর্দমনীয় পথচলায় আর্সেনালের আশাও পিষ্ট করে পিএসজি। প্রথম লেগে ১-০ গোলে জয়ী হওয়া দলটি দ্বিতীয় লেগে বুধবার জেতে ২-১ গোলে। প্রথম শিরোপার স্বপ্ন পূরণ করা থেকে এখন স্রেফ এক ধাপ দূরে ৫৪ বছর পুরোনো ক্লাবটি।
ম্যাচের পর তাৎক্ষণিক উল্লাসে টিএনটি স্পোর্টসকে এনরিকে বলেন, “ফারমার্স লিগ, তাই না? আমরা ফারমার্স লিগ…”, পরমুহূর্তে নিজেকে একটু সামলে নেন কোচ, “এটা দারুণ… এই সাফল্য আমরা উপভোগ করছি, সবাই আমাদের প্রশংসা করছে, আমাদের মানসিকতা, আমরা যেভাবে খেলি, সেসব নিয়ে কথা বলছে, এগুলো দারুণ ব্যাপার।”
ফ্রান্সের শীর্ষ লিগের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মান ও পিএসজির একতরফা দাপটের কারণে মূলত এটিকে 'ফারমার্স' লিগ বলে মজা বা ট্রল করেন অনেকে। ফ্রান্সে এটিকে অপমানসূচক হিসেবে দেখেন অনেকে। ধনকুবের নাসের আল খেলাইফি ক্লাবের বেশির ভাগ অংশের মালিকানা কেনার পর একের পর এক তারকার সমাবেশে অন্য ক্লাবগুলির চেয়ে অনেক ব্যবধানে এগিয়ে যায় পিএসজি। ২০১১-১২ মৌসুম পর্যন্ত লিগে স্রেফ দুটি শিরোপা ছিল তাদের। ২০১২-১৩ থেকে চলতি মৌসুম পর্যন্ত তারা জিতেছে ১১টি লিগ শিরোপা। শুধু ২০১৬-১৮ ও ২০২০-২১ মৌসুমেই জিততে পারেনি। এবারও তারা শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলেছে বেশ আগেই, অন্যদের বিপুল ব্যবধানে পেছনে ফেলে।
তবে সেই সাফল্য ইউরোপে সেভাবে অনূদিত হয়নি এখনও পর্যন্ত। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে স্রেফ একবারই ফাইনাল খেলেছে তারা, সেটি ২০২০ সালে। এবার আরেকটি সুযোগ আক্ষেপ ঘোচানোর।
দলের মানসিকতায় বদলের পেছনের গল্পও শোনালেন এনরিকে। গত আসরে যে মঞ্চ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল, এবার সেখানেই তারা উড়িয়েছে বিজয় কেতন। তবে কাজটা সহজ ছিল না।
গত আসরে কোয়ার্টার-ফাইনালে প্রথম লেগে বার্সেলোনার কাছে ৩-২ গোলে হেরেও পরের লেগে প্রবল প্রতাপে জিতেছিল তারা ৪-১ গোলে। কিন্তু সেই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারেনি সেমি-ফাইনালে। দুই লেগেই তারা হেরেছিল বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের কাছে। এবার প্রাথমিক পর্বে আট ম্যাচের চারটি জিতে আর তিনটিতে হেরে তাদের অবস্থান ছিল ১৫তম। শেষ ষোলোয় জায়গা করে নিতে হয়েছিল প্লে-অফ খেলে।
সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেক্ষাপট তুলে ধরলেন কোচ।
“আমার ঠিক মনে নেই একদম কোন মুহূর্ত থেকে বদলের শুরু। তবে আমাদের চ্যাম্পিয়ন লিগের পারফরম্যান্স যখন বিপর্যস্ত ছিল এবং আমি মেনে নিতে পারছিলাম না, তখন ফুটবলারদের উদ্দেশে কিছু কথা বলি। কোচিং স্টাফদের নিয়ে ফুটবলারদের সঙ্গে আলোচনায় বসে মনে করিয়ে দেই, আমরা ইউরোপের সেরা দলগুলির একটি।”
“তারপরও ঠিকঠাক কার্যকর হতে পারছিলাম না, তবে আমি ওদেরকে বলেছিলাম শান্ত থাকতে ও কাজ করে যেতে। এরপর থেকে ছেলেরা অসাধারণ খেলছে। ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ম্যাচটি আমাদের জন্য ছিল টার্নি পয়েন্ট, যেটি আমরা ২-০ ব্যবধানে হারতে বসেছিলাম।”
সিটির বিপক্ষে সেদিন ৫০ ও ৫৩ মিনিটে দুটি গোল হজম করার পর চার গোল করে স্মরণীয় জয় পেয়েছিল পিএসজি।
কোচ বললেন গত মৌসুমের একটি ঘটনার কথাও, যখন ক্লাব ছাড়ার হুমকি দিয়ে দলকে উজ্জীবিত করেছিলেন তিনি।
“কোনো একটি ব্যাপার দিয়ে আসলে এটি বোঝানো যায় না। এটা প্রতি দিনের প্রক্রিয়া। প্রথম বছরে আমরা ভালো কাজ করেছি, কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। আমি তখন বলেছিলাম, প্রতিটি ট্রেনিং সেশনে যদি ভিন্ন মানসিকতা না দেখি, তাহলে ক্লাব ছেড়ে চলে যাব।”
“এই বছর প্রতিটি ট্রেনিং সেশনই ছিল সর্বোচ্চ মানের। ছেলেরা ছিল অসাধারণ।”
পিএসজির অধিনায়ক মার্কিনিয়োস, ২০১৩ সাল থেকে তিনি খেলছেন এই ক্লাবে, দলের ভাগ্য বদলের কৃতিত্ব দিলেন কোচকে।
“কোচ ধাপে ধাপে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন। তিনি যখন এলেন, দেখলেন যে এখানে অনেক কিছুই বদলানোর আছে, বিশেষ করে মানসিকতায়। এটা রাতারাতি হয় না। আমরা আস্তে আস্তে এগিয়েছি। কিছু কিছু ম্যাচ আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে… ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল… এই ম্যাচগুলো নিশ্চিত করেছে, আমরা ভালো কাজ করছি।”
“গত মৌসুমে আমরা কখনও ভালো খেলেছি, কখনও খারাপ। অনেক সুযোগ তৈরি করে কাজে লাগাতে পারিনি। এই মৌসুমের ফল দেখিয়ে দিচ্ছে যে, আমরা ঠিক পথেই আছি।”
দুই লেগে হেরে আর্সেনাল কোচের আক্ষেপ 'টুর্নামেন্টের সেরা দলই ছিটকে গেছে'