প্যারিস অলিম্পিকস
Published : 02 Aug 2024, 08:38 PM
অলিম্পিক ভিলেজে হাজার হাজার অ্যাথলেট। কত ভাষা, কত সংস্কৃতি, কত রঙ আর প্রাণের মেলা! যে কোনো অ্যাথলেটের জন্য এটা স্বপ্নের আঙিনা। বাংলাদেশের মতো দেশের অ্যাথলেটদের জন্য তো এই আবহে থাকতে পারা রূপকথার মতো। তবে সেই গর্ব আর ভালোলাগার অনুভূতির পাশাপাশি একটু হীনম্মন্যতা, অনেকটা হতাশা আর আক্ষেপও কাজ করার কথা। সোনিয়া খাতুনের দীর্ঘশ্বাস আর ছোট ছোট কথায় সেসবই যেন ফুটে উঠল তীব্র হয়ে।
দেশের সেরা নারী সাঁতারু তিনি অনেক দিন ধরেই। জাতীয় সাঁতারে এখনও পর্যন্ত জিতেছেন মোট ৩৭টি সোনা। রেকর্ড-টেকর্ড তো কতই গড়েছেন। গত জাতীয় সাঁতারেও সেরা নারী সাঁতারু ছিলেন তিনিই। কিন্তু অলিম্পিকের মতো মঞ্চে এসে নিজের ‘ক্ষুদ্রতাও’ অনুভব করছেন। সেখানে তার নিজের দায় নেই একটুও। এত বড় মঞ্চে লড়াই করার সামান্যতম সুযোগ-সুবিধাও তো তিনি পান না দেশে!
ইলেকট্রিক টাইমিংয়ের মতো একদম মৌলিক ব্যাপারই নেই দেশের সাঁতারে। দীর্ঘমেয়াদী ও উন্নত প্রশিক্ষণ, বিশ্বমানের কোচ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়া তো এই দেশে কল্পনাও করতে পারেন না সাঁতারুরা। তাদের স্বপ্নগুলোও তাই বনসাই হয়ে থাকে বরাবরই।
সোনিয়াও ব্যতিক্রম নন। এবারের অলিম্পিকসে বাংলাদেশের একমাত্র নারী প্রতিযোগী শনিবার নামবেন লা দিফঁস অ্যারেনার পুলে ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলের হিটে। আগের দিন অলিম্পিক ভিলেজে দুপুরের খাবার খাওয়ার ফাঁকে তিনি বাংলাদেশের সংবাদকর্মীদের শোনালেন নিজের লক্ষ্যের কথা। তার ফিকে হাসিতে মিশে থাকল কঠিন বাস্তবতা।
'নিজের টাইমিং আরেকটু কমিয়ে আনতে চাই। মাত্র দেড় মাসের অনুশীলনে অলিম্পিকে এসেছি। আপনারাও জানেন, এখানে কেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে থাকে। তবে সেদিকে না তাকিয়ে আমার লক্ষ্য ক্যারিয়ার সেরা টাইমিং করা।'
এই ইভেন্টে তার সেরা টাইমিং গত এশিয়াডে করা ৩০.১১। সেটিই আরেকটু কমিয়ে আনতে চান নৌবাহিনীর এই সাঁতারু।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ অ্যাথলেটের লক্ষ্য এরকমই থাকে অলিম্পিকসে। আরেক সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি যেমন ছেলেদের ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে নিজের সেরা টাইমিং করতে পেরে দারুণ তৃপ্ত। প্রস্তুতি আর অনুশীলনে রাফির চেয়েও পিছিয়ে সোনিয়া। তবু নিজের উন্নতিটুকুর ছাপ ২৪ বছর বয়সী এই সাঁতারু রাখতে চান প্যারিসের নীল জলে।
“রাফি থাইল্যান্ডে উন্নত প্রশিক্ষণে নিয়েছে। সেখানে ট্রেনিংয়ের ফল এখানে পেয়েছে ও। আমি তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই ভালো করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। দেখা যাক, কতোটুকু কী করতে পারি।’
সোনিয়ার শেষ কথাটুকুই বাংলাদেশের প্রায় সব অ্যাথলেটের বাস্তবতা। আশার ভিত্তি বড্ড নড়বড়ে, তবু স্বপ্নের সৌধ গড়ার লড়াই করতে হয় তাদের।