উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ
Published : 21 Oct 2024, 07:07 PM
একের পর এক গোলের সুযোগ মিস করে দল যখন ভীত, সন্ত্রস্ত। পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের শঙ্কায় উদ্বিগ্ন, তখন স্বস্তির হাসি এনে দেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে হেডে জাল খুঁজে নেন তিনি। অথচ শুরুর দিকে পাকিস্তানের অধিনায়কের সঙ্গে সংঘর্ষে চোখের উপরের দিকে চোট পেয়েছিলেন তিনি। ব্যান্ডেজ করে পুরোটা ম্যাচ খেলা শামসুন্নাহার বললেন, দেশের হয়ে মাঠে নামলে ব্যথার অনুভূতি ভুলে যান তারা।
উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মুকুট ধরে রাখার লড়াইয়ে নেমে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়া দলকে শেষ দিকে ১-১ সমতায় ফেরান শামসুন্নাহার। সেমি-ফাইনালে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে কাঠমাণ্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে বুধবার ভারতের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচেও দলের আস্থা হয়ে উঠতে চান ২০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।
শুরুর দিকে যখন চোট পেলেন, খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন, এটা ভাবতে পেরেছিলেন? আর এখন চোটের অবস্থা কী?
শামসুন্নাহার জুনিয়র: চোট নিয়ে অত সমস্যা নেই। আমার বাম চোখের কোণায় কেটে গিয়েছিল। আমার সঙ্গে যার কপাল ফেটেছিল, পাকিস্তানের ক্যাপ্টেন (মারিয়া জামিলা খান), আমাদের ফিজিও উনারটা ঠিক করে দিতে পেরেছিল। আমারটা করতে পারছিল না। চোখের কোণায় লেগেছে এ জন্য ব্যান্ডেজ করতে পারছিল না। তবে ওই সময় আমার মনেই ছিল না যে ব্যথা পেয়েছি।
ব্যথাটা আমি বড় করে দেখিনি। আমার শুধু মনে হচ্ছিল খেলতে হবে। দেশের জন্য কিছু করতে হবে। সুযোগ পেয়েছি কাজে লাগাতেই হবে। সবাই ভরসা করে আছে, গোল দিতে পারব আমি। গোল দিব আমি। আমাদের অ্যাটাকিং লাইন-আপে যে তিন জন, তাদের ওপর বেশি ভরসা ছিল। এটাকে আমি বড় মনে করে দেখেছি বলে খেলতে পেরেছি।
সমতা ফেরানো গোলের পর খুব উদযাপন করছিলেন, তখন কী যেন হয়েছিল…
শামসুন্নাহার জুনিয়র: সেলিব্রেশন করেছি গোলের পর। ঠিক আছে। কিন্তু পরে কৃষ্ণা দি ডাকছিল যে বল নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসো। সময় নেই একদম। আমি কয়েক সেকেন্ড শুধু ওখানে ছিলাম। এরপরই বল নিয়ে চলে আসি। আর কয়েক মিনিট ছিল। তখন আমার মাথায় একটাই চিন্তা যদি আরেকটি গোল করতে পারি তাহলে আমরা ৩ পয়েন্ট পাবো।
পাকিস্তানের বিপক্ষে অনেকগুলো মিস হয়েছে গোলের সুযোগ, শেষ দিকে আসলে আপনাদের কী মনে হচ্ছিল?
শামসুন্নাহার জুনিয়র: যখন দেখেছি যে ৯০ মিনিট শেষ হয়ে গেছে। এক্সট্রা টাইম দিয়েছে ছয় মিনিট। তখন মনে হচ্ছিল হায় আল্লাহ কী করব? আর মাত্র ছয় মিনিট আছে। এটা তো দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাবে। তখন আমাদের সবাই শুধু ডিফেন্স থেকে বলছিল, ওপরে উঠে এসে খেলতে। প্রেসার দিতে। যাতে গোল একটা না একটা বের করতে পারি। ডিফেন্ডাররা অনেক কথা বলছিল। ওরা বলছিল, একটা গোল করো। একটা গোল করো। আমরা সবাই ওরকমভাবে শেষ দিকে যখন দেখি ৬ মিনিট দিয়েছে তখন আমরা পাগল হয়ে যাই গোলের জন্য।
মনে করছিলাম যে, যদি এই ম্যাচটি ড্র হয় তাহলেও তো ভালো সুযোগ থাকবে। আর যদি হেরে যাই, তাহলে কেমন দেখা যাবে। এটা আসলে আমাদের জন্য প্রেসার (চাপের) হয়ে গিয়েছিল, শেষ দিকে এসে। তো সবাই এসে শেষ দিকে আরও প্রেসার দিয়েছে (পাকিস্তানকে)। যে কারণে গোল পেয়েছি।
গতবার নেপালের বিপক্ষে ফাইনালে সিরাত জাহান স্বপ্না চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ার পর বদলি নেমে গোল করেছিলেন, ভারতের বিপক্ষে সুযোগ কাজে লাগানো নিয়ে…
শামসুন্নাহার জুনিয়র: আমার মনে হয়, আমার সতীর্থরা সবসময় আমার উপর এই ভরসা রাখে, যে আমি গোল করব। সতীর্থরা আমাকে বলে যে, শামসু তুমি কিছু একটা করো, তুমি পারবে। তহুরাকেও বলে। ফরোয়ার্ড যারা থাকে, তাদেরকে ডিফেন্স থেকে শট নিতে বলে, কিছু একটা হবে। ওই ভরসাটা (আমার উপর) রাখে। ওই ভরসার জায়গা থেকে, আমি চেষ্টা করি আমার শতভাগ দেওয়ার।
ভারতকে আপনারা গত সাফে হারিয়েছেন। এবার তাদের হারিয়ে গ্রুপসেরা হওয়ার আত্মবিশ্বাস কী আছে?
শামসুন্নাহার জুনিয়র: অবশ্যই আছে। প্রতিটি খেলোয়াড়ের চাওয়া থাকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমি-ফাইনালে যাওয়ার। আমাদের যেহেতু প্রথম ম্যাচটা খারাপ হয়েছে, পাকিস্তানের সাথে ড্র করেছি, পরের ম্যাচে জিতে ৩ পয়েন্ট নিয়ে যেন গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আমরা সেমি-ফাইনাল খেলতে পারি, এ লক্ষ্য থাকবে। এজন্য আমরা সর্বোচ্চটা দিব ভারতের বিপক্ষে জয়ের জন্য।
আপনার দৃষ্টিতে ভারতের সবচেয়ে শক্তির দিক কোনটি?
শামসুন্নাহার জুনিয়র: ভারতে এবার অনেক সিনিয়র ফুটবলার আছে। অভিজ্ঞ ফুটবলার আছে। (সাবিনা) আপুদের সঙ্গে খেলেছে। আমরা তাদের পাইনি…এবার উনারা খেলবে। অনেক অভিজ্ঞ ফুটবলার ওরা নিঃসন্দেহে। ওরা মাঝমাঠ থেকে ভালো ভালো বল ছাড়ে। উইঙ্গার আছে। লেফট উইংয়ে যে খেলে (মনিষা) সে অনেক ভালো। এখনও এসব নিয়ে কোচদের সঙ্গে কথা হয়নি। আমরা প্রথম ম্যাচ নিয়েই বেশি কথা বলেছি। কাল আমাদের প্রথম ম্যাচ শেষ হয়েছে। আমরা এরপর দ্বিতীয় ম্যাচ নিয়ে কথা বলব।
শতভাগ ফিট শামসুন্নাহারকে কি ভারত ম্যাচে পাবে বাংলাদেশ?
শামসুন্নাহার জুনিয়র: চোখের চোট নিয়ে ডাক্তার বলেছেন সমস্যা নেই। ২৩ তারিখে ম্যাচ আছে খেলতে পারব কিনা, এটা জানতে চাইলে উনারা বলেছেন খেলতে পারব। এটা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু পায়ে একটু ব্যাথা আছে। আজ পুরো দিন বিশ্রাম দিয়েছে। রিকভারি সেশন করেছি। আজ সারাদিন আইস বাথা, গরম পানি নিব। ইনশাল্লাহ দেখি মাঠে নামতে পারি কিনা। কাল যদি ভালো বোধ করি তাহলে পরের ম্যাচে ইনশাল্লাহ খেলতে পারব।