Published : 25 Mar 2025, 09:34 PM
দীর্ঘ লড়াই শেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পাচ্ছেন ফিফার সাবেক প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার ও উয়েফার সাবেক সভাপতি মিশেল প্লাতিনি। একসময়ের ক্ষমতাধর দুই ফুটবল কর্মকর্তাকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বাসেলের নিকটবর্তী মুটেঞ্জ শহরে সুইস ক্রিমিনাল কোর্টের এক্সট্রাঅর্ডিনারি আপিল চেম্বারে মঙ্গলবার ব্লাটার ও প্লাতিনিকে জালিয়াতির অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।
২০১১ সালে প্লাতিনিকে বেআইনিভাবে ২০ লাখ ইউরো প্রদান করেছিলেন ব্লাটার, এমন অভিযোগ তুলেছিলেন সুইস প্রসিকিউটররা। ২০২১ সালের নভেম্বরে এই দুই জনকে অভিযুক্ত করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। ২০২২ সালের জুনে শুরু হয় বিচারকার্য।
পরের মাসে সুইজারল্যান্ডের নিম্ন আদালত এই দুজনকে নির্দোষ ঘোষণা করে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আবার আপিল করে সুইস ফেডারেল প্রসিকিউটররা। আড়াই বছর পর ফের সুসংবাদ পেলেন ব্লাটার ও প্লাতিনি।
ফ্রান্স জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও কোচ প্লাতিনিকে ব্লাটারের অর্থ প্রদান নিয়ে জালিয়াতির যে অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউটাররা, সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে আদালত।
ফিফায় দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে ২০১৫ সালের জুনে একরকম বাধ্য হয়ে সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ব্লাটার। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বরে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ফিফার এথিক্স কমিটি। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুজনকেই ফুটবল সংক্রান্ত সব ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে আট বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পরে তা কমিয়ে ছয় বছর করা হয়।
ব্লাটারের উত্তরসূরি হিসেবে প্লাতিনির ফিফা সভাপতি হওয়ার বিষয়টি তখন বেশ সম্ভাব্য মনে হচ্ছিল। তবে এরপরই তাকে ওই ২০ লাখ ইউরো দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্য হলে তিনিও নিষিদ্ধ হন।
ব্লাটারের দাবি, ১৯৯৮ সালে তার টেকনিক্যাল পরামর্শক হিসেবে প্লাতিনিকে কাজ করার জন্য বলেছিলেন। এজন্য তাদের মধ্যে ‘জেন্টলম্যান’স এগ্রিমেন্ট’ হয়েছিল এবং ওই ২০ লাখ ইউরো তারই পারিশ্রমিক।
৬৭ বছর বয়সী প্লাতিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ব্লাটারের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। সেজন্য তার বাৎসরিক পারিশ্রমিক ছিল তিন লাখ সুইস ফ্রাঁ। আর বাকি ১০ লাখ পরবর্তীতে প্লাতিনির প্রতি বছরের বেতন বাবদ নির্ধারিত হয়েছিল।
মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার কথা বলেছেন প্লাতিনি।
“১০ বছর ধরে ফিফা এবং কিছু সুইস ফেডারেল প্রসিকিউটরের নিপীড়ন এখন শেষ হয়েছে। আমার সম্মান আজ ফিরে এসেছে এবং আমি খুব খুশি।”
৬৯ বছর বয়সী প্লাতিনি ভেবেছিলেন, তার ফিফা সভাপতি হওয়া ঠেকাতেই এই মামলা করা হয়েছিল। তবে দায়িত্বটি পালনের জন্য এখন আর বয়স নেই বলে মনে করেন তিনি।
প্লাতিনির যে অর্থ বাজেয়াপ্ত করেছিল সুইস কর্তৃপক্ষ, তা এখন ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
রায় ঘোষণার পর মেয়েকে আলিঙ্গন করেন মলিন চেহারার ব্লাটার। পরে সাংবাদিকদের বলেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচার কথা।
“এটা আমার জন্য বড় স্বস্তি। কারণ দশ বছর ধরে এটা চলছে…এখন এটা শেষ হয়েছে এবং আমি শ্বাস নিতে পারছি।”
সুইস অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় জানিয়েছে, তারা লিখিত রায়টি পর্যালোচনা করে দেখবে এবং পরে সিদ্ধান্ত নেবে দেশটির সর্বোচ্চ আইনি কর্তৃপক্ষ সুইস ফেডারেল কোর্টে আবার আপিল করবে কিনা।