Published : 29 Aug 2023, 03:37 PM
চুমু কাণ্ডে সাময়িক নিষিদ্ধ হওয়ার পর লুইস রুবিয়ালেসের উপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। এবার তাকে অনতিবিলম্বে সভাপতির দায়িত্ব ছাড়তে বলেছেন স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) আঞ্চলিক প্রধানরা।
নারী বিশ্বকাপের ফাইনাল জেতার পর স্পেন দলের জেনিফার এরমোসোকে ঠোঁটে চুমু দিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন রুবিয়ালেস। এতে প্রচণ্ড নাড়া খেয়েছে স্পেনের ফুটবল। এই কাণ্ডের জন্য গত শনিবার তাকে আপাতত তিন মাসের জন্য সাময়িক নিষিদ্ধ করে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থা ফিফা।
এরপরই জরুরি সভা ডাকে আরএফইএফ। সেখানে স্পেনের আঞ্চলিক সভাপতিরা রুবিয়ালেসকে পদত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করেন।
“স্প্যানিশ ফুটবলের ভাবমূর্তি নষ্ট করা সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ও অগ্রহণযোগ্য আচরণের পর (আঞ্চলিক) সভাপতিরা লুইস রুবিয়ালেসকে তাৎক্ষণিকভাবে আরএফইএফ-এর প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করছে।”
আরএফইএফ-এর অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান পেদ্রো রোচাকে ‘সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন’ জানানোর কথা বলেছেন আঞ্চলিক প্রধানরা। একই সঙ্গে ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় পুরোপুরি পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
গত ২০ অগাস্ট ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবার নারী বিশ্বকাপ ঘরে তোলে স্পেনের মেয়েরা। এরপর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পদক পরিয়ে দেওয়ার সময়ে ওই বিতর্কিত কাণ্ড করেন রুবিয়ালেস।
মঞ্চে স্পেন দলের সব ফুটবলারকেই তিনি আলিঙ্গন করেন, গালে ও কপালে চুমু এঁকে দেন অনেকের। তবে এরমোসোর ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যান সীমা। বেশ কিছুটা সময় আলিঙ্গনে জড়িয়ে রেখে পরে দুহাত দিয়ে মাথায় ধরে ওই ফুটবলারের ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসেন তিনি।
প্রবল সমালোচনার মুখে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন ৪৬ বছর বয়সী রুবিয়ালেস। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। চাপের মুখে এক পর্যায়ে তিনি দাবি করেন, ‘দুইজনের সম্মতিতে’ ঘটে বিতর্কিত ঘটনাটি।
তবে তা অস্বীকার করেন এরমোসো। নারী ফুটবলারদের সংগঠন ফুটপ্রো ইউনিয়নের একটি বিবৃতিতে বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ড স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তার সম্মতি ছিল না এতে।
ঘটনাটি যৌন নিপীড়নের অপরাধ কিনা, তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে দিয়েছে স্প্যানিশ প্রসিকিউটরা।
রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্পেন সরকারও। স্পেনের ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিলের প্রধান ভিক্তর ফ্রাঙ্কোস গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ক্রীড়া আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে সাময়িক নিষিদ্ধ হবেন রুবিয়ালেস।
তাকে সাময়িক নিষিদ্ধ করার জন্য স্পেন সরকারের অনুরোধের বিষয়ে সোমবার বৈঠক করেছে স্পেনের স্পোর্টস ট্রাইব্যুনাল (টিএডি)। সিদ্ধান্ত এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
এর মধ্যেই ছেলের পক্ষে দাঁড়িয়ে স্থানীয় একটি চার্চের দরজা বন্ধ করে আমরণ অনশনে বসেছেন রুবিয়ালেসের মা আনহেলেস বেহার। রুবিয়ালেসের পক্ষে ছোট্ট একটি র্যালিও হয়েছে। তবে তার পদত্যাগ ও শাস্তির দাবি পক্ষে জনমত ক্রমেই বাড়ছে।
রুবিয়ালেসের ওই ঘটনার প্রতিবাদে স্পেনের ৮১ জন খেলোয়াড় জানিয়েছে, সভাপতিকে বিদায় করা না হলে দেশের হয়ে আর খেলবেন না তারা। ফুটপ্রো ইউনিয়নের ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা খেলোয়াড়দের মধ্যে আছেন জাতীয় দলের বিশ্বকাপ জয়ী ২৩ জন ফুটবলারও।
শুধু তাই নয়, স্পেন নারী জাতীয় দলের প্রধান কোচ হোর্হে ভিলদা ছাড়া কোচিং স্টাফের বাকি সব এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন। বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছয় জন কোচও ছেড়ে দিয়েছেন দায়িত্ব।