Published : 13 Jul 2023, 03:09 PM
থ্রেডসের আগমনে লোকজনের টুইটার ব্যবহারে ভাটা পড়েছে এমন সংবাদকে দূরে ঠেলে দিয়ে বরং উল্টোটাই দাবি করছেন টুইটার সিইও লিন্ডা ইয়াকারিনো।
তবে, চেহারার ওপর ‘স্ত্রিনসেভার’ ঝুলালেও, এক সপ্তাহেরও কম সময়ে থ্রেডস ১০ কোটি গ্রাহক অর্জন করার উদ্বেগ টের পাওয়া গেছে টুইটারের কর্মকাণ্ডে।
থ্রেডস কে টুইটার যে ‘থ্রেট’ হিসাবে দেখছে তার উদাহরণ উঠে এসেছে প্রযুক্তি সাইট টেকক্রাঞ্চের এক প্রতিবেদনে। সাইটটি বলেছে, টুইটারে থ্রেডস ডটনেট বিষয়ে কিছু সার্চ করলে কোনো ফলাফল দেখাচ্ছে না প্ল্যাটফর্মটি।
এর ফলে, টুইটারে থ্রেডস নিয়ে আলাপ বা একে অন্যকে থ্রেডসে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে।
টুইটারে থ্রেডস লিখে সার্চে কিছু আসছে না
সাধারণত কোনো ওয়েবসাইটের নাম লিখে সার্চ দিলে সেই ওয়েবসাইট সম্পর্কিত সব টুইট দেখায় প্লাটফর্মটি। কিন্তু থ্রেডসের বেলায় বলছে
“নো রেজাল্ট ফাউন্ড।” অর্থাৎ যেসব ব্যবহারকারী নিজেদের থ্রেডস অ্যাকাউন্টের লিংক তাদের টুইটার ফলোয়ারদের কাছে শেয়ার করে টুইট করেছেন সেগুলো সার্চ দিয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রযুক্তিবিদ অ্যান্ডি বাইয়ো-সহ আরও অনেকেই ব্যাপারটি লক্ষ্য করেছেন বলে জানিয়েছে টেক ক্রাঞ্চ।
ঠিক কখন থেকে এই বিধিনিষেধ জারি হয়েছে টুইটারে তা স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে কোনো উত্তরও পাওয়া যায়নি টুইটারের কাছ থেকে, কারণ গতবছর মাস্ক টুইটার কেনার পর থেকে গণমাধ্যমের সব সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কোম্পানিটি।
প্রতিদন্দ্বীদের ওয়েবসাইট লিংক রুদ্ধ করে দেওয়া, মাস্কের জন্য এবারই প্রথম নয়। নিউজলেটার প্ল্যাটফর্ম সাবস্ট্যাক তাদের ডিসকাশন ফিচার যুক্ত করার পর টুইটার তাদের পোস্টগুলোকে সেন্সর শুরু করে, সেগুলোতে রিপ্লাই, ব্লক কিংবা রিটুইট করার সুযোগ কেড়ে নেওয়া হয়। থ্রেডস নিয়ে দেওয়া পোস্টগুলোর জন্য পরিস্থিতি এখনও এতোটা খারাপ হয়নি।
বিজ্ঞাপন করছেন সিইও
অন্যদিকে টুইটার সিইও ইয়াকারিনো টুইটারের ট্রাফিক বেড়ে গেছে এমন কৌশলগত বক্তব্য দিয়ে বিজ্ঞাপন দাতাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন।
“আপনাদের টুইটার ছেড়ে কোনো সুতায় (থ্রেডসে) ঝুলতে দেখতে চাই না, আপনারা সত্যিই নিজেদের কে ছাড়িয়ে গেছেন! ফেব্রুয়ারির পর গত সপ্তাহে আমাদের সেবার সর্ব্বোচ্চ ব্যবহার হয়েছে।” সেইসঙ্গে খুব সুক্ষ্মভাবে থ্রেডসকে ইঙ্গিত করে এই শীর্ষ কর্মকর্তা আরও যোগ করেন “টুইটার একটাই, আপনারা জানেন, আমিও জানি।”
তার এই বক্তব্যের পর অনেক সংবাদ প্রতিবেদন সামনে আসে, যেখানে বলা হয় থ্রেডসের যাত্রা এবং দুর্বার গতিতে টুইটারের ব্যবহার হ্রাসে নিয়ে করা বিভিন্ন প্রতিবেদনের পর এল তার এই টুইট ।
বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সিমিলারওয়েবের উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে সিএনবিসি বলেছে, থ্রেডস আগমনের প্রথম দুইদিনে আগের সপ্তাহের তুলনায় টুইটারের ব্যবহার কমেছে পাঁচ শতাংশ।
সেই সঙ্গে সিমিলারওয়েবের নথি বলছে, আগের বছরের একই দিনের তুলনায় ট্রাফিক কম শতকরা ১১ ভাগ।
ওয়েবসাইট সুরক্ষা কোম্পানি ক্লাউডফ্লেয়ারের সিইও ম্যাথিউ প্রিন্স টুইট করেন “টুইটারের ব্যবহার কমেছে।” প্রিন্সের টুইটের সঙ্গে টুইটার ডট কমের ডিএনএস র্যাংকিং-এর একটি গ্রাফ সংযুক্ত করা আছে, যেখানে পতনের চিত্রটি সুস্পষ্ট।
সেইসব তথ্য-প্রমাণ ইয়াকরিনোর টুইতার ব্যবহার নিয়ে বক্তব্যের একবারেই বিপরীত।
যদিও থ্রেডস ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী ও তাদের নেটওয়ার্কিংকে কাজে লাগিয়ে রাতারাতি এগিয়ে গেছে, তারপরেও দীর্ঘ মেয়াদে এর ভবিষ্যত অনিশ্চিত বলছে টেক ক্রাঞ্চ। সাধারণত কোনো নতুন অ্যাপের চাহিদা খুবই বেশি থাকলেও প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষার সময়টা কেটে গেলে অহরহ সেটি নিয়ে মাতামাতি কমে যায়।
একই পরিণতি জুটেছে টুইটারের ওপেনসোর্স প্রতিদ্বন্দী মাস্টোডনের কপালে। গত বছর তাদের ২৫ লাখ মাসিক গ্রাহক থাকলেও এখন তা ১৯ লাখে এসে দাঁড়িয়েছে।
ডেটা স্ক্র্যাপিং সমস্যার সমাধানে দিনে টুইট পড়ার সর্ব্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেওয়াটা কোনো সামাজিক মাধ্যমের শীর্ষ কর্তার নেওয়া সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছে টেক ক্রাঞ্চ। একই সঙ্গে ডেটা সংগ্রহকারী থার্ড পার্টি অ্যাপের জন্য এপিআই খরচও বাড়িয়ে দিয়েছে কোম্পানিটি।