Published : 29 May 2025, 02:56 PM
ব্রিটেনের এক গ্রামের লোকজন তাদের প্যারিশ গির্জার ঘড়ির পাঁচশতম জন্মদিন উদযাপন করছেন।
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডশায়ারের গ্রামটির নাম ওয়ান্টেজ। এরই কাছে ইস্ট হেন্ড্রেডে অবস্থিত এ ঘড়িটিকে ব্রিটেনের সবচেয়ে প্রাচীন বা পুরানো ঘড়ি বলে মনে করা হয়। তৈরির পর থেকে এটি এক জায়গাতেই রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
ঘড়িটির কোনো ডায়াল বা কাঁটা নেই। এটি সেন্ট অগাস্টিন গির্জার টাওয়ারে থাকা ঘণ্টার ওপর নির্ভর করে প্রতি ১৫ মিনিটে সময় জানিয়ে চলেছে আশপাশের মানুষদের।
গির্জার ঘণ্টার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি টাওয়ার ক্যাপ্টেন নাইজেল ফিন্ডলি বলেছেন, সেন্ট অগাস্টিন গির্জায় ঘড়িটি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যখন রাজা অষ্টম হেনরি ইংল্যান্ডের সিংহাসনে ছিলেন।
তিনি বলেছেন, “একবার ভাবুন তো, ওইসময় এ ঘড়িটি নিয়ে কতটা উত্তেজনা হত।”
প্রতি ১৫ মিনিটে ঘণ্টা বাজানোর পাশাপাশি বিশাল এক বাদ্যযন্ত্রের বাক্সের ভেতরের অংশের মতো দেখতে একটি ক্যারিলন প্রতিদিন চারবার ‘এঞ্জেলস সং’ নামে একটি সুর বাজায়। এটি সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে প্রতি তিন ঘণ্টা পরপর বাজে।
২০১৫ সালে ঘণ্টা বাজানোর জন্য ব্যবহৃত ঘড়ির একটি হাতুরি খুলে পড়ে যন্ত্রের ভেতরে আটকে যায়। ফলে ঘড়িটি বন্ধ হয়ে যায় ও আর শব্দ করেনি।
গির্জা পরিষদের সচিব অ্যান প্যাপেনহেইম বলেছেন, “বিষয়টি যেন একজন বন্ধুকে হারানোর মতো ছিল। কারণ, ঘড়িটি গ্রামের মানুষের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ।
“বাগানে কাজের সময় ঘড়িটি আমাকে সত্যিই সময় বুঝতে সাহায্য করেছে। আর সেই বিষয়টি আমার খুব মনে পড়ত। ঘড়িটি এখন আবার বাজছে, দারুণ লাগছে আমার।”
ওয়ান্টেজ থেকে কয়েক মাইল দূরে তৈরি এই ঘড়িটির সংস্কার কাজে দীর্ঘ সময় লেগেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
সংস্কারের সময় ঘড়িটিতে একটি স্বয়ংক্রিয় ঘুরানোর ব্যবস্থা বসানো হয়েছে। ফলে আর কাউকে প্রতিদিন সরু ও পাক খাওয়া সিঁড়ি বেয়ে উপরের কক্ষে উঠে হাত দিয়ে ঘড়িটি ঘোরাতে হয় না।
এ সপ্তাহে ঘড়ির জন্মদিন উপলক্ষে টাওয়ারে গিয়ে ঘড়ির যন্ত্রপাতি এখনও কীভাবে কাজ করছে তা দেখেছেন গ্রামের মানুষেরা। ঘড়িটি সংস্কারের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাইমন গিলক্রিস্ট।
এ প্রকল্পে কাজ করতে পারাকে “সত্যিকারের এক আবেগময় বিষয়” হিসেবে বর্ননা করেছেন তিনি।
“আমাদের মতো যারা ঘড়ি সারানোর কাজ করেন তাদের এমন কাজের সুযোগ খুব কমই আসে, যেটি কেবল পুরানো নয়, বরং ইতিহাসের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
আগে ঘড়ির সময় ঠিক করার জন্য টাওয়ারের বাইরে থাকা সূর্যঘড়ি ব্যবহার করা হত। এখন টিউডর যুগ বা ইংল্যান্ডের এক ঐতিহাসিক সময়কালের যন্ত্রের পাশেই দেয়ালে দেখ যায় একটি আধুনিক ডিজিটাল ঘড়ি।
গিলক্রিস্ট বলেছেন, “পাঁচশ বছর আগে যখন এই ঘড়িটি তৈরি হয়েছিল ওই সময় আমাদের কাছে আজকের মতো সঠিক সময়ের ধারণার বিষয়টি ছিল না।”
ঘড়িটির যন্ত্রের কিছু অংশ যেমন পেন্ডুলাম গ্রীষ্মের তাপে প্রসারিত ও শীতকালে ঠাণ্ডায় সংকুচিত হয়ে যায়, যা এর সময় নির্ধারণের ওপর প্রভাব ফেলে।
এ যন্ত্রটি এমন এক সময়ের জন্য তৈরি হয়েছিল যখন মানুষের দিন শুরু হত ভোরে ও শেষ হত সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরেই।
গিলক্রিস্ট আরও বলেছেন, “এখনও বেশ সঠিক দিয়ে যাচ্ছে পাঁচশ বছরের পুরানো এই ঘড়ি।”