Published : 29 Dec 2024, 05:08 PM
এআই প্রযুক্তির ফলে তৈরি বায়ু দূষণের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর প্রচলিত ম্যত্যুহারের বাইরে আরও এক হাজার তিনশ মৃত্যু হতে পারে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দাবি করেছেন গবেষকরা।
গবেষকরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ডেটা সেন্টার তৈরির বিষয়টি পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে এবং তা মৃত্যুহার বাড়িয়ে দিতে পারে।
“এআইয়ের হুমকি বলতে শুরুতেই আসে কার্বন ও পানি ব্যবহারের মতো বিভিন্ন বিষয়ের উপর, যেগুলো আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। তবে যেখানে ডেটা সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে যেখানকার স্থানীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপর এগুলো কেমন প্রভাব ফেলবে তা আমরা ভেবে দেখছি না,” বলেছেন ক্যালটেক-এর তথ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের পরিচালক অ্যাডাম উইয়ারম্যান।
গবেষণাটি করেছেন ক্যালটেক ও ইউসি রিভারসাইড-এর বিজ্ঞানীরা ও সঙ্গে ছিলেন গবেষণার সহ-লেখক উইয়ারম্যান। গবেষণার ফলাফল ‘কর্নেল ইউনিভার্সিটি’র প্রকাশনা ‘আরক্সিভ’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হলেও এখনও এর পিয়ার-পর্যালোচনা হয়নি।
পাওয়ার কম্পিউটিং সিস্টেম ও বিভিন্ন এআই সার্ভারের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করতে অনেক বিদ্যুতের প্রয়োজন। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’-এর এপ্রিলের হিসাব বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা প্রতি একশ দিনে দ্বিগুণ হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারী জীবাশ্ম জ্বালানি।
জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতারও কারণ হতে পারে জীবাশ্ম জ্বালানী। একইসঙ্গে এটি ক্যান্সার তৈরিকারী কণা, ধোঁয়াশা ও অ্যাসিড বৃষ্টি তৈরি এবং পানিকেও দূষিত করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট। প্রতিবেদনের শিরোনামে ‘মার্কিন প্রাণহানি’র কথা উল্লেখ থাকলেও দূষণের বৈশ্বিক প্রভাবের বদলে কেবল যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণহানির এই সংখ্যার সঙ্গে কোন সরাসরি যোগসূত্রের উল্লেখ নেই সেখানে।
‘হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি’ ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ু দূষণের ফলে এরইমধ্যে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছেন, সে হার বিশ্বজুড়ে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগের সাম্প্রতিক অনুমান বলছে, ২০২৮ সালের মধ্যে বিভিন্ন ডেটা সেন্টারে মোট শক্তির ব্যবহার দ্বিগুণ বা তিনগুণ হবে।
হার্ভার্ড ও ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাট লস এঞ্জেলস (ইউসিএলএ)-এর গবেষকদের মতে, গত বছর বিভিন্ন ডেটা সেন্টার কম করে হলেও ১০ কোটি ৬০ লাখ মেট্রিক টন কার্বন নির্গমন করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মোট বাণিজ্যিক এয়ারলাইন শিল্পের সঙ্গে তুলনীয়।
কেবল মেটার ‘লামা-৩.১’ নামের লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ তৈরির ফলে যে বায়ুদূষণ হচ্ছে, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমের লস অ্যাঞ্জেলেস ও পূর্বের নিউ ইয়র্ক শহরের মধ্যে গাড়িতে করে দশ হাজারেরও বেশি রাউন্ড ট্রিপ দেওয়ার সমান।
সম্প্রতি লুইজিয়ানায় একটি নতুন কেন্দ্র তৈরি করতে চাইছে মেটা। তবে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের অনুরোধে সাড়া দেয়নি টেক জায়ান্টটি।
গবেষকরা বলেছেন, বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানিকে তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারের কারণে বায়ু দূষণ নিয়ে রিপোর্ট করা উচিৎ। পাশাপাশি বিভিন্ন ডেটা সেন্টার থেকে বায়ু দূষণের ফলে ক্ষতি হতে পারে এমন বিভিন্ন সম্প্রদায়কে ক্ষতিপূরণও দিতে হবে।
পলিটিকোর ইঅ্যান্ড ই নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেটা সেন্টার নির্মাণে গতি আনতে নির্বাহী পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না তা বিবেচনা করছে হোয়াইট হাউস। তবে এ প্রতিবেদনের সূত্রের বিবৃতিকে ‘ভুল’ বলে বর্ণনা করেছে হোয়াইট হাউস।
এদিকে, বাইডেন প্রশাসনকে সেই সম্ভাব্য পদক্ষেপটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। এআইয়ের পরিবেশগত বিভিন্ন প্রভাব কমিয়ে আনতে আইন রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।