Published : 29 Jun 2025, 06:27 PM
প্রথমবারের মতো নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ একটি এক্সোপ্ল্যানেট বা সৌরজগতের বাইরের গ্রহের সরাসরি ছবি তুলেছে, যা টেলিস্কোপটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এক্সোপ্ল্যানেট সাধারণত খুব কম আলো ছড়ায়। ফলে এ ধরনের গ্রহ পরোক্ষ পদ্ধতিতে আবিষ্কার করেন গবেষকরা। যেমন– কোনো গ্রহ এর মূল তারার সামনে দিয়ে গেলে কেমন ছায়া পড়ে তার ওপর নির্ভর করে গবেষকরা গ্রহ আবিষ্কার করেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।
তবে ওয়েব টেলিস্কোপকে এসব পরোক্ষ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়নি। সরাসরি ‘টিডব্লিউএ ৭বি’ নামের একটি গ্রহের ছবি তুলেছে টেলিস্কোপটি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ গ্রহের ভর শনি গ্রহের মতো ও এটি পৃথিবী থেকে প্রায় একশ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
এ গ্রহটি এর তারা বা সূর্যের মতো নক্ষত্র থেকে পৃথিবীর তুলনায় অনেক দূরে অবস্থান করছে। ফলে তারাকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণন সম্পূর্ণ করতে কয়েকশ বছর সময় নেয় গ্রহটি।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, এর গ্রহ ব্যবস্থাটি কেবল ৬০ লাখ বছর পুরানো। ফলে টেলিস্কোপের তোলা ছবিতে গ্রহটি বিকাশের একেবারে শুরুর দিকের একটা ঝলক উঠে এসেছে। যেন গ্রহ তৈরির শুরুর জীবন্ত এক ছবি এটি। অন্যদিকে, আমাদের সূর্য প্রায় চারশ ৬০ কোটি বছর পুরানো অর্থাৎ মধ্যবয়সী অবস্থায় রয়েছে।
ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা গার্ডিয়ানের মতে, ‘টিডব্লিউএ ৭বি’ গ্রহটি এ পর্যন্ত টেলিস্কোপ দিয়ে সরাসরি দেখতে পাওয়া সবচেয়ে ছোট আকারের এক্সোপ্ল্যানেট, যেটি আগের সরাসরি দেখা কোনও এক্সোপ্ল্যানেটের ১০ ভাগের এক ভাগ। এত ছোট আকারের গ্রহকে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা সম্ভব নয়। কারণ মূল তারার আলো এত উজ্জ্বল হয় যে, সেটার আড়ালে গ্রহটি লুকিয়ে যায়। ফলে এ পর্যবেক্ষণটি বিজ্ঞানীদের জন্য বড় এক অর্জন।
A never-before-seen planet! 🪐
This is Webb’s first discovery of a planet using direct imaging. With a mass similar to Saturn, it’s also the lightest exoplanet yet seen using this technique! https://t.co/ptWcXlFfmW pic.twitter.com/XTGwIqgH8n
— NASA Webb Telescope (@NASAWebb) June 25, 2025
বিশেষ ধরনের এক টেলিস্কোপিক যন্ত্র তৈরি করে এ সমস্যার সমাধান করেছেন গবেষণা দলটির নেতৃত্বে থাকা ড. অ্যান-মেরি লাগরঁজ। এজন্য এমন এক সংযুক্তি ব্যবহার করেছেন তারা, যা সূর্যগ্রহণের মতো প্রভাব তৈরি করেছে। ফলে তারার অতিরিক্ত আলো অনেকটা কমিয়ে ফেলতে সক্ষম হন গবেষকরা। যাতে তারার আশেপাশের বস্তু অর্থাৎ ‘টিডব্লিউএ ৭বি’ গ্রহটি সহজেই দেখা মেলে।
এ পদ্ধতির মাধ্যমে গ্রহটিকে শনাক্ত করেছেন গবেষণা দলটি, যা উজ্জ্বল আলোর এক উৎস হিসেবে ধরা পড়েছে টেলিস্কোপে এবং গ্রহটির আশপাশে সরু এক ধূলিকণার বলয়ও রয়েছে।
ড. লাগরঁজ ও তার দলটি বলছেন, এ ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে অর্থাৎ যেটিকে তারা গ্রহ ভাবছেন সেটি আসলে পেছনে থাকা কোনও ছায়াপথ হওয়ার ‘খুব কম সম্ভাবনা’ রয়েছে। তবে তাদের মতে, যতটুকু প্রমাণ মিলেছে তা ‘খুব জোরালোভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে’ এটি আসলে নতুন আবিষ্কৃত একটি গ্রহই।
প্রথমবারের মতো কোনো এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কৃত হয় ১৯৯২ সালে। তারপর থেকে প্রায় ৬ হাজাটিরও বেশি এক্সোপ্ল্যানেট ধরা পড়েছে। তবে এসব গ্রহের মধ্যে অধিকাংশরই সরাসরি ছবি তোলা হয়নি, বরং পরোক্ষ পদ্ধতিতে শনাক্ত করা হয়েছে এদের।
এনগ্যাজেট লিখেছে, আমাদের প্রিয় বন্ধু জেমস ওয়েবের সাম্প্রতিকতম চমকপ্রদ আবিষ্কারের আরেকটি উদাহরণ এই গ্রহ। সম্প্রতি ‘আইনস্টাইন রিং’ নামের মহাজাগতিক এক ঘটনার ছবি তুলেছে টেলিস্কোপটি। এ ঘটনা এমন সময় ঘটে যখন একটি ছায়াপথের আলো অন্য আরেকটি ছায়াপথের ভারী মহাকর্ষের আশপাশ দিয়ে বেঁকে যায়। এখন পর্যন্ত দেখা সবচেয়ে দূরের ছায়াপথ গত বছর আবিষ্কার করেছিল জেমস ওয়েব।