Published : 24 Jun 2025, 06:34 PM
‘হেইট স্পিচ’ নীতিমালা নিয়ে ওভারসাইট বোর্ডের আপত্তির বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করল মেটা। কোম্পানিটি এক আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এ বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ওভারসাইট বোর্ড মেটার জানুয়ারি মাসে করা নীতিমালাকে ‘তাড়াহুড়ো করে করা’ বলে সমালোচনা এবং পুনরায় লেখা ওই কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডে ‘ট্রান্সজেন্ডারিজম’ শব্দটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।
ডনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন আগেই জানুয়ারিতে মার্ক জাকারবার্গের ঘোষণা করা এ নীতিমালা এলজিবিটিকিউ ব্যক্তিদের মানসিকভাবে অসুস্থ বলার সুযোগ দেয়।
সাম্প্রতিক নীতিমালায় রয়েছে, ‘জেন্ডার পরিচয় বা যৌন পছন্দের ভিত্তিতে মানসিক অসুস্থতা বা অস্বাভাবিকতার অভিযোগ আমরা অনুমোদন করি। কারণ ট্রান্সজেন্ডার ও হোমোসেক্সুয়্যালিটিকে ঘিরে রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় আলোচনা রয়েছে। ‘উইয়ার্ড’ শব্দের মত সাধারণ শব্দ যা মানুষ প্রায়ই মজা করে বলে।’
ট্রান্সজেন্ডার নারীকে প্রকাশ্যে হয়রানির দুটি ভিডিও না সরানোর এক সিদ্ধান্তে ওভারসাইট বোর্ড মেটার পক্ষ নিলেও তাদের নীতি থেকে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ শব্দটি সরিয়ে ফেলার সুপারিশ জানায়।
বোর্ড বলছে, ‘বৈধতা নিশ্চিত করার জন্য মেটাকে অবশ্যই তাদের নীতিমালা নিরপেক্ষভাবে তৈরি করতে হবে।’
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে, এই শব্দটি বৈষম্য ও মানবাধিকার হরণের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত। হিউম্যান রাইটস ক্যাম্পেইন বলছে, ‘শব্দটি “সামাজিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে অবৈধ” এবং প্রায়ই ট্রান্সবিরোধী কর্মীদের মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের অবমূল্যায়ন করতে ব্যবহৃত হয়।’
একইভাবে জিএলএএডি বলছে, ‘কারও ট্রান্সজেন্ডার পরিচয়কে যদি ‘ধারণা’ বা ‘মতবাদ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, তাহলে সেটি একটি মৌলিক পরিচয়কে এমন একটি মতামতে রূপ দেয়, যা নিয়ে বিতর্ক করা যায় আর এর ফলে ট্রান্সজেন্ডার, নন-বাইনারি ও জেন্ডার নন-কনফর্মিং ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অমানবিক আচরণ, বৈষম্য এবং বাস্তব জীবনের সহিংসতাকে ন্যায্যতা দেওয়া হয়।’
আনুষ্ঠানিক ওই প্রতিক্রিয়ায় মেটা কর্মকর্তারা বলেছেন তারা এখনও তাদের নীতি থেকে শব্দটি সরানোর ‘সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন’ করছেন।
কোম্পানিটি তাদের ‘শব্দচয়ন হালনাগাদ করার উপায়’ বিবেচনা করার কথা উল্লেখ করেছে, তবে সাথে এও যোগ করেছে যে ‘সবার কাছে পরিষ্কার ও স্বচ্ছভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য কখনও কখনও এমন ভাষা ব্যবহার করতে হতে পারে যা কিছু মানুষের কাছে আক্রমণাত্মক মনে হতে পারে।’
এ বিষয়ে ওভারসাইট বোর্ডের দেওয়া আরও তিনটি সুপারিশ মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মেটা। তাদের সুপারিশগুলো হলো- নীতিমালা পরিবর্তনের ফলে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়, বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্করা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তা যাচাই করা, ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে করণীয় নির্ধারণ, এগুলোর অগ্রগতি নিয়ে বোর্ড ও ব্যবহারকারীদের নিয়মিত জানানো।
বোর্ড আরও সুপারিশ করেছিল, মেটা যেন ব্যবহারকারীদের এমন কাউকে মনোনয়নের সুযোগ দেয় যারা তাদের পক্ষ থেকে অনলাইন বুলিয়িং ও হয়রানির অভিযোগ জানাতে পারবেন। পাশাপাশি, এসব অভিযোগ জানানোর সময় যেন ভুল কম হয় তাই প্ল্যাটফর্মের ব্যবস্থায় উন্নয়ন আনার কথাও বলা হয়েছিল।
মেটা বলেছে, তারা এ পরামর্শগুলোর ‘সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন’ করছে।
মেটার প্রতিক্রিয়াটি স্বাধীন ওভারসাইট বোর্ডের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। জাকারবার্গ বলেছিলেন, ওভারসাইট বোর্ড গঠন করা হয়েছে যেন বড় ও নীতিগত সিদ্ধান্ত তাদের একার না নিতে হয়।
এর আগে ডনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট সাময়িক স্থগিত করা অথবা তারকা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জন্য আলাদা নীতিমালা তৈরির মত বড় সিদ্ধান্তে বোর্ডের সিদ্ধান্ত চেয়েছিল মেটা। তবে ‘হেইট স্পিচ প্রোটেকশন’ কমিয়ে আনা ও ‘থার্ড পার্টি ফ্যাক্টচেকিং’ বাতিলের সিদ্ধান্ত বোর্ডের জন্য পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত ছিল।
মেটা বরাবরই বোর্ডের সুপারিশ উপেক্ষা করার স্বাধীনতা রেখেছে তবে কিছু বিতর্কিত নীতিমালায় তাদের প্রভাব মেনে নেয়। তবে সম্ভবত এই ধারা বদলাতে শুরু করছে।
জাকারবার্গের ‘হেইট স্পিচ প্রোটেকশন’ কমিয়ে আনা ও ‘থার্ড পার্টি ফ্যাক্টচেকিং’ বাতিলের সিদ্ধান্ত বোর্ডকে অবাক করে দেয়। এসব পরিবর্তন নিয়ে বোর্ড যে সমালোচনা করছে এ নিয়ে মেটা সম্ভবত খুব একটা আগ্রহী নয়।