Published : 05 Nov 2024, 03:50 PM
ডেঙ্গু, হলুদ জ্বর ও জিকার মতো মশাবাহিত রোগের বিস্তার ঠেকাতে চমকপ্রদ এক উপায় খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেটা হল, পুরুষ মশার শ্রবণশক্তি বন্ধ করে দেওয়া। এর ফলে তারা যৌনসঙ্গীর ডাকে সাড়া দিতে পারবে না, ফলে তাদের বংশবিস্তারও কমে আসবে।
বাতাসে উড়ন্ত অবস্থাতেই মশার যৌনসম্পর্ক ঘটে। এর আগে পুরুষ মশা নিজের শ্রবণশক্তির ওপর নির্ভর করে স্ত্রী মশার পিছু নেয়। আর পুরুষ মশা স্ত্রী মশাদের ডানা ঝাপ্টানোর শব্দ থেকে আকৃষ্ট হয়।
গবেষকরা একটি পরীক্ষা করেছেন, যেখানে তারা পুরুষ মশাদের শব্দ শোনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছেন। এর ফলে, তারা নারী মশাদের সঙ্গে কোনো ধরনের শারীরিক সম্পর্কে জড়ায়নি, এমনকি তিন দিন একই খাঁচায় থাকার পরও।
মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রোগ ছড়ায় স্ত্রী মশা। ফলে তাদের বংশবিস্তার বন্ধ করা গেলে সেটি সামগ্রিকভাবে মশার সংখ্যা কমাতেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, আরভাইন’-এর গবেষণা দলটি ‘এইডিস এইইজিপটি’ প্রজাতির মশা নিয়ে গবেষণা করেছে, যেটির ভাইরাস প্রতি বছর প্রায় চার কোটি মানুষের মধ্যে ছড়ায়।
গবেষকরা এ মশার বাতাসে ভাসমান অবস্থায় যৌনাভ্যাস ঘনিষ্ঠভাবে লক্ষ্য করেছেন, যার স্থায়িত্ব কয়েক সেকেন্ড থেকে প্রায় এক মিনিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর কীভাবে জেনেটিক পরিবর্তন এনে এ প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটানো যায়, সে বিষয়টিও তারা শনাক্ত করেছেন।
এজন্য তারা ‘টিআরপিভিএ’ নামের একটি প্রোটিনের দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছেন, যা মশার শ্রবণ সক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।
এইসব পরিবর্তিত মশার মধ্যে সাধারণত শব্দ শনাক্তকরণ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নিউরন কাজ করা বন্ধ করে দেয়, যার ফলে স্ত্রী মশার ওড়ার শব্দ বা ডানা ঝাপ্টানোর বিপরীতে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখায় না। বধির কানে এইসব শব্দ গিয়ে পৌঁছায় না।
অন্যদিকে, বন্য (নন-মিউট্যান্ট) পুরুষ মশা দ্রুত ও একাধিকবার সঙ্গম করেছে, এমনকি খাঁচায় থাকা প্রায় সকল স্ত্রী মশাকেই নিষিক্ত করেছে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, স্যান্টা বারবারা’র গবেষকরা বলেছেন, এই জিন প্রক্রিয়ায় সাফল্যের হার শতভাগ কারণ এতে বধির মশাদের বংশবিস্তারের ঝুঁকি পুরোপুরি ঠেকানো গেছে। আর সম্প্রতি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘পিনাস’-এ তাদের গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে।
জার্মানির ‘ইউনিভার্সিটি অফ ওল্ডেনবার্গ’-এর অধ্যাপক ড. জর্জ অ্যালবার্ট মশার বংশবিস্তার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তিনি বলছেন, শ্রবণশক্তির সক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটানো মশা নিয়ন্ত্রণ করার সম্ভাবনাময় এক উপায় হতে পারে। কিন্তু এটি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
“এ গবেষণায় মশা নিয়ে সরাসরি আণবিক পর্যায়ে প্রথমবার পরীক্ষা হলো। এর মানে হচ্ছে, শ্রবণশক্তি আসলে মশার প্রজননের জন্য কেবল যে গুরুত্বপূর্ণ, তা-ই নয়, বরং অপরিহার্য।”
“শোনার সক্ষমতা না থাকলে, পুরুষ মশাদের স্ত্রী মশার পিছু নেওয়ার প্রবণতাও হয়ত বিলুপ্ত হয়ে যায়।”