Published : 14 Dec 2023, 05:04 PM
গবেষকরা এমন এক ‘বিশেষ’ টুপি উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ভাবনাকে ডিকোড করে লেখায় রূপান্তর ঘটানো সম্ভব।
এ প্রযুক্তির উদ্ভাবক অস্ট্রেলিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনি’র গবেষণা দল। তাদের দাবি, এর মাধ্যমে অসুস্থতা বা আঘাতের কারণে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলা ব্যক্তিরা ভাব প্রকাশের সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া, এর মাধ্যমে মেশিনের সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগেরও একটি উপায় তৈরি হয়েছে।
এই টুপির পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য নির্দেশনা ছিল, তারা যেন নিঃশব্দে বিভিন্ন অনুচ্ছেদ পড়েন। একই সময় তাদের মস্তিষ্কের গতিবিধি রেকর্ড হয়েছে ‘ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাম (ইইজি)’ নামের যন্ত্রে।
পরবর্তীতে, তাদের ভাবনাকে ডিকোড করে লিখিত বক্তব্যে রূপান্তর করা হয় ‘ডিওয়েভ’ নামের এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থায়, যেখানে নির্ভুলতার মাত্রা ছিল ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের মাঝামাঝি।
“র ইইজি’ তরঙ্গকে সরাসরি ভাষায় রূপান্তরের ক্ষেত্রে অগ্রগামী প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে গবেষণাটি, যা থেকে এ খাতে বড় অগ্রগতির ইঙ্গিতও মিলছে।” --বলেন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনি’র অধ্যাপক সিটি লিন।
“মস্তিষ্ক থেকে পাঠ্য অনুবাদ প্রক্রিয়ায় এনকোডিং কৌশল ব্যবহারের প্রথম ঘটনা এটি, যা ‘নিউরাল ডিকোডিং’-এর নতুন পদ্ধতি হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।”
লিন আরও যোগ করেন, এর মধ্যে ‘লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল’ সম্পৃক্ত করলে তা ‘নিউরোসায়েন্স ও এআই প্রযুক্তিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার’ খুলে দেবে।
ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভাবনা থেকে টেক্সট রূপান্তরের অন্যান্য ‘ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস’ চালানোর ক্ষেত্রে হয় এমআরআই স্ক্যানিং অথবা মানুষের নাক বা মাথার খুলির মধ্য দিয়ে ইলেক্ট্রোকোড স্থাপনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় যেতে হয়।
এদিকে, ইলন মাস্কের স্টার্টআপ কোম্পানি ‘নিউরালিংক’ চিপ বসানোর জন্য ব্যবহার করে সার্জিকাল রোবট। তার দাবি, একদিন এর পরিধানকারীরা উন্নত যুক্তি ও দৃষ্টিভঙ্গির মতো ‘বাড়তি সক্ষমতা’ও পেতে পারেন।
নিউরালিংক এ প্রযুক্তিতে প্রথম মানব পরীক্ষার নিয়োগ শুরু করেছিল বছরের শুরুতে, মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘এফডিএ’র অনুমোদন পাওয়ার পর।
এর আগে বানরের ওপর চিপ পরীক্ষা করায় প্রাণী অধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল কোম্পানিটি। পাশাপাশি, সে সময় নিউরালিংকের বিরুদ্ধে পরীক্ষিত প্রাণীর ওপর ‘অসহনীয় নির্যাতন’ চালানোর অভিযোগ তোলে ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ‘ফিজিশিয়ানস কমিটি ফর রেস্পন্সিবল মেডিসিন (পিসিআরএম)’।
তবে, এমন অভিযোগ নাকচ করে আসছে নিউরালিংক ও মাস্ক উভয়ই।
ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ ধরনের আগ্রাসী পদ্ধতি ব্যবহার করা অন্যান্য ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেইস সিস্টেমে সাম্প্রতিক এ প্রযুক্তির চেয়ে নির্ভুলতার হার অনেক বেশি। তবে, নতুন উদ্ভাবিত টুপিটির নির্ভুলতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে ৯০ শতাংশের কাছাকাছি স্তর পর্যন্ত।
“এমন চ্যালেঞ্জ থাকার পরও, আমাদের মডেল অর্থপূর্ণ ফলাফল তৈরি করতে, বিভিন্ন কিওয়ার্ড সাজাতে এমনকি বাক্যও গঠনও করতে সক্ষম।” --বলেন গবেষণাটি নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানী ইয়িকুন ডুয়ান।
১২ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স শহরে আয়োজিত ‘নিউরআইপিএস’ সম্মেলনে দেখানো হয়েছে গবেষণাটি।