Published : 21 Aug 2023, 06:11 PM
৪৭ বছর পর রাশিয়ার পরিচালিত প্রথম চন্দ্রাভিযানের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শক হিসেবে কাজ করা এক নেতৃস্থানীয় পদার্থবিদ ও জোতির্বিদকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বহুল প্রতীক্ষিত ছিল লুনা ২৫ মিশন। মিশনটি ব্যর্থ হওয়ার পরপরই ‘শারীরিক স্বাস্থ্যের’ অবনতি ঘটে ৯০ বছর বয়সী বিজ্ঞানী মিখাইল মারভের।
“এটা খুবই দুঃখজনক যে চাঁদের পৃষ্ঠে যন্ত্রগুলো অবতরণ করানো সম্ভব হয়নি।” --লুনা ২৫ মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর বলেন।
রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমসের দেওয়া তথ্যানুসারে, শনিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটা ৫৭ মিনিটে তারা মহাকাশযানটির সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেন। এর আগে চাঁদের কক্ষপথে ঢোকার সময় সমস্যার মুখে পড়ে নভোযানটি। আর এটি অবতরণ করার কথা ছিল সোমবার।
“নভোযানটি অচেনা এক কক্ষপথে প্রবেশ করার পর চন্দ্রপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ে।” --এক বিবৃতিতে বলেছে রসকসমস। সংস্থাটি আরও বলেছে, লুনা ২৫ ধ্বংস হওয়ার কারণ তদন্তে একটি বিশেষ আন্তঃবিভাগীয় কমিশন গঠন করা হয়েছে।
এই মিশনের মাধ্যমে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণের চলমান প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার আশা করেছিল মস্কো।
মস্কোভিত্তিক সংবাদপত্র ‘মস্কোভস্কি কমসোমোলেটস’কে মারভ বলেন, তিনি আশা করেছিলেন যে মহাকাশযানটি ধ্বংস হওয়ার কারণ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি এটি কঠোরভাবে পরীক্ষা করা হবে।
“আমাদের চন্দ্র কর্মসূচির পুনরুজ্জীবন দেখার ক্ষেত্রে এটাই সম্ভবত আমার শেষ সুযোগ ছিল।” – বলেছেন মারভ।
“চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশের সময় এর আলগরিদমে ত্রুটি দেখা যায়।” --তার উদ্ধৃতি তুলে ধরেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ডেইলি মেইল।
“এটা অবশ্যই পাওয়া যাবে।”
“যেসব বিশেষজ্ঞ কমিশনের কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের কাছে এটা তেমন বড় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হবে না। আমি মনে করি, অদূর ভবিষ্যতে এর জবাব পাওয়া যাবে।”
নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে তিনি ডেইলি মেইলকে বলেন, তাকে এখন ‘পর্যবেক্ষণে’ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, মিশনের ব্যর্থতা নিয়ে অসন্তুষ্টির কথাও জানান তিনি।
“আমি কেন ভয় পাব না? এটা আমার জীবনের ব্যাপার। সবমিলিয়ে এটা খুবই জটিক এক বিষয়।”
ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রতিবেদনে বলেছে, মিশনটি ব্যর্থ হওয়ায় মহাকাশ খাতে রাশিয়ার ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। তবে, ১৯৫৭ সালে ‘স্পুটনিক ১’-এর মাধ্যমে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিক্রমণ করা প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কৃতিত্ব অর্জন করে মস্কো। আর ১৯৬১ সালে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণের কৃতিত্ব অর্জন করেন সোভিয়েত কসমোনট ইউরি গ্যাগারিন।
এই ব্যর্থতা এমন সময় এল, যেখানে কয়েক দশক ধরে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে রাশিয়ার দুই ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় যুদ্ধের (ইউক্রেইন) মতো বিষয়াদি।
চাঁদে অভিযান চালানো জটিল বিষয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েতদের অনেক প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। ১৯৭৬ সালের ‘লুনা ২৪’ মিশনের পর থেকে চাঁদে কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি মস্কো। আর সে সময় ক্রেমলিনের নেতৃত্বে ছিলেন লিওনিদ ব্রেজনেভ।
এবারের অভিযানে ভারতের সঙ্গে টক্কর দিচ্ছিল রাশিয়া, যাদের ‘চন্দ্রযান ৩’ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে পারে এ সপ্তাহে। আর এর মাধ্যমে চন্দ্রাভিযান পরিকল্পনায় তুলনামূলক এগিয়ে থাকা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও প্রতিযোগিতার লক্ষ্যস্থির করেছিল দেশটি।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলছে, রাশিয়ার কর্মকর্তারা আশা করেছেন, এই মিশনের মাধ্যমে রাশিয়া দেখাতে চেয়েছে যে ইউক্রেইন যুদ্ধ বা সোভিয়েত পরবর্তী যুগেও তারা বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার যোগ্যতা রাখে।